নামাজের ফজিলত ও আহকাম
২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম
নামাজ ইসলামের শেআর বা নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি প্রধান নিদর্শন। একজন ব্যক্তির ইসলামগ্রহণ ও ঈমান আনয়নের পর মৌলিক দায়িত্ব হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা। নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয়। ঈমান আনয়নের পর ইসলামে নামাজ কায়েমের স্থান সর্বোচ্চ। এ ইবাদত মুমিনের মিরাজস্বরূপ। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক নামাজের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা, ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাতসমূহ, নামাজের ওয়াক্তসমূহ,নিষিদ্ধ সময়সমূহ ও নামাজ ভঙ্গের কারণসমূহ । ‘নামাজ’ শব্দটি ফার্সি । একে আরবিতে ‘সালাত’ বলা হয়। এর অর্থ: চাওয়া, প্রার্থনা করা,দোআ করা, দরুদ শরীফ পাঠ করা, রহমত বর্ষণ করা, তাসবিহ পাঠ করা ইত্যাদি। পরিভাষায়, কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, সানা, তাসবিহ, তাকবির, দরুদ শরীফ পাঠ, জিকির করা, রুকু-সিজদা করা, কিয়াম করা, তাশাহহুদ পাঠ করা প্রভৃতি ইবাদতের সমন্বয়ে বিশেষ ইবাদত হচ্ছে ‘নামাজ’ বা ‘সালাত’।
নামাজ কায়েমের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদের বিরাশি জায়গায় বিভিন্নভাবে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (বাকারা : ৪৩)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত আদায় কর । আর তোমরা উত্তম সম্পদের মধ্যে যা কিছু অগ্রে প্রেরণ করবে নিজেদের জন্য, তা তোমরা আল্লাহর নিকট পাবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ তার দ্রষ্টা। (বাকারা : ১১০)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। আর নিশ্চয় ইহা আল্লাহভীরু ব্যতীত সকলের জন্য কঠিন। (বাকারা : ৪৫)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। (বাকারা : ১৫৩)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, (হে নবী), রাতের কিছু সময়ে ও দিনের কিছু সময় নামাজ কায়েম করুন। (হুদ : ১১৪)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, (হে নবী , আপনি) নামাজ কায়েম করুন সূর্যোদয়ের সময় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত করুন। নিশ্চয় ফজরের সময়ের কোরআন তেলাওয়াত সাক্ষী হবে। (বনী ইসরাইল : ৭৮)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আর (স্মরণ করুন) যখন আমি এই মর্মে বনী ইসরাইল থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করবে না,এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং মানুষকে ভালো কথা বলবে ও নামাজ কায়েম করবে। (বাকারা : ৮২)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত : একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ও নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও রাসুল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, হজ্ব মৌসুমে হজ্ব পালন করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা। (বুখারি ও মুসলিম)।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির সগিরা গুনাহ এমনভাবে মাফ করে দেওয়া হয়, যেভাবে কোন কিছুকে বারবার ধৌত করলে সেটার সমস্ত ময়লা দূরীভূত হয়ে যায়। নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সাহাবিদের বললেন, কোন ব্যক্তির বাড়ির সামনে দিয়ে যদি পাঁচটি নদী প্রবাহিত হয় আর সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে ? সাহাবিগণ বললেন : না, কোন ময়লাই থাকতে পারে না। তখন নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তদ্রুপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির আমলনামায় কোনো গুনাহ থাকতে পারে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কোনো মুমিনের আমলনামার সগিরা গুনাহগুলো মুছে দেয়। নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান মাস থেকে আরেক রমজান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সংগঠিত সকল গুনাহ মোচনকারী, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)। নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করল সে কুফরী করল। নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় থাকাবস্থায়ও নামাজ কায়েমের প্রতি তাগিদ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন : নামাজ! নামাজ!! আর তোমাদের অধীনস্থগণ। এভাবে কোরআন ও হাদীসের বহু জায়গায় নামাজের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলা হয়েছে নসিহত করা হয়েছে এবং নামাজ ত্যাগকারীদের ব্যাপারে ধমক এসেছে,যার মাধ্যমে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে নামাজের অবস্থান সহজেই অনুধাবন করা যায়।
