ড. ইউনূস ইস্যুতে ৫০ সম্পাদকের বিবৃতি হতাশাজনক: ইউট্যাব
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৯ পিএম
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা বিদেশিদের খোলাচিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের ৫০ জন বিশিষ্ট সম্পাদক যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সংগঠনটি বলছে- সম্পাদকদের এহেন বিবৃতি হতাশাজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, একজন সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে সম্পাদকেরা নিরপেক্ষ পেশাজীবী হিসেবে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। এমনিতেই গত প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভিন্নমতের নেতাকর্মী ও বরেণ্য ব্যক্তিদেরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে টার্গেট করা হচ্ছে। ড. ইউনূসও সেই টার্গেটের শিকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগও বাদ যায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিচারাঙ্গণে যা ঘটেছে সেগুলো আওয়ামী দলীয়করণের নগ্ন উদাহরণ। সুতরাং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে যেসব মামলা করা হয়েছে তা কল্পনাপ্রসূত।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, গত শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে সম্পাদকেরা বলেন, ‘বিদেশিরা যে চিঠি দিয়েছেন তা বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ।’ আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি, এটা কোনোমতেই বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ নয়। কারণ দলীয়করণের কারণে বাংলাদেশর বিচার ব্যবস্থায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। দেশের মানুষ বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা সবারই জানা। এক্ষেত্রে ড. ইউনূসও বাদ যাননি। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ^নেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাছাড়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের মানুষের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারেনি। সরকার তার অনুগত প্রশাসনযন্ত্রকে দিয়ে দিনের ভোট রাতেই কেটেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক না হলে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছে। ভিসানীতির আওতায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাও থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরই সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার কিছু অনুগত আমলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়াল করতেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দায়ের করে তাকে হয়রানি ও তার সুনাম ক্ষুন্ন করছে।
তারা বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ যখনই সঙ্কটে পড়েছে তখনই গণমাধ্যম ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়, প্রশংসনীয় এবং অনস্বীকার্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েকবছর পরই তৎকালিন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার দেশে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। সেসময় ৪টি বাদে সকল গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল। সেই বাকশালের সময়ও কিন্তু গণমাধ্যম তাদের ভূমিকা রেখেছে। এরপর নব্বইয়ের দশকে এইচএম এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ যে ভূমিকা রেখেছে সেটা ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে আছে। এরশাদ সরকারের পতনের দাবিতে সেসময় চূড়ান্ত আন্দোলনের একপর্যায়ে সাংবাদিক সমাজ এরশাদের সংবাদ পরিবেশনও বর্জন করেছিল।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, আজকেও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে। এই সঙ্ককটালে সাংবাদিক সমাজ ও গণমাধ্যম তাদের যে ভুমিকা রাখার কথা সেভাবে রাখতে পারছে না। সাংবাদিক সমাজকেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিধাবিভক্ত করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো বহু কালাকানুন গণমাধ্যমের নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দেশের সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি পেশাজীবী সমাজ হিসেবে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের উচিৎ তাদের স্বাধীনতার বিষয়ে আরো বেশি তৎপর হওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতে বিদেশিদের খোলা চিঠির প্রতিবাদে বাংলাদেশের ৫০ জন সম্পাদক যে বিবৃতি দিয়েছে তা আমাদেরকে হতবাক করেছে। আজকে হঠাৎ করে ড. ইউনূস কেনো সরকারের টার্গেটের শিকার গণমাধ্যমের উচিৎ সে বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান সংবাদ জাতির সামনে তুলে ধরা। অথচ সে বিষয়ে সম্পাদকবৃন্দ কিছুই বলছেন না।
নেতৃদ্বয় বলেন, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ। দেশে-বিদেশে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্রদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৬ সালে অধ্যাপক ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়। অধ্যাপক ইউনূসকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানজনক ডিগ্রি দিয়েছে। ১০টিরও বেশি দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১১২টি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। উদ্ভাবনী ব্যবসা নিয়ে নিরলস কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ফরচুন ম্যাগাজিন তাকে এ কালের মহা উদ্যোক্তা অভিহিত করেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের “অ্যাডভাইজরি বোর্ড অব এমিনেন্ট পার্সন্স অন জিরো ওয়েস্ট” তথা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার ও তাকে হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
আগামী নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু
রিহ্যাব মেলায় গতকাল আশিয়ান সিটি’র ১৩ নং স্টলে ছিল ক্রেতাদের ভীড়।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বরণ!
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২৬ নারী-পুরুষ ও শিশু
লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন ইমন গ্রেফতার
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ল
দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ
শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক
দৌলতদিয়ায় বড়দের আদলে ছোটদের জমজমাট নির্বাচন
বাজারে সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে: নূর
খতমে নবুওয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
প্রকৃত তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংবাদ করুন: প্রেস সচিব
কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারায় দুই প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা ও কারাদন্ড
‘চাঁদাবাজ দখলবাজরা জুলাই অভ্যূত্থানের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করছে’
মানিকগঞ্জে আগামীকাল তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ
আটঘরিয়ায় দলীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ
প্রত্যেক ধর্মের শান্তির বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে: ড. ইউনূস