দোয়া মুমিনের হাতিয়ার
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
মুমিনের জন্য নিরন্তন সহযোগী ও হাতিয়ার হচ্ছে দোয়া। দোয়ার মাধ্যমে জীবনে সমৃদ্ধি ও সফলতা আসে। বিপদাপদ দূর হয়ে যায়। পার্থিব এ জীবনে এমন কেউ কি আছে যার কোনো সমস্যা নেই? আছে কি কেউ এমন যার কোনো বিপদাপদ নেই? হতাশা ও দূর্দশা নেই? মানুষের জীবনে এসব শব্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি কোনো না কোনো সমস্যা লেগেই থাকে মানুষের জীবনে। এরই মাঝে তার জীবন তরী বাইতে হয়। ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত মানুষের সমস্য গড়াতে থাকে। কেউ ব্যক্তি জীবন নিয়ে চিন্তিত, কেউ পারিবারিক জীবনে অসুখী, আবার কেউ রষ্ট্রীয় জীবনে বিভিন্ন ঝামেলায় জর্জরিত। এসব হরহামেশাই পরিলক্ষিত হয়।
দুনিয়াবি ঝামেলা ছাড়াও আখেরাতের ঝামেলা থেকে মুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। দুনিয়ার সুখ শান্তির সাথে আখেরাতের সুখ শান্তির কথাও চিন্তা করতে হয়। এসব কিছু মূলত দোয়ার মাধ্যমে সম্ভব। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমার কাছে চাও, আমি তোমাদের দেব। দোয়া করলে তা কবুল করব। সমস্যা থাকলে তা সমাধান করে দেব। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউই মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না। সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। পারে না পরকালে সুখ দিতে ও শাস্তি থেকে মুক্ত করতে। মানুষ চাইতে লজ্জাবোধ করে আর আল্লাহ খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। হাদীসে এসেছে, যখন মানষ কিছু চাওয়ার জন্য দু’হাত তোলে, তখন তিনি সে হাত দু’টিকে ব্যর্থ ও খালি ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (সহীহ মুসলিম : ৩২১)। অপর হাদীসে এসেছে, আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দ্বীনের স্তম্ভ ও আসমান যমিনের নূর। (সহীহ মুসলিম : ৪৬৫)।
দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় ও নৈকট্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়। মানুষ মাত্রই ভুল করে, গুনাহ করে। নবীগণ ব্যতীত সাধারণ মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। তাই ছোট কিংবা বড়, কোনো না কোনো গুনাহে মানুষ লিপ্ত হয়। গুনাহ করা অপরাধ তবে গুনাহের পর তা মাফের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া না করা আরো মারাত্মক পর্যায়ের অপরাধ। তাই গুনাহ থাকুক বা না থাকুক, প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে স্মরণাপন্ন হওয়া, প্রার্থনা করা একজন প্রকৃত মুমিনের কাজ। মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন ছাড়াও সবসময় আল্লাহর নিকট দোয়া করা উচিৎ। কেননা দোয়াকে ইবাদত বলা হয়েছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দোয়া ইবাদতের মগজ। (সুনানে তিরমিজি : ৩৩৭১)। দোয়া শক্তিশালী আমল। এমনকি দোয়া তাকদীরকে পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। (সুনানে তিরমিজি : ২১৩৯)। সুতরাং ইবাদত হিসেবেও সর্বদা দোয়া অব্যাহত রাখা উচিৎ। তা না করে উদাসীনতার সহিত জীবন অতিবাহিত করা মোটেও প্রকৃত মুমিনের শান নয়। ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো, এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বিনয় ও ন¤্রতা প্রকাশ করা। আর তা দোয়ার মাধ্যমেই হয়ে ওঠে।
এখন কথা হলো, আল্লাহর কাছে কী চাইবো আমরা? এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। বৈধ সব জিনিষই তাঁর কাছে চাওয়া যায়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন ছোট বড় সবকিছুই তাঁর নিকট চাওয়ার অনুমোদন রয়েছে। ব্যক্তি বিশেষ যার যেটা প্রয়োজন সে তা চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কারো সুস্থতার প্রযোজন,সে রবের কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করবে। কারো চাকরি-বাকরি প্রয়োজন, কারো খাদ্য-পনীয় প্রয়োজন। আবার কেউ পারিবারিক জীবনে অসুখী, সে তার সুখময় জীবনের জন্য দোয়া করবে। কেউ নিঃসন্তান, সে আল্লাহর কাছে নেক সন্তান চাইবে। মোটকথা; ছোট থেকে ছোট কিংবা বড় থেকে বড় সবকিছুই তাঁর নিকট চাওয়ার সুয়োগ আছে। হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য তার রবের কাছ চায়। এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তাও। (সুনানে তিরমিজি : ৬৩০৪)।
নিশ্চিতভাবে কেউই এমন কথা বলার অধিকার রাখে না। দোয়া কবুল হয়; তবে আমরা তা বুঝতে সক্ষম নই। বান্দার কোনো দোয়াই বৃথা যায় না। হয়তো দোয়ার কার্যকারিতা তাৎক্ষণিক প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করা যায় না; তবে পরোক্ষভাবে তা কার্যকর হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট দোয়া করে আর তাতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কিংবা গুনাহের কিছু না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাকে তিনটি বিষয়ের যেকোনো একটি দান করবেন। এক.কাঙ্খিত বস্তুই তাকে দিবেন। দুই. উক্ত দোয়ার উসিলায় কাঙ্খিত বস্তুর সমপরিমাণ কোনো বিপদাপদ তার থেকে দূর করে দিবেন। তিন. এর প্রতিদান পরকালের জন্য প্রস্তুত রাখবেন। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, তাহলে তো আমরা বেশি বেশি দোয়া করব। রাসুল বলেন, আল্লাহর দান আরো বেশি। (সুনানে তিরমিজি : ৩৫৭৩)।
হতে পারে যে দোয়া করেছেন তা আপনার জন্য কল্যাণকর নয় কিংবা এরচেয়ে ভালো কিছু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, বিধায় আপনাকে কাঙ্খিত বস্তু দেয়া হয়নি। এজন্য দোয়া করা ছেড়ে দেয়া যাবে না, বরং প্রতিনিয়ত দোয়া অব্যাহত রাখতে হবে। কিছু হোক না হোক অন্তত ইবাদত হিসেবেও তো সাওয়াব পাওয়া যাবে। আমাদের প্রতিটি প্রতিটি চাওয়া পূরণ হোক। প্রতিটি দোয়া কবুল হোক রবের দরবারে। রহমের বারিধারায় শিক্ত হোক সবার জীবন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়