সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক আঞ্চলিক নেতা এরদোগান
১৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম
মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনারগুলো আমাদের বেয়নেট এবং বিশ্বাস হলো আমাদের সৈন্য। এই প্রচারণায় সফল হন এরদোগান এবং ২০০৩ সালে তিনি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত ২০ বছর ধরে তিনি দেশটির ক্ষমতায় আসীন। যে বালক একদা রাস্তায় লেবুর শরবত আর রুটি বিক্রি করতেন, তিনিই হয়ে উঠলেন আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং যুদ্ধংদেহী এক আঞ্চলিক নেতা। তার উত্থান শুরু হয় প্রায় তিন দশক আগে ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এর পরে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুই দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রজব তাইয়েপ এরদোগান। তার এই ক্ষমতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও লড়বেন তিনি। তুরস্ক যখন বিধ্বংসী ভয়াবহ ভ‚মিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবেলার চেষ্টা করছে, তখনই প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে এই কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের এই ভ‚মিকম্পে তুরস্কে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, গৃহহীন হয়েছে ১৫ লাখের মতো মানুষ। এছাড়াও রয়েছে তুরস্কের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টা থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বেঁচে গেলেও, আসন্ন নির্বাচনে তিনি কতোটা সফল হবেন সেটা নির্ভর করছে তার সরকার কীভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও ভ‚মিকম্পÑ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে তার ওপর। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে আরও ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন এরদোগান। আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর অন্য যেকোনও নেতার চেয়ে তিনিই দেশটিকে সবচেয়ে বেশি বদলে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক বলেন, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকেও এরদোগান ক্রমশ দূরে সরে গেছেন। তিনি বলেন, যখন তিনি দলের নেতৃত্বে আসেন, তার রাজনৈতিক আচরণে মনে হয়েছিল যে তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে চান। কিন্তু যতোই তিনি ক্ষমতার কাছাকাছি গেছেন, ততই তিনি ক্ষমতাকে এককেন্দ্রিক করেছেন। সেটা তিনি সাংবিধানিকভাবে করেছেন। প্রেসিডেন্টের হাতে সব ক্ষমতা দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। বিচার বিভাগ, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছেন। এর পাশাপাশি তিনি তুরস্কের আদর্শিক অবস্থানেও পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। জনসমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি দেশটিকে ইসলামপন্থী ধারায় পরিচালিত করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তুরস্ক তাতেও বাধা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এরদোগানের এই পেশি-সুলভ ক‚টনীতি লক্ষ্য করা গেছে ইউরোপের বাইরেও। মুসলিম মূল্যবোধের পক্ষে সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার কারণেও এরদোগান বহু তুর্কীর কাছে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তার নেতৃত্বে ইসলামপন্থী দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একেপি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণকে তুষ্ট করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। চার সন্তানের পিতা এরদোগান জন্ম-নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করেন। যাদুঘর থেকে আয়া সোফিয়াকে ফের মসজিদে রূপান্তরিত করেন। ক্ষমতায় আসার আগেও এক সমাবেশে জাতীয়তাবাদী একটি কবিতা পড়ার জন্য তার চার মাসের জেল হয়েছিল। এই কবিতার কয়েকটি লাইন ছিল এরকম, মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনারগুলো আমাদের বেয়নেট এবং বিশ্বাস হলো আমাদের সৈন্য। ইসলামপন্থী বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। সুইডেনে কোরান পোড়ানের ঘটনায় নরডিক ওই দেশটিকেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কাশ্মির প্রসঙ্গ তুলে ভারতের সমালোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান বহির্বিশ্বের সামনেও তার সামরিক পেশিশক্তি প্রদর্শন করেছেন। লিবিয়া ও সিরিয়া যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ নিয়েছেন। ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়া স্বত্বেও তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের জন্য তিনি মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছেন। শস্য রফতানির বিষয়ে যুদ্ধরত দুটো দেশের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতেও সফল হয়েছেন। বিবিসি।
বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন