যাদেরকে ভালোবাসতে বলেছে ইসলাম
২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম
প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। ভালোবাসা মানেই অবৈধ নয়। কিছু কিছু ভালোবাসা ইসলামে কাম্য। সেটির প্রতি ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। ইসলাম বৈধ সম্পর্ক ও বৈধ সম্পর্কের গন্ডিতে থেকে ভালোবাসার অনুমতি দেয়। নিজের যাপিত জীবনে ক্ষতি হয় এমন ভালোবাসা আর ভক্তি-শ্রদ্ধার প্রতি ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে । ঘোষণা করেছে তাকে হারাম বলে । অপরদিকে বৈধ ভালোবাসার প্রতি স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই উৎসাহিত করেছেন । কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর কুদরতের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা রুম, আয়াত : ২১)।
আমরা কুরআন ও হাদিসের প্রতি গভীর ভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখতে পাই এমন কিছু ভালোবাসার কথা বর্ণিত হয়েছে , যেসব মানুষকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে। ইহ-পরকালীন সম্মানে তাকে ভূষিত করে। পার্থিব জীবনেও দেয় শান্তি-স্বস্তি।
এমন কিছু ভালোবাসার বিবরণ নি¤েœ তুলে ধরা হলো- এক. আল্লাহ ও রাসুলের জন্য ভালোবাসা : জীবনে সর্বপ্রথম এবং সবার আগে যাদেরকে ভালোবাসতে হবে , তারা হল আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাদেরকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশী ভালোবাসতে হবে। এ ভালোবাসা হল ঈমানের ভালোবাসা। আনুগত্যের ভালোবাসা । মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)।
দুই. মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা : মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদেরকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে বলেছেন। আল্লাহর ইবাদতের পরেই মা বাবার সাথে ভালো আচরণ ও ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা বলা হয়েছে । ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে , তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)।
তিন . স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা : প্রতিটি মানুষেরই পৃথিবীতে অন্তত একজন একান্ত ভালোবাসার মানুষের প্রয়োজন হয়, যে একান্ত তারই হবে। সুখে-দুঃখে তার সঙ্গ দেবে। যার কাছে তার যৌন কামনা বাসনা পূরণ করবে । যার চোখে তাকিয়ে হতাশা ও কষ্ট ভুলবে। তার উপস্থিতি তাকে প্রশান্তি দেবে। মানুষের এই চাহিদা মেটাতে মহান আল্লাহ এক পবিত্র সম্পর্কের সৃষ্টি করেছেন, তা হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সূরা রুম, আয়াত : ২১)।
চার . সন্তান-সন্তুতির প্রতি ভালোবাসা : সন্তানের প্রতি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা মানুষের সহজাত এক বিষয়। ভালোবাসার শক্ত এ ভিতের ওপরই টিকে আছে মানবজাতি । দাঁড়িয়ে আছে মানবসভ্যতা। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রেখো! নিশ্চয় সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি (এর মোহ ও মমতা) তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। (সূরা আনফাল , আয়াত : ২৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ’ (সূরা কাহাফ , আয়াত : ৪৬)। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছিলেন তার সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। তিনি তার সন্তানদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস রা. বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তুলনায় পরিবার-পরিজনের প্রতি অধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী আর কাউকে দেখিনি। ’ (আল আদাবুল মুফরাদ , হাদিস : ৩৭৬)। এ ছাড়া সকল ধরনের বৈধ ভালোসার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে । তাই সকল ধরনের বৈধ ভালোবাসর প্রতি গুরুত্ব দেয়া আমাদের একান্ত কাম্য ।
আজ আমাদের সমাজে যুবক-যুবতীদের মাঝে বিয়েপূর্ব যে অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে , ইসলামের দৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম কখনো এ ধরনের ভালোবাসা সমর্থন করে না। এটি মূলত যৌন তাড়নাপ্রসূত একটি বিষয়। বিবাহ বহির্ভূত ছেলে মেয়ের কোন সম্পর্ককে ইসলাম সমর্থন করে না। বর্তমানে ভালোবাসা দিবস নামে আমাদের সমাজে যেই অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নগ্নতার উন্মুক্ত প্রদর্শন চলে তা একজন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন, সভ্য রুচিশীল মানুষের জন্য পালন করা শোভা পায় না। এটি একটি বিজাতীয় উৎসব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই উৎসবে আমাদের সমাজের যুবক-যুবতীরা সব বুঝে শুনেও তা পালন করে। অথচ এখানে অংশগ্রহণ করা একজন মুসলমানের জন্য কখনোই জায়েয নেই। তা হারাম। কারণ, নবীজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির আচার-আচরণে, কৃষ্টিকালচারে সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪০৩১)। মনে রাখতে হবে, এসব অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অবাধ ঘোরাফেরা ও পার্কসহ সব জায়গায় অশ্লীলতা প্রদর্শনের জন্যই পৃথিবীতে বালা-মুসিবত আসে। মানুষ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয় । আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষতিকর প্রেম-ভালোবাসা সহ সকল ধরনের মসিবত থেকে মুক্ত রাখুন । আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি
ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান
আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল
ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ
ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ
শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯
লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ
যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়