ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

আত্মহত্যা মুক্তি নয়

Daily Inqilab মুহাম্মদ আনাস বিল্লাহ

০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া কোনো সমাধান নয়; বরং সমস্যা তৈরির নতুন পথ।আত্মহত্যা বর্তমান সমাজে সংঘটিত জঘন্যতম পাপ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এ কারণেই ইসলামে আত্মহত্যা করা কবিরা গোনাহ। নিজেই নিজের জীবনকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার নাম আত্মহত্যা। আত্মহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ঝঁরপরফব।আত্মহত্যা হচ্ছে এমন মৃত্যু; যা বান্দা কর্তৃক আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু উপেক্ষা করে নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেওয়া, যা ইসলামে মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ। আর পরকালে এর পরিণামও ভয়াবহ।ইসলাম কখনও আত্মহত্যার মতো কোনো অপরাধকেই সমর্থন করে না।বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যথাযথভাবে ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতি চালু না থাকায় অসংখ্য ব্যক্তি ইসলামের এই সত্য বিধানকে অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করতে পারে না। ফলে দিন দিন আত্মহত্যার মাধ্যমে সমাজে মেধা শূন্যের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্কুল বা কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

আত্মহত্যার এ প্রবণতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় উঠতি বয়সী তরুণ ও তরুণীদের মাঝে। এদের অনেকেই যেসব কারণে এ অপরাধে জড়িত হয়; তা হলোঃ- পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা ভালো ফলাফল অর্জনে ব্যর্থতা হওয়া।প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতা বা প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি থেকে অনেকেই নিজেদের প্রতি আত্মঘাতী হয়ে আত্মহত্যা করছে। অথচ ইসলামি শরিয়তে একজন তরুণ ও তরুণীর মাঝে বিবাহপূর্বক প্রেম কিংবা ভালোবাসা স্থাপন সম্পূর্ণরূপে হারাম তথা নিষিদ্ধ।

মানুষের জীবনের মালিক আল্লাহ; তিনি মানুষকে মৃত্যু দান করেন। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন : ‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই কাছে ফিরে আসবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত নং ৫৭)। বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম কারণগুলো হলো- মানসিক হতাশা ও বিষণ্ণতা, দাম্পত্যজীবনে কলহ কিংবা যেকোনো সম্পর্কে অনৈক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা ও পারিপার্শ্বিক অসহযোগিতা। এমতাবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ ও করণীয় স্থীর করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো অন্যায় ও পাপের কাজে মানুষ পা বাড়ায়। আত্মহত্যা করার প্রতি আল্লাহ তায়ালা নিষেধ আরোপ করেছেন। পবিত্র কুরআন মাজীদে তা উল্লেখ রয়েছে : তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা : আয়াত নং ২৯)। এছাড়াও অন্য আরেকটি আয়াতে উল্লেখ রয়েছে : ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত নং ১৯৬)।

জীবনে হতাশা, দুঃখ ও নৈরাশ্য আসবে। তবে তখন ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং দুঃসময়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। ইসতিগফার করতে হবে। নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাইতে হবে। সুখ-দুঃখের মালিক তিনিই। তার কাছে সুখের দোয়া করতে হবে। দুঃখের পর একদিন সুখ আসবেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই দুঃখের সঙ্গে সুখ আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ : আয়াত নং ৬)। আত্মহত্যাকারী শুধু নিজের ক্ষতিই করে না বরং নিজের পরিবার, নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। তাই আত্মহত্যার শাস্তি ভয়াবহ। ইসলামি অনুশাসনে যারা বিশ্বাসী এবং সে আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করে, তারা আত্মহত্যা করে কখনো নিজেদের পরকালীন জীবনে জাহান্নাম নিশ্চিত করবে না।

আত্মহত্যার পরিণতি খুবই ভয়ংকর। হাদিসের গ্রন্থে প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে।’ (বুখারি)। অন্য আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে; চিরকাল সে জাহান্নামের ভেতরে এভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।

আরো একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আত্মহত্যাকারীর জানাজাও পড়েননি। সুতরাং কুরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হতাশা কিংবা যে কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে নিমিষেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া যাবে না। বরং এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য্য ও নিজের মেধা খাঁটিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরং আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ভুলে নিজের জীবনকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়া মারাত্মক ভুল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আত্মহত্যার মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে বাঁচতে জীবন পথে চলতে গিয়ে বহু বিপদের সম্মুখীন হতে হবে এবং অর্জিত হবে নানান অভিজ্ঞতা। শত বিপদের মাঝেও সর্বদা হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করতে হবে। নিজের মাঝে পরিবর্তনের চেষ্টা ও জীবনকে নতুন করে সাজানোর জন্য সচেষ্ট হতে হবে।আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে সন্তানদের মুক্ত রাখতে প্রতিটি বাবা ও মায়ের উচিত নিজ সন্তানের প্রতি আরো যতœবান হওয়া। এই জীবন যুদ্ধে যিনি প্রতিটি মুহূর্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবেলা করবে, দিন শেষে তিনিই সফলতার মুখ দেখতে পাবেন। বাংলা ভাষার সেই প্রবাদ বাক্যই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে- ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। আর এ সবর বা ধৈর্য্যশীলতাই মহান আল্লাহর কাছে একান্ত পছন্দনীয়।

 


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা