অন্ধকারে তলিয়ে গেছে আল-শিফা হাসপাতাল
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
গাজায় মানবিক বিরতির আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ষ আগ্রাসন থামাবে না ইসরাইল ষ স্থল অভিযানে ৫১ ইসরাইলি সেনা নিহত
গাজা শহরে গতরাতে সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা কঠিন তবে কয়েক দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এরপর এলাকাটি অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, তারা আল শিফা হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে অভিযান চালিয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী আল-শাফা হাসপাতালে অভিযান চালালেও চিকিৎসকরা রোগীদের রেখে হাসপাতাল ছাড়তে অস্বীকার করেছেন। ইসরাইলি সৈন্যরা হাসপাতালে প্রবেশ করে জরুরি ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে তল্লাশি চালায় এবং নবজাতকদের অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করতে হয়। রোগী, চিকিৎসাকর্মী এবং গৃহহীন মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নিয়ে ছিল যেখান থেকে ২০০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে বর্বর ইসরাইলি সৈন্যরা। ইসরাইলি রেডিওর মতে, হাসপাতালে কোনো জিম্মি পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতাল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করেছে হিংস্র এই বাহিনী। চিকিৎসক ও হামাস ইসরাইলি দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল-শাফা হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মীদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আল-শাফা হাসপাতালে হামলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দায়ী করে হামাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভুল অবস্থান ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে হামলা করতে উৎসাহিত করছে।
অভিযানের সময় সেখানে থাকা বিবিসির একজন সংবাদদাতা কমান্ডোদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের খবর নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর সৈন্যরা প্রতিটি কক্ষে গিয়ে রোগী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তরুণদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির জন্য পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা পর সৈন্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহারের খবর পায় বিবিসি। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় আইডিএফ অস্ত্রশস্ত্রের একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করে যে, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে তারা এগুলো উদ্ধার করেছে। ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ইসরাইল বারংবার হামাসকে ওই হাসপাতালের নিচে টানেল নেটওয়ার্কে একটি কমান্ড সেন্টার পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। এ দাবিটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যও সমর্থন করছে। তবে হামাস বরাবর এটি অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে বৃষ্টি ও ঠা-া আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকা লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বারের মতো ইসরাইল গাজা শহরে ২৫ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করার জন্য রাফাহ অতিক্রম করার অনুমতি দিয়েছে। এর বাইরে গত সাত অক্টোবরে ইসরাইলের হামলার সময় যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের কয়েকজনকে মুক্তির জন্য হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাতার মধ্যস্থতা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ‘অধিকতর মানবিক যুদ্ধবিরতি’র জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরোধী দলের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়েছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে।
এদিকে, আল শিফা হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মারওয়ান আবু সাদা বিবিসি আরবি বিভাগের ইথার সালাবিকে ফোনে জানিয়েছেন যে, ৩৯টি নবজাতকের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যেই মারা গেছে। এখন যারা বেঁচে আছে তাদের আসলে কোন অভিভাবক বেঁচে নেই কিংবা যুদ্ধের এই তা-বের মধ্যে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইসরাইলের গোলাবর্ষণের পর দুটি শিশুকে একেবারেই একা পাওয়া গিয়েছিলো। আর চার শিশুর জন্ম হয়েছিলো তাদের মায়েদের মৃত্যুর পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। তেল সংকটের কারণে শিশুগুলোকে ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে হৃদরোগ বিভাগের নবজাতক ইউনিটে রাখা হয়েছে বলে জানান মারওয়ান। সেখানে একটি বেডে ৮/১০টি শিশুকে রাখা হয়েছে এবং তাদের উষ্ণতার জন্য ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। বাবার নাম জানা গেলে শিশুর হাতে ট্যাগে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে উল্লেখ করা হচ্ছে। পানির স্বল্পতার কারণে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মারওয়ানের আশংকা অপরিচ্ছন্ন অক্সিজেন টিউবের কারণে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ থেকে পচন তৈরি হতে পারে।
অবিলম্বে মানবিক বিরতির আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অধিকতর মানবিক করিডোর এবং সব জিম্মির মুক্তি আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। পরিষদের বারটি সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিলো। জাতিসংঘে ইসরাইলের দূত গিলাড এরদান বলেছেন, এই প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্থহীন। তিনি বলেন ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত রাখবে এবং তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সাত অক্টোবরে ইসরাইলে হামলার বিষয়টি না থাকার তীব্র সমালোচনা করেন। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ শাখার ডিরেক্টর লুইস শারব্যুনো নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। ‘এটি ইসরাইল, হামাস ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে শক্ত বার্তা দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে,’ বলছিলেন তিনি।
আগ্রাসন থামাবে না ইসরাইল : জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত লড়াই থামিয়ে গাজায় আরো মানবিক প্যাসেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইসরাইল তা মানতে নারাজ। মানবিক প্রয়োজনে দীর্ঘ যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘের বুধবার নেয়া সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে ইসরাইল। দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিওর হাইয়াত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ২৩৯ জন পণবন্দিকে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত ইসরাইল লড়াই থামাবে না। আপাতত গাজায় নতুন কোনো করিডোর বা প্যাসেজ তৈরির প্রশ্ন ওঠে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বস্তুত, জাতিসংঘের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, গাজা থেকে আহত, অসুস্থ মানুষ-সহ বেসামরিক ব্যক্তিদের বার করার জন্য আরো নতুন প্যাসেজ তৈরি করা হোক। এখন কেবলমাত্র মিশরের সীমান্তে একটি করিডোর ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু মূলত বিদেশিদের বার করার জন্যই ওই রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসরাইল জানিয়েছে, এমন কোনো করিডোর তৈরি করার কোনো প্রশ্নই নেই এখন। প্রথমে পণবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, তারপরেই লড়াই বন্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, ইসরাইলের দাবি, জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে হামাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গাজায় ইসরাইলের আধিপত্য মেনে নেয়ার কথাই ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেনকে একটি চিঠি লিখেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, হামাস যাদের পণবন্দি করেছে, তাদের মধ্যে ৩২ বছরের এক নারী বন্দি অবস্থাতেই এক সন্তানের জন্ম দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সারা জানিয়েছেন, বন্দিদের মধ্যে ৩২জন বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। দ্রুত তাদের মুক্তির জন্য জিল বাইডেনকে আবেদন জানাতে বলেছেন সারা। তাদের যৌথ আবেদনের ভিত্তিতে বন্দিদের যাতে মুক্ত করা যায়, সে কথা চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার জাতিসংঘ যে প্রস্তাব পাশ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্য-- যাদের হাতে ভেটো দেয়ার শক্তি আছে, কেউই সেই ভোটে অংশ নেয়নি। মাল্টা এই প্রস্তাব টেবিলে রেখেছিল। বাকি ১২টি দেশ তা সমর্থন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। প্রস্তাবে হামাসের বিষয়েও কোনো কথা বলা হয়নি। ৭ অক্টোবরের ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই।
স্থল অভিযানে ৫১ ইসরাইলি সেনা নিহত : গাজায় স্থল অভিযান পরিচালনাকালে ইসরাইলের আরও এক সেনা নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে আইডিএফ (ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স)। এতে স্থল অভিযানে বাহিনীটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজায় রাতভর লড়াইকালে নতুন করে যে কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন তার নাম শ্লোমো বেন নুন। তার বয়স ২২ বছর। বেন নুন প্যারাট্রুপ ব্রিগেডের ২০২তম ব্যাটালিয়নে কোম্পানির ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। তাছাড়া উত্তর গাজা উপত্যকায় লড়াইয়ে ৭৫তম ব্যাটালিয়ন, ৭তম ব্রিগেড ও ৯২১৫ তম ব্যাটালিয়ন ও ২০৫তম ব্রিগেডে একজন করে সংরক্ষিত সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, যে সব সদস্য আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের পরিবারকেও জানানো হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে।
বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না: পরিবেশ উপদেষ্টা
সদরপুরে জাসাসের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী ও শোভাযাত্রা
বেগমগঞ্জে যুবদল নেতা সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে চরম অচল অবস্থা, সহিংস ঘটনার আশংকা
জকিগঞ্জে জামায়াতের সেক্রেটারিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
মেলবোর্নে স্মিথ-কামিন্সের অনন্য কীর্তি
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
নেত্রকোনায় এ আর খান পাঠান স্মৃতি উন্মুক্ত ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন
এবার তিন অঙ্কে মুর্শিদা
আগুনে পুড়েছে সবচেয়ে বিতর্কিত ফাইলগুলো: রিজভী
সখিপুরে বনবিভাগের বিরুদ্ধে বিএনপি’র বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল
হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ
বিসিএফের কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় ফ্রান্স প্রবাসীদের প্রাণবন্ত মিলনমেলা
পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত পরিচালক সমিতির নির্বাচন
সিলেটে আজহারীর তাফসির মাহফিল আলিয়া মাঠের পরিবর্তে এমসি কলেজ মাঠে
সচিবালয়ে আগুন টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা: মাওলানা মামুনুল হক
শেখ হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
আত্মসমর্পণ করবেন না: মিয়ানমার সেনাদেরকে জান্তা প্রধান
উইলিয়ামসের পর তিন অঙ্কে আরভিন ও বেনেট, জিম্বাবুয়ের রেকর্ড