ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিএসএমএমইউতে বিশ্ব জন্মগত ক্রটি দিবসে গবেষণা ফল প্রকাশ

নবজাতকের জন্মগত ত্রুটির হার ৭.০২ শতাংশ পূর্ণাঙ্গরূপে ডাবল শিফটে ওটি কার্যক্রম চালুসহ প্রয়োজনীয় ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে: ভিসি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০০ পিএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবজাতক বিভাগে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে আসা ১১ হাজার ২ শত ৩২ জনের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় শারীরিক ক্রটি নিয়ে জন্মানো শিশুর এই সংখ্যা ৭৮৯টি। এই সংখ্যা গত ৮ বছরে চিকিৎসা নিতে আসা মোট শিশুর ৭ দশমিক ২ শতাংশ। যা উন্নত বিশ্বের জন্মগত ক্রটির হারের চেয়ে বেশী। রোববার (২ এপ্রিল) শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব জন্মগত ক্রটি দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনার ও আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘মেনি বার্থ ডিফেক্টস, ওয়ান ভয়েস’।

বিএসএমএমইউ’র নবজাতক বিভাগের উদ্যোগে নবজাতকের জন্মগত ক্রটির উপর এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় জন্মগত ক্রটির হার নির্ণয়, ত্রুটির কারণ, প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনার উপর আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নবজাতকদের জন্মগ্রত ত্রুটি প্রতিরোধ এবং এর চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন উন্নততর চিকিৎসা সেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে একের পর এক নিত্য নতুন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। জেনেটিক ল্যাবও প্রতিষ্ঠা করা হবে। জন্মগ্রত ত্রুটির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারের বিষয়ে করণীয় কি হতে পারে তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, রোগীদের সুবিধার্থে ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে ডাবল শিফটে ওটি (অস্ত্রপচার বা সার্জারি) কার্যক্রম চালু করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় এ্যানেসথেশিওলজিস্ট নিশ্চিত করা হবে। যাতে করে এ্যানেসথেশিয়া দেয়ার অভাবে ওটি কার্যক্রম সেবা ব্যাহত না হয়।

সেমিনারে জানানো হয়Ñ গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীব্যাপী জন্মগত ক্রটির হার প্রতি ১০০ জনে ৩-৬ জন (৩-৬ শতাংশ)। বিশ্বে প্রতি ৩৩ জন শিশুর মধ্যে ১ জন জন্মগত ক্রটি নিয়ে জন্মায়। সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্মগত ক্রটির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর শুধুমাত্র জন্মগত ক্রটির জন্য জন্মের ২৮ দেিনর মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ শিশু মারা যায়। শিশু মূত্যুর এই প্রভাব সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল (এসডিজি) এর লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে অনেকাংশে বিরুপ প্রভাব ফেলে।

নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সঞ্জয় কুমার দে এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জন্মগত ক্রটির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন বিসিপিএস এর সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ সহিদুল্লা। আলোচনা সভায় ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. নাহরীন আক্তার, শিশু সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডা. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী, লাইন ডাইরেক্টর ডা. সাইদুজ্জামান, ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ডা. নুরুল ইসলাম প্রমুখসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক ও চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। জন্মগত ক্রটি সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. ইসমাত জাহান।

আলোচনা সভায় জন্মগত ক্রটি চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন গর্ভ পূর্ববর্তী এবং গর্ভকালীন সময়ে চেকআপ করা, গর্ভকালীন সময়ে (১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে) আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জন্মগত ক্রটি নির্ধারণ করা, গর্ভকালীন অসংক্রামক ব্যাধি যেমনÑ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, অল্প বয়সে এবং অধিক বয়সে গর্ভনিরোধ, আয়োডিনযুক্ত লবণের মতো খাবারের সাথে ফলিক এসিড মিশানো মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের জন্মগত ক্রটি প্রতিরোধ সম্ভব।

উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও জন্মগত ক্রটি নিয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে। সেটি হলো ন্যাশনাল নিওনেটাল এ্যান্ড পেরিনেটাল ডাটাবেজ (এনএনপিডি) অ্যান্ড নিউবর্ণ বার্থ ডিফেক্ট (এনবিবিডি) সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ অথবা সংক্ষেপে ‘বার্থ ডিফেক্ট সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ২০টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ইনটিস্টটিউটে এই প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এসইএআরও এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহায়তা করে। আর বিএসএমএমইউ এর নবজাতক বিভাগ প্রকল্পটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করে।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভবিষ্যত বিশ্বব্যবস্থার পরীক্ষা স্থল হয়েছে ইউক্রেন: বেলারুশের প্রেসিডেন্ট

ভবিষ্যত বিশ্বব্যবস্থার পরীক্ষা স্থল হয়েছে ইউক্রেন: বেলারুশের প্রেসিডেন্ট

দোয়ারাবাজারে হত্যা মামলার আসামিসহ দুই ইয়াবা কারবারি গ্রেফতার

দোয়ারাবাজারে হত্যা মামলার আসামিসহ দুই ইয়াবা কারবারি গ্রেফতার

বরগুনায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায়

বরগুনায় বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায়

ঝালকাঠিতে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতেস্কার নামাজ আদায়

ঝালকাঠিতে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতেস্কার নামাজ আদায়

রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

ভুল করে পাঁচ মাইল এলাকা হারালো ইউক্রেনীয় সেনা

ভুল করে পাঁচ মাইল এলাকা হারালো ইউক্রেনীয় সেনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা

বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা

শেরপুরে উপজেলা নির্বাচণে অংশ নেয়া ৬ বিএনপির প্রার্থীকে কারণ দর্শও নোটিশ!

শেরপুরে উপজেলা নির্বাচণে অংশ নেয়া ৬ বিএনপির প্রার্থীকে কারণ দর্শও নোটিশ!

রোনালদো নয়, মেসিকেই এগিয়ে রাখলেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

রোনালদো নয়, মেসিকেই এগিয়ে রাখলেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

কালিয়াকৈরে তাপদাহে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে

কালিয়াকৈরে তাপদাহে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে

হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারনেট ছাড়াই পাঠানো যাবে

হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারনেট ছাড়াই পাঠানো যাবে

গাজার ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার বিথী

গাজার ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার বিথী

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিট স্ট্রোকে এসএসসির ফলপ্রত্যাশীর মৃত্যু

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিট স্ট্রোকে এসএসসির ফলপ্রত্যাশীর মৃত্যু

বাংলাদেশেই থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি : শিল্পমন্ত্রী

বাংলাদেশেই থাকবে টাঙ্গাইল শাড়ি : শিল্পমন্ত্রী

কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানেসালাতুল ইস্তিস্কা আদায়

কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানেসালাতুল ইস্তিস্কা আদায়

মতিঝিলে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে দিনমজুরের মৃত্যু

মতিঝিলে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে দিনমজুরের মৃত্যু

পটুয়াখালীতে উপকারি বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়...

পটুয়াখালীতে উপকারি বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়...

নারী কর্মীদের নেকাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল

নারী কর্মীদের নেকাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল

গাজার গণকবর নিয়ে তদন্তের জন্য বিশ্বজুড়ে চাপ বাড়ছে

গাজার গণকবর নিয়ে তদন্তের জন্য বিশ্বজুড়ে চাপ বাড়ছে

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন তেভেস

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন তেভেস