বাশার যুগের পরবর্তী সিরিয়া ও নতুন চ্যালেঞ্জ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক:

১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ পিএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাশার আল-আসাদের পতন শুধু একজন ব্যক্তির ক্ষমতা হারানো নয়, বরং একটি সাম্প্রদায়িক এবং নাশকতামূলক প্রকল্পের অবসান। এই প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত এবং এর পুনর্গঠন সম্পর্কে ভাবতে হবে।

 

সাদ্দাম হোসেনের পতনের সাথে বাশার আল-আসাদের পতনের তুলনা করা ভুল। ইরাকে একটি দলের শাসনের অবসান ঘটেছিল মাত্র। কিন্তু সিরিয়ায় আসাদ এমন একটি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংস করে এবং দেশকে ষড়যন্ত্রের একটি আস্তানায় পরিণত করেছিল। তার শাসনের সময় সিরিয়াকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের স্বাধীনতাকে দমন করা হয়েছে। বিপ্লবের আগেও সিরিয়ার মানুষকে শোষণ করা হতো। সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করা, ইরাকের সংঘাতে ইন্ধন জোগানো, সন্ত্রাসীদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জাল নথি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, উপসাগরীয় সন্ত্রাসীদের জন্য দামেস্ককে মিটিং ও বিতরণ পয়েন্টে রূপান্তর করা, লেবাননের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, হিজবুল্লাহর সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের প্রকৌশল, লেবাননের সামাজিক কাঠামো ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করাসহ হাজারও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাশার আল-আসাদ।

 

নতুন সিরিয়ার চ্যালেঞ্জ: বাশার আল-আসাদের পতনের পর একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে, যা পুরো অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে ঘিরে সংশয় ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত, আহমেদ আশ-শারা ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই জাতীয় সমালোচনা এখন খুব অপ্রয়োজনীয়। সিরিয়ার পুনর্গঠনে এখন প্রয়োজন একটি গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল পদ্ধতি।

সিরিয়ানদের করণীয় হলো, আলোচনার মাধ্যমে পথ খোঁজা, সংঘাত নয়; বরং আলোচনা ও আইডিয়া বিনিময়ের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য কাজ করা। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া, অতীতের ভুলগুলো বিবেচনায় রেখে নতুন পথ নির্ধারণ করা। স্বৈরাচারী শাসনের অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক থাকা।

 

আরব বিশ্বের ভূমিকা: প্রথমত, সমর্থন ও পরামর্শ দেওয়া, সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলোকে সিরিয়ার এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। নতুন সিরিয়ারকে আদর্শগত হাইজ্যাকিং বা নাশকতা থেকে রক্ষা করা।

 

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা করা, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য কাজ করা, সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করা।

 

বর্তমানে সিরিয়ার নতুন শাসকদের সমালোচনা করা উচিত নয়, কারণ তারা অস্থায়ী। বরং তাদের কার্যক্রম নিরীক্ষা করা, পরামর্শ প্রদান করা ও সহায়তা করা উচিত। মিডিয়ায় গঠনমূলক সমালোচনার চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। তবে তা যেন নতুন সিরিয়াকে দুর্বল না করে।

 

একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। ক্রান্তিকালীন সময়সীমা নির্ধারণ, সংবিধান প্রণয়ন ও আইনি চুক্তি স্থাপন, একটি স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

 

সিরিয়ার পুনর্গঠনে একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। এটি শুধু সিরিয়ার জনগণের জন্য নয়, পুরো আরব বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সতর্কতা, সহযোগিতা ও গঠনমূলক সমালোচনা নতুন সিরিয়াকে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যেতে পারে।


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশাল ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহর উন্মোচন করলো ইরানের আইআরজিসি
প্যাসিফিকা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ইফতারে শরিক অন্য ধর্মাবলম্বীরাও
তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব
নিজ দেশেই অবাঞ্ছিত নেতানিয়াহু
বিষয়ভিত্তিক কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৭ ইরানি বিশ্ববিদ্যালয়
আরও
X

আরও পড়ুন

রাজধানীর বংশালে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৬

রাজধানীর বংশালে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৬

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮০ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮০ ফিলিস্তিনি

ইসরাইলি অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ

ইসরাইলি অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ

গোদাগাড়ীতে ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান করে প্রশাংসায় ভাসছেন ইউএনও

গোদাগাড়ীতে ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান করে প্রশাংসায় ভাসছেন ইউএনও

মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক পরিবারের ৩ জন আহত

মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক পরিবারের ৩ জন আহত

সুন্দরগঞ্জে ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক উৎসব

সুন্দরগঞ্জে ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক উৎসব

নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের শুভেচ্ছা বিনিময়

নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের শুভেচ্ছা বিনিময়

ঈদের দিনেও রক্তাক্ত পাকিস্তান, একাধিক সংঘর্ষে নিহত ৬

ঈদের দিনেও রক্তাক্ত পাকিস্তান, একাধিক সংঘর্ষে নিহত ৬

কেমন ছিল অটোমানদের ঈদ উৎসব?

কেমন ছিল অটোমানদের ঈদ উৎসব?

ইবি ক্যাম্পাসে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

ইবি ক্যাম্পাসে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

হাসপাতালে ঈদ কাটানো রোগীদের পাশে বিএনপি নেতৃবৃন্দ

হাসপাতালে ঈদ কাটানো রোগীদের পাশে বিএনপি নেতৃবৃন্দ

ঈদের ২য় দিনেও চলবে ডিএনসিসির ঈদমেলা

ঈদের ২য় দিনেও চলবে ডিএনসিসির ঈদমেলা

ঈদে ভক্তদের কি বার্তা দিলেন চার খান?

ঈদে ভক্তদের কি বার্তা দিলেন চার খান?

খেলাধূলার কোন বিকল্প নেই : বিএনপি চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা শাহজাহান মিঞা

খেলাধূলার কোন বিকল্প নেই : বিএনপি চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা শাহজাহান মিঞা

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ঈদ আনন্দ র‍্যালি অনুষ্ঠিত

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ঈদ আনন্দ র‍্যালি অনুষ্ঠিত

ঈদের জামাতে আসিফ কেন আলাদা কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন, জানা গেল কারণ

ঈদের জামাতে আসিফ কেন আলাদা কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন, জানা গেল কারণ

ঈদুল ফিতরে ড. ইউনূসকে মোদির বার্তা

ঈদুল ফিতরে ড. ইউনূসকে মোদির বার্তা

কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় হাফেজ ফারুকের ঈদ পরিণত হল বিষাদে!

কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় হাফেজ ফারুকের ঈদ পরিণত হল বিষাদে!

শহীদ তামীম ও শহীদ সিফাতের পরিবারের সাথে জামায়াত আমীরের সাক্ষাৎ

শহীদ তামীম ও শহীদ সিফাতের পরিবারের সাথে জামায়াত আমীরের সাক্ষাৎ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে : সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে : সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী