বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে মাহে রমজানের গুরুত্ব ফজিলত তুলে ধরে বলেছেন, বিগত ১৪০০ বছর থেকেই মক্কা-মদিনায় ২০ রাকাত তারাবি নামাজ প্রচলিত ছিল। ২০১৯ সনে মরণব্যাধী করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধির কারণে বায়তুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে তারাবি নামাজ কমিয়ে ১০ রাকাত করা হয়েছিল। এখন কোনো করোনা নেই। কিন্তু পবিত্র উভয় মসজিদে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ কমিয়ে ১০ রাকাতে কমিয়ে আনা বিদআত। এটা অন্যায়। খতিব রাজকীয় সৌদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বায়তুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবি পুনঃবহালের জোর অনুরোধ জানান।
খতিব বলেন, পবিত্র কোরআন অবতরণের মাস রমজানে গিবত, পরনিন্দা, চোগলখুরি এবং সকল প্রকার নাফরমানি পরিহার করতে হবে। তাহলেই সিয়াম স্বার্থক হবে। সিয়াম কবরের হামলে ঢাল হিসেবে কাজে লাগবে। জাহান্নামের আগুন থেকে সিয়াম ঢালস্বরূপ।
খতিব বলেন, আল্লাহ বলেন, ’হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও তা ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো, তাকওয়া অর্জন করতে পারো। খতিব বলেন, বরকতপূর্ণ এ রমজান মাসে দুটি আমল। একটি রোজা রাখা, আরেকটি রাতে তারাবি পড়া। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে রোজা রাখবে, আল্লাহ তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। রমজান পেলেই সকল মুসলমানের ওপর রোজা রাখা ফরজ। কেউ অসুস্থ হলে বা কেউ সফরে মুসাফির হলে পরে কাজা রোজা রাখবেন।
খতিব বলেন, সংযমের এ মাসে সকল প্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকতে হবে। রমজানে জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সওয়াবের আশায় ঈমানের সাথে রোজা রাখতে হবে। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে রোজা রাখবে আর রাত জেগে তারাবি পড়বে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। খতিব রমজানের হক আদায়ের লক্ষ্যে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করা এবং মোবাইল দেখে সময় অপচয় না করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ি ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কোরআন নাজিলের মাস রমজানুল মোবারক। এ মাসে কুরআন মজীদ একত্রে লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূল কারীম (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে— ‘রমজান মাসই হল সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ।’ -সূরা বাকারা ১৮৫, এ মাসে রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
হাদীস শরীফে এসেছে— ‘রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ -সহীহ মুসলিম; অন্য এক হাদীসে এ মাসের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমজান মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ -সহীহ বুখারী ও মুসলিম। এ মাস রহমতের, ক্ষমার ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির পরওয়ানা লাভ করার এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদীস শরীফে এসেছে— ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ -মুসনাদে আহমদ। তাই এমন মাস পেয়েও যে ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তার জন্য স্বয়ং জিবরাঈল (আ.) বদদোয়া করেছেন এবং নবী করীম (সা.) রাহমাতুল্লিল আলামিন হয়েও আমীন বলে সমর্থন জানিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে— ‘নবী কারীম (সা.) খুৎবার জন্য মিম্বরে উঠে তিন বার আমীন, আমীন, আমীন বললেন। সাহাবিদের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূল! আপনি তো এরূপ করতেন না। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, জিবরাঈল (আ.) আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার নিকট আমার নাম আলোচিত হল, অথচ সে আমার উপর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমীন।’ -আল আদাবুল মুফরাদ। রমজানের করণীয় হলো রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। তারাবি: রমজানের রাতের বিশেষ আমল হল কিয়ামে রমজান তথা বিশ রাকাত। দান করা: দান-সদকা সর্বাবস্থাতেই উৎকৃষ্ট আমল, কিন্তু রমজানে তার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। কুরআন মজীদ তেলাওয়াত: এ মাস কুরআন অবতরণের মাস। নফল ইবাদত: এ মাসে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। এই সুযোগে অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের মধ্যে রোজা এমন একটি ইবাদত যা বাহ্যত কষ্টকর হলেও তার প্রচলন ছিল সর্বকালে।
হযরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকে শেষ নবী (সা.) পর্যন্ত সকল নবীর উম্মতের ওপরই তা ফরজ ছিল। -রূহুল মাআনী; হাদীস শরীফে এসেছে— ‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি ঢাল এবং দুর্গ।’ -মুসনাদে আহমদ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমজানের হক আদায় করার তৌফিক দান করুন এবং নবীজীর অভিসম্পাৎ থেকে রক্ষা করুন। আমিন!