মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে টিআইবির আহ্বান
১৭ জুলাই ২০২৩, ০৬:৪২ পিএম | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
সংশোধিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর বিধিমালা জরুরি ভিত্তিতে সংশোধন চেয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, আইনে যে ২৭ ধরনের অপরাধ-সম্পৃক্ত মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষমতা দুদকের কাছে ন্যস্ত ছিল, সেগুলো পুনরায় দুদকের এখতিয়ারভুক্ত করতে হবে।
সোমবার (১৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদকের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তা বিবেচনায় নিয়ে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত সমস্ত অপরাধ অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত করতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ তফসিল সংশোধন করতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবির গবেষণানির্ভর ধারাবাহিক অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রমের বহুবিধ সাফল্যের অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বাধীন দুদক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যদিও এর কার্যকারিতার ঘাটতি নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ ক্রমাগত বেড়েই চলছে। দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছে টিআইবি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে আমরা লক্ষ্য করেছি, যে সুনির্দিষ্ট অভীষ্ট নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল একাধিক আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুদকের ক্ষমতা হ্রাস করে তা অর্জনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
‘এ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম উদাহরণ হলো, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী দুদককে ২৭ ধরনের সম্পৃক্ত অপরাধ তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষমতা দেওয়া হলেও ২০১৫ সালে তা সংশোধন করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯-এর তফসিলে শুধুমাত্র ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ ব্যতীত অন্য ২৬টি অপরাধ-সংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব দুদকের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অর্থপাচার প্রতিরোধে দুদকের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু উল্লিখিত সংশোধনের ফলে অর্থপাচারের সাথে জড়িত অনেকগুলো অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকের এখতিয়ারভুক্ত না থাকায় সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ বাস্তবায়নে, বিশেষ করে- ক্রমবর্ধমান উদ্বেগজনক সমস্যা অর্থপাচারের ক্ষেত্রে দুদক তার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমরা জেনেছি যে, দুদকের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত আইনি সংশোধনের একটি উদ্যোগ চলমান আছে, যা ইতিবাচক। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে চূড়ান্ত করে জরুরি ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ বিশেষ করে- ২(ঠ) ধারা সংশোধন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর তফসিলে বর্ণিত অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য নির্ধারিত সংস্থার তালিকা ক্রমের ৩, ৫, ৬, ১৪, ১৮, ১৯ ও ২৫ নম্বর তথা- যথাক্রমে দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি অর্থ পাচার, চোরাচালানি ও শুল্কসংক্রান্ত অপরাধ, করসংক্রান্ত অপরাধ এবং পুঁজি বাজারসংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন) থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচারসংক্রান্ত সমস্ত অপরাধ অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত করার লক্ষ্যে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ তফসিলসহ সংশোধন করতে হবে।
টিআইবি মনে করে, আইনটির উল্লিখিত সংশোধনের সময় টিআইবির উদ্বেগ আমলে না নিয়ে শুধু দুদকের ক্ষমতা হ্রাসই করা হয়নি, বরং এর মধ্য দিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের সাথে জড়িতদের অবস্থান ও পরিচয়ভেদে সুরক্ষা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবিলম্বে পুনরায় আইনটির বিধিমালা ও তফসিলসহ সংশোধন করে উল্লিখিত অপরাধসংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধকেও জরুরি ভিত্তিতে দুদকের তফসিলভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।
একইসাথে অর্থপাচারসহ সকল প্রকার দুর্নীতির প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কারো প্রতি অনুকম্পা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে আইনানুগভাবে সৎ সাহস ও দৃঢ়তার সাথে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য দুদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
প্রসঙ্গত, একসময় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারসহ সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে শুধু ঘুষ ও দুর্নীতি (একটি অপরাধ) থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং দুদকের আওতায় রেখে বাকিগুলোর অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য সরকারের ছয়টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অন্যান্য অপরাধ দুদকের এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়। সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত থেকে এক রায়ের পর্যবেক্ষণে দুদকের পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু