ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১

পণ্যবয়কট: ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ

Daily Inqilab নূরুল হক

২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

 

সম্প্রতি কোকাকোলার একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বয়কটের তীব্র ঝড় উঠেছে। বিশেষ-সাধারণ নির্বিশেষে মুসলিমদের বিশাল এক জনগোষ্ঠী এ বয়কটকার্যে অংশ নিয়েছে। বয়কটের নেপথ্য কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের মাজলুম মুসলিম জনতার বিরুদ্ধে জায়নবাদী ইসরাঈলের পক্ষে তাদের অবস্থান গ্রহণ ও সহায়তা প্রদান। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে নানা উপলক্ষ্যে মুসলিম সমাজে কোনো কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছিল। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, পণ্যবয়কটের বিষয়টি কি শরীয়তসম্মত? ইসলামের ইতিহাসে পণ্যবয়কট করার কোন দৃষ্টান্ত আদৌ রয়েছে কি-না? সঠিক বিষয় না জানার ফলে অনেক মুসলিমই বয়কটের এ মিছিলে গুরুত্বের সাথে অংশ নেয় না। বরং একে হালকা চোখে দেখে। কার্যকরী কোন পদক্ষেপ বলে মনে করে না। আজকের এ লেখায় তাদের সে প্রশ্নের জবাব তুলে ধরা হয়েছে।

ইসলামে পণ্যবয়কট : পণ্যবয়কট নতুন বা অভূতপূর্ব কোন বিষয় নয়। বরং এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। আপনি জেনে অবাক হবেন, স্বয়ং রাসূলে কারীম (সা.) এর যুগেই আমরা এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। আল্লাহর রসূল (সা.) এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ছুমামা ইবনে উসাল রাদিআল্লাহু আনহু। যিনি ইয়ামামা অঞ্চলের বনু হানিফ গোত্রের সর্দার ছিলেন। রাসূলের সাহাবীদের হাতে বন্দী হয়ে তিনি মদিনায় আসলেন। তিনদিন বন্দী অবস্থায় থাকার পর তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষমাসূলভ আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলের অনুমতি নিয়ে তিনি উমরাহ পালন করতে মক্কা গমন করলেন। যাওয়ার পর মক্কায় তার পূর্বপরিচিত কাফেররা ইসলাম গ্রহণের কারণে তাকে লজ্জা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো, ‘সুমামা! তুমি তো বে-দীন হয়ে গেলা! জবাবে অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়ে তিনি বললেন, ‘না-তো! আমি বে-দীন হইনি; বরং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।’ অতঃপর দৃপ্ত কণ্ঠে মক্কার কাফেরদের সামনে ঘোষণা দিলেন, ‘আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে একটি গমের দানাও তোমাদের কাছে পৌঁছবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূল অনুমতি দেন।’ (সহীহ মুসলম : ৪৪৩৭)।

ইয়ামামা অঞ্চল ছিল মক্কার লোকদের খাদ্য আমদানীর একমাত্র জায়গা। ফলে হুঁশিয়ারি অনুযায়ী নিজ অঞ্চলে গিয়ে ছুমামা রাদিআল্লাহু আনহু যখন তাদের কাছে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিলেন, তখন খাদ্যের অভাবে মক্কাবাসী ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়ে পতিত হল। দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। মক্কার কাফেরদের আত্মার সব পানি বিগলিত হল। অগত্যা কোন উপায় না দেখে তারা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পত্র লিখল। তাকে আতœীয়তার দোহাই দিয়ে ছুমামাকে খাদ্য সরবরাহের জন্য পত্র লিখতে অনুরোধ করল। অতঃপর তাদের প্রতি সদয় হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুমামাকে তার বয়কট প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে তার কাছে পত্র লিখেন। উপরোক্ত ঘটনা থেকে পণ্যবয়কটের বৈধতা প্রমাণিত হয়।

বিশিষ্ট গবেষক আলেম শায়েখ হুসামুদ্দীন আফফানা বলেন-‘সুমামা রাদিআল্লাহু আনহু যা করেছেন তা এক প্রকার অর্থনৈতিক বয়কট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ পদক্ষেপে বাধা দেননি। তার উপর কোনো আপত্তি করেননি। এ বয়কট অব্যাহত ছিল- রাসূলুল্লাহ (সা.) তা উঠিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখা পর্যন্ত।’ (ফাতাওয়া ইয়াসআলুনাক ১১/২৪)। এ ঘটনা থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, পণ্যবয়কটের কার্যকারিতা ও প্রভাব অনেক শক্তিশালী। এর দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুদেরকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলা সম্ভব। অতএব বিশ্বের সকল বা অধিকাংশ মুসলিম এক হয়ে যদি শত্রুর বিরুদ্ধে পণ্যবয়কটে অংশ নেয়, তবে এর মাধ্যমে তাদের অর্থনীতির ভীত কাঁপিয়ে তোলা, তাদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। তবে বয়কটের এ কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে বয়কটকে একটানা অনেকদিন চালু রাখতে হবে; অন্যথায় সাময়িক উত্তেজনা ও কার্যত পণ্য বর্জন না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বয়কট, বয়কট’ রব তোলা তেমন স্থায়ী কোনো ফল বয়ে আনবে না।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি

ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান

ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান

আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত

আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল

ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক

ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ

ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু

কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু

হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ

হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ

শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯

শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯

লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা

ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা

ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়

যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়