আসুন তাহলে জেনে নিই নামাজের ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাতসমূহ, ওয়াক্তসমূহ, নিষিদ্ধ সময়সমূহ, মাকরূহ কাজসমূহ, নিষিদ্ধ স্থানসমূহ ও নামাজ ভঙ্গের কারণসমূহ। নামাজের ফরজসমূহ : নামাজের ভিতরে ও বাহিরে মোট ১৩ টি ফরজ কাজ রয়েছে এ কাজগুলোকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন : ১. আহকাম ও ২. আরকানসমূহ। নামাজের আহকামসমূহ : নামাজের আহকাম ৭টি। যথা:১. শরীরকে পবিত্র করা ২. কাপড় পাক। ৩. নামাজের স্থান পাকসাফ হওয়া। ৪.সতর ঢেকে রাখতে হবে। ৫.কেবলামুখী হয়ে নামাজ কায়েম করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুতরাং আপনি (হে নবি) মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরান। আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তার (মসজিদুল হারামের) দিকেই তোমাদের মুখ ফিরাও। (বাকারা : ১৪৪)। ৬. ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ কায়েম করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় মুমিনদের উপর সময়মতো নামাজ কায়েম করা ফরজ। (নিসা : ১০৩)। ৭. নামাজের নিয়ত করা। নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভর করে। (বুখারি)।
নামাজের আরকান : এগুলো মোট ৬টি। যথা: ১. তাকবিরে তাহরিমা দেওয়া। ২. দাঁড়িয়ে নামাজ কায়েম করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আল্লাহর জন্য বিনীতভাবে দাঁড়াও। (বাকারা : ২৩৮)। ৩. কেরাত পড়া। আল্লাহ বলেন, সুতরাং তোমরা কোরআন থেকে যে অংশটি সহজ লাগে তা পড়। (মুযযাম্মিল : ২০)। তিনি আরো বলেন, (হে নবি) কিতাব থেকে যা আপনার প্রতি অহি করা হয়েছে তা তেলাওয়াত করুন এবং নামাজ কায়েম করুন। (আনকাবুত : ৪৫)। ৪. রুকু করা। ৫. দুই সিজদা করা। ৬. আখেরি বৈঠক করা। নামাজের ওয়াজিবসমূহ : নামাজের ওয়াজিব কাজসমূহ ১৪ টি।
যথা: ১. প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়া। ২. সুরা ফাতিহার সাথে অন্য সুরা মিলানো। ৩. রুকু-সিজদায় দেরি করা। ৪.রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেরি করা। ৫. দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে দেরি করা। ৬. মধ্যবর্তী (দরমিয়ানী) বৈঠক। ৭. উভয় বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা। ৮.ফরজ ও ওয়াজিবগুলোর তারতিব তথা ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা। ৯.ফরজ-ওয়াজিবসমূহ নিজ নিজ স্থানে আদায় করা। ১০. বিতর নামাজে দোআয়ে কুনূত পড়া। ১১.দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। ১২.দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে তিন তাকবির বলার পর রুকুতে যাওয়ার সময় ভিন্ন ভাবে তাকবির বলা। ১৩.ইমামের জন্য দিনের ফরজ, সুন্নাত ও নফল নামাজে কেরাত আস্তে পড়া এবং ফজর,মাগরিব, এশা, জুমা,রমজান মাসের বিতর ও ঈদের নামাজে কেরাত জোরে পড়া। ১৪.সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
নামাজের সুন্নাতে মুআক্কাদা সমূহ : নামাজের সুন্নাতে মুআক্কাদা ১২ টি। যথা : ১. দুই হাত উঠানো। ২. দুই হাত বাঁধা। ৩. সানা পড়া। ৪. আউজুবিল্লাহ পড়া। ৫. বিসমিল্লাহ পড়া। ৬ . আলহামদুর পর আমিন বলা। ৭. প্রত্যেক উঠাবসায় আল্লাহু আকবার বলা। ৮. রুকুর তাসবিহ বলা। ৯. রুকু হইতে উঠিবার সময় সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ্, রাব্বানালাকাল হামদু বলা। ১০. সেজদার তাসবিহ বলা। ১১ . দরূদ শরীফ পড়া। ১২. দোআয়ে মাসুরা পড়া। নামাজের ওয়াক্তসমূহ : নামাজের ওয়াক্ত পাঁচটি। যথা : ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা।
নামাজ ভঙ্গের কারণসমূহ : নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি। যথা: ১. নামাজে অশুদ্ধ পড়া। ২. নামাজের ভিতর কথা বলা। ৩. কোন লোককে সালাম দেয়া। ৪. সালামের উত্তর দেয়া। ৫. উহঃ - আহঃ শব্দ করা। ৬. বিনা ওজরে কাশি দেয়া। ৭. আমলে কাশির করা। ৮. বিপদে কি বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। ৯. তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় সতর খুলে থাকা। ১০. মুক্তাদি ব্যতীত অপর ব্যক্তির লুকমা নেওয়া। ১১. সুসংবাদ ও দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া। ১২. নাপাক জায়গায় সিজদা করা। ১৩. কেবলার দিক হতে সিনা ঘুরে যাওয়া। ১৪. নামাজে কুরআন শরীফ দেখে পড়া। ১৫. নামাজে শব্দ করে হাসা। ১৬. নামাজে দুনিয়াবী কোন কিছুর প্রার্থনা করা। ১৭. হাঁচির উত্তর দেওয়া। ১৮. নামাজে খাওয়া ও পান করা। ১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো।
নামাজের নিষিদ্ধ সময় : নামাজের নিষিদ্ধ সময় তিনটি। যথা : ১.সূর্যোদয়ের সময়, ২.সূর্যাস্তের সময়, ৩. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়। নামাজের মাকরূহ কাজসমূহ : ১.নামাজে যে সমস্ত কার্যাবলী করা সুন্নত সেগুলো ত্যাগ করা। ২.মুখ ঘুরিয়ে বা আড় চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখা, ঘড়ি বা অন্য কিছু দেখা। ৩.আকাশের দিকে তাকানো। ৪. চোখ বুজা। ৫.নামাজির মনোযোগ ও একাগ্রতা বিনষ্টকারী জিনিস সামনে রেখে নামাজ কায়েম করা। এছাড়া আরো কিছু মাকরূহ কাজ রয়েছে যেগুলো আমাদের এড়িয়ে চলা অতি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ আলোচনার উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়