ধর্ষণ জঘন্যতম অপরাধ
১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম
(গত দিনের পর) ইসলাম নারীর ব্যাপারে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার সংশোধন করে, নারীকে সম্মান ও সহানুভূতির স্থানে অধিষ্ঠিত করে। পুরুষের মনে আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের জবাবদিহির কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণের ক্ষতি ও ভয়াবহতা তুলে ধরে পুরুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে। পুরুষের অন্তরে একথা বদ্ধমূল করে- নারীর সাথে আচরণ হতে হবে তার সম্মান ও মর্যাদা বিবেচনায় রেখেই। তার প্রতি মানসিকতা থাকবে সম্মান ও সহানুভূতির। আর এর অনুকূল সকল ব্যবস্থা-ই ইসলাম গ্রহণ করেছে।
যিনা (ব্যভিচার) একটা চরম অপরাধ। অনেক অপরাধের সমষ্টি। মানবসভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি। নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার চূড়ান্ত রূপ। এতে আত্মিক, মানসিক, শারীরিক, চারিত্রিক, সামাজিক বহু রকমের বিপর্যয় ঘটে। এর কুফল কখনো কখনো গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ইসলাম যিনার কাছে যেতেও নিষেধ করে- তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। (সূরা বনী ইসরাইল (১৭) : ৩২)। যিনা কত নিকৃষ্ট তা বোঝার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট। এখানে ‘যিনা করো না’ এ কথা বলা হয়নি; বরং এর কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, এটা কত জঘন্য অপরাধ।
অথচ সমাজ বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক- যিনায় ছেয়ে গেছে। নানা স্থানে পতিতালয় গড়ে উঠছে। কিন্তু এর কোনো বিরোধিতা নেই। ধর্ষণকে (বলপূর্বক যিনা) অন্যায় মনে করা হলেও যিনাকে (উভয়ের সম্মতির ব্যভিচার দোষের মনে করা হয় না। যদিও কখনো ক্ষতির শিকার হওয়ার পর এরও নাম হয়- ধর্ষণ। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মানববন্ধন হলেও ব্যভিচারের বেলায় কিছুই নেই। বরং একে প্রগতি, স্বাধীনতা ও আধুনিকতা সাব্যস্ত করা হয়। ধর্ষণ কেন নিন্দনীয়? এর কারণ কি শুধু এটা যে, এতে নারীর সন্তুষ্টি বিদ্যমান থাকে না, নাকি এর কারণ এই যে, এতে মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ইত্যাদি বিপর্যয় ঘটে? সর্বোপরি তা সুস্পষ্ট কবীরা গুনাহ। আমরা মনে করি, এগুলোই ধর্ষণ অন্যায় হওয়ার মূল কারণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ বিষয়গুলো যিনা, স্বেচ্ছা ধর্ষণ ও ট্র্যাপে পড়া ধর্ষণে আরো প্রকটভাবে বিদ্যমান। তো একে কেন অন্যায় মনে করা হয় না?
ব্যভিচার কি ধর্ষণকে উসকে দেয় না? চারদিকে যে যিনার প্রতিযোগিতা চলছে, ধর্ষণের পেছনে কি তার মোটেই ভূমিকা নেই? ইসলামে শুধু অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত রূপটাই যিনা নয়। বরং যেসব কাজ যিনার প্ররোচনা দেয় সেগুলোও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তাও যিনা বলে গণ্য। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘চোখের ব্যভিচার হল দেখা। কানের ব্যভিচার শোনা। জিহ্বার ব্যভিচার বলা। হাতের ব্যভিচার ধরা। পায়ের ব্যভিচার হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৫৭)। অর্থাৎ চোখ-কান-হাত-পা-জিহ্বা সবই যিনা করে- যিনার প্ররোচনা দেয়, যা পূর্ণতা পায় লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। সুতরাং এসব অঙ্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষত চোখের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা চাই। যেসব জিনিস দেখা নাজায়েয সেগুলো থেকে দৃষ্টিকে হেফাজত করতে হবে (যেমন বেগানা নারী, পর-পুরুষ, অশ্লীল ছবি ইত্যাদি)। অবৈধ জিনিস দেখা অবৈধ কাজের প্ররোচণা দেয়, মনে কুচিন্তা আনে। পর্নোগ্রাফীতে আসক্তির কারণে বিকৃত যৌনইচ্ছা জন্মাতে পারে, যা ধর্ষণের মানসিকতাকে উসকে দেয়। বস্তুত কু-নজর হচ্ছে অনৈতিক কাজের ‘ভূমিকা’। এজন্য হাদীসে একে ব্যভিচার গণ্য করা হয়েছে। জিহ্বার যিনা দ্বারা উদ্দেশ্য হল মুখে এমন কিছু বলা, যার ফলে অন্তরে যিনার চিন্তা আসে। এজাতীয় জিনিস সেবন করা ও ভক্ষণ করাও এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্যের কথা উল্লেখ করা যায়। মাদকাসক্তি মানবসভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি। মাদকদ্রব্যের নেশার ছোবল অত্যন্ত ভয়াবহ। এতে ব্যক্তি শুধু পরিবার ও সমাজ থেকেই বিচ্ছিন্ন হয় না; তার গোটা জীবন ধ্বংস হয়। মাদক কেবল সমাজ ও জাতির জন্যই ক্ষতিকর নয়; সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেও বিপন্ন করে। মদ্যপান সকল অশ্লীলতার মূল এবং অনেক বড় বড় পাপের পথ উন্মুক্ত করে। এতে মানুষের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য বুদ্ধি-বিবেচনা বিলুপ্ত হয়ে যায়। যার ফলে সে অতি সহজেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা রকম অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।
মদকে কুরআনে শয়তানের ‘গান্দা কর্ম’ আর হাদীসে সকল অশ্লীলতার মূল আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কানের যিনা প্রসঙ্গে গানবাদ্যের কথা আলোচনা করা যায়। গানবাদ্য বহু অন্যায়ের সমষ্টি। এতে অন্তরে কপটতা, ব্যভিচারের প্রেরণা, কুরআনের প্রতি অনীহা সৃষ্টি এবং অন্তর থেকে আখেরাতের চিন্তা নির্মূল হয়। আর বর্তমানের গান তো অশ্লীলতা ও যৌনতার আকর্ষণে ঠাসা, যা মানুষকে অবৈধ সম্পর্কের প্ররোচনা দেয় এবং অনৈতিক কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও বুযুর্গ ইমাম ফুযায়েল ইবনে ইয়ায (রহ.) যথার্থই বলেছেন, ‘গান ব্যভিচারের মন্ত্র।’ অথচ গানের ঐকতানে সমাজ ভেসে যাচ্ছে। গাড়িতে-বাড়িতে, পথে-ঘাটে সবখানে গান, গানের উপদ্রব। সারকথা, ধর্ষণ একটি ভয়াবহ ব্যাধি। এ কেবল যৌন নির্যাতনই নয়; বৃহত্তর সামাজিক অন্যায়ের বহিঃপ্রকাশ। দেশ ও জাতির জন্য কলঙ্ক। অনৈতিকতা ও পাশবিকতার চূড়ান্ত পর্যায়। এ থেকে আমাদের রক্ষা পেতেই হবে। তবে তা যেন শুধু মুখ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং কর্ম ও আচরণেও প্রকাশ পায়। যেসব জিনিস ধর্ষণের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে, একে উসকে দেয় এবং যে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও অবস্থানের সমন্বয়ে মানুষ এর প্রতি প্রলুব্ধ হয়, সেগুলো থেকে প্রত্যেককে নিজ নিজ শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী বেঁচে থাকতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তা বন্ধের জন্য দায়িত্বশীলদের কাছে দাবি জানাতে হবে। সুস্থ ও সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। সর্বোপরি ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে; আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের জবাবদিহির কথা অন্তরে সদা সর্বদা দৃঢ বিশ্বাস রাখতে হবে।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়