মাতৃত্বকালীন সময়ে গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা
২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম

একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা - ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যতœ প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা। এই গর্ভকালীন যতেœর লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা । এককথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার , সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেয়া। আর তাই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
মিষ্টি মুধুর শব্দ ‘মা’ ডাক শোনার পরিপূর্ণতা আসে মাতৃত্ব লাভের মাধ্যমে। মাতৃত্ব অর্জনই নারীকে জীবনের পরিপূর্ণতায় পৌঁছে দেয়। এর জন্য প্রয়োজন মাতৃত্বকালীন সময়ে নারীর যথাযথ আদর-যতœ ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি লক্ষ্য রাখা। এ মাতৃত্ব অর্জনের পথে থাকা গর্ভবর্তী নারীকে নিজের স্বাস্থ্য সচেতনায় ইসলামি বিধি-নিষেধ এবং চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ মেনে চলাও বাধ্যতামূলক। তবেই নিশ্চিত হবে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ শিশুর জন্মদান প্রক্রিয়া। মাতৃত্বকালীন সময়ে গর্ভবর্তী নারীর প্রতি অবহেলা চরম অন্যায় ও গোনাহের কাজ। কেননা সন্তানসম্ভবা নারীর আদর-যতœ ও স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অবহেলা করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু ব্যয় করে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়। ’ একজন মানুষের পৃথিবীতে আসার সূচনা থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সুন্দর-সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেন গর্ভধারিণী মা। সন্তানকে জন্মদান যেমন একজন নারীর পূর্ণতা এনে দেয়, তেমনি একজন মানুষকে সুযোগ করে দেয় এই সুন্দর ধরণীতে আসার জন্য। কিন্তু সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে আমরা মায়েদের কতটা নিরাপদে রাখতে পেরেছি সেটা ভাবার বিষয়। তার চেয়েও বড় কথা হলো জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবহার।
আমাদের সমাজের অনেকেই মায়ের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রূঢ় ও খারাপ আচরণ করে থাকেন। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। এটা ইসলামবিরোধী কাজ। মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারকারী সন্তানের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির ঘোষণা। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিন ধরনের লোকের ওপর আল্লাহতায়ালা বেহেশতকে হারাম করেছেন। ১. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি; ২. মা-বাবার অবাধ্য সন্তান; ৩. দাইয়ুসথ যে নিজ পরিবারের নির্লজ্জ ও বেহায়াপনাকে সমর্থন করে।’ কোনো সন্তানই মাতৃত্বের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না; এটা সম্ভবও নয়। এক ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার মাকে কোলে করে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেছি, এতে কি আমি আমার মায়ের প্রতি কিছুটা অনুগ্রহ করিনি?’ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) না-সূচক উত্তর দিয়েছিলেন। মায়ের সন্তানবাৎসল্য ও তার কষ্টের জন্যই আল্লাহতায়ালা মায়ের মর্যাদা ও তার প্রতি দায়িত্ব অধিক করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি তো মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে।’ (সুরা আহকাফ : ১৪)। নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নারীর প্রতি দায়িত্ব পালননিরাপদ মাতৃত্ব নারীর অধিকার। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া এবং দুই বছর দুধ পান করানো পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময় নারীর প্রতি যতœ নেওয়া পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
এ সময় নারীকে দিতে সুষম খাদ্য। দিতে হবে উন্নত চিকিৎসা। দিতে হবে যথাযথ বিশ্রামের সুযোগ। আবার সন্তান ভূমিষ্টের সময় যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ এবং সন্তান ভূমিষ্টের পর দুই বছর দুধ পান করানোর সময়টিতেও দিতে হবে চাহিদা মতো পুষ্টির যোগান। এসব চাহিদা পূরণ করতে কুরআন-সুন্নায় যথাযথ দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাহলো- ১. প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্যের যোগানমাতৃত্বের প্রয়োজনে প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য প্রদানে যতœবান হওয়া। এদিকে পরিবারের প্রধান বা স্বামীর দৃষ্টি রাখা অবশ্য কর্তব্য। সন্তান গর্ভে এলে গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর এবং পরিমাণে বেশি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। কেননা, তার খাবারে একটি নয়, দুটি প্রাণ বাঁচে। মহান আল্লাহ হালাল রিজিক খাওয়া ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন- ‘হে মু’মিনগণ! আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর।’ (সুরা বাকারা : ১৭২)।
২. চিকিৎসার নির্দেশমাতৃত্বকালীন সময়ে নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সবার আগে তার স্বামীর সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য গর্ভধারণকারী নারীর প্রতি সবার দায়িত্ব রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের দিতে সুচিকিৎসা। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ এসেছে অর্থ ‘তোমরা চিকিৎসা করাও, কারণ আল্লাহ তাআলা যে রোগই দিয়েছেন তার প্রতিষেধকও দিয়েছেন। শুধু একটি রোগ ব্যতিত আর তা হচ্ছে, বার্ধক্য।’ (আবু দাউদ)। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রোগ এবং দাওয়া (ওষুধ) দু’টিই দিয়েছেন এবং প্রতিটি রোগেরই ওষুধ রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা কর না।’ (আবু দাউদ)‘প্রত্যেক রোগেরই ওষুধ রয়েছে। যখন কোনো রোগের ওষুধ প্রয়োগ হয়, আল্লাহ তাআলার অনুমতিতে তা ভালো হয়ে যায়।’ (মুসলিম)। সুতরাং মাতৃত্বকালীন সময় থেকে শুরু করে সন্তান ভূমিষ্ট ও তাদের দুগ্ধপানকালীন সময়েও নারীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের চিকিৎসার প্রতি যতœবান হওয়া স্বামী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের একান্ত দায়িত্ব।
৩. স্ত্রীর ভরণ-পোষণের মূল দায়িত্ব স্বামীর। হাদিসে পাকে স্ত্রীর যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা এসেছে হাদিসে। আর স্ত্রী যদি সন্তানসম্ভবা হয় তবে স্বামীর প্রতি এ দায়িত্ব পালন দ্বিগুণ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-হজরত মুয়াবিয়অ কুরাইশি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- অর্থ ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এলাম। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) বিষয়ে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, তোমরা (স্বামীরা) যা খাবে, তাদের (নারীদের) তাই খেতে দেবে। তাদের তাই পরাবে যা তোমরা পরবে। আর তাদের প্রহার করবে না এবং তাদের কটূ-কাটব্য করবে না।’ (আবু দাউদ)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইইউর ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, কঠিন হবে আশ্রয় পাওয়া

কর্তাব্যক্তির ইশারায় চলে উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি-দূদক

ওয়াকফ আইন’ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের কবরস্থান ভাঙচুর, ৮৫টি কবর ভাঙচুর

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১৩ বছর আজ, সিলেটে বিএনপির নানা কর্মসূচি

বাংলাদেশকে ৭২৪ কোটি টাকার সহায়তা দেবে জার্মানি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৫ ফিলিস্তিনি

১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা বৈঠকে বসছেন আজ

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত ও আহত ৬

আবারও নিষেধাজ্ঞা পেলেন জহির

সখিপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

আইপিএলে সন্দিপের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ইংলিশ পেসার

আমিরাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের জমকালো অনুষ্ঠান

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