ছাত্রলীগ শুনে আরও ক্ষেপে যান এডিসি হারুন : নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রুমে প্রবেশ করতেই এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা বুট দিয়ে আমাকে নির্মমভাবে মারতে থাকে। আমি ছাত্রলীগের পরিচয় দিই, পরিচয় পাওয়ার পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। মারধরের একপর্যায়ে এডিসি হারুন তার পিস্তল দিয়ে আমার মুখ থেঁতলে দেয়।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতের নির্মম নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে বারবার গলা ভারী হয়ে উঠছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইমের। এসময় তার চোখ ভিজে উঠতে দেখা যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে নাইম বলেন, আমাদের ওপর গতকাল রাতে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমার মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাতে শাহবাগ থানায় আটকে রেখে নাইম ছাড়াও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে নির্যাতন করেন সদ্য বদলি হওয়া ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা দেন ছাত্রলীগ নেতা নাইম।
তিনি বলেন, অ্যাডমিন ক্যাডার আজিজুল হক মামুন আমার এলাকার বড় ভাই। আমার ও উনার বাড়ি গাজীপুরে। গতকাল (শনিবার) রাতে মামুন ভাই আমাকে কল করে বলেন শাহবাগের দিকে আসতে। আমি আর মুনিম তখন শাহবাগের দিকে যাই। আমরা শাহবাগে গিয়ে দেখি, মামুন ভাই বারডেমের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা মামুন ভাইয়ের কাছে যেতে যেতেই উনি বারডেমের কার্ডিওলজি বিভাগের দিকে চলে যান। আমরাও যেতে থাকি তার পেছন পেছন। সেখানে গিয়ে দেখি, এডিসি হারুন ও মামুন ভাই কথা কাটকাটি করছেন। আমি আর মুনিম বিষয়টি মীমাংসা করে দিই।
নাইম বলেন, বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির নেতৃত্বে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে আসেন এডিসি হারুন। পুলিশের ওই দলটি মামুন ভাই ও মুনিমকে ধরে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। তাদের শাহবাগ থানায় নেওয়ার পর আমি নিজে থানায় যাই তাদের কি অবস্থা দেখতে। থানায় গিয়ে যখন আমি ওসির রুমে প্রবেশ করি, তখন এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ১০-১৫ মিনিট বুট দিয়ে আমাকে মারতে থাকেন। কেউ কেউ আবার হাত-পা দিয়েও মারতে থাকে। এর মধ্যে এডিসি হারুন নিজের পিস্তল দিয়ে আঘাত করে আমার মুখ থেঁতলে দেন। আমাকে মারধর করার সময় রুমে এডিসি হারুন ছাড়া শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন এসআই ও কনস্টেবল ছিলেন।
এডিসি হারুন ও মামুনের মধ্যে কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, কি নিয়ে তাদের মধ্যে সমস্যা তা আমি জানি না। আমি মামুন ভাইয়ের ফোন পেয়ে সেখানে যাই এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।
ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়ায় এডিসি হারুন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জানিয়ে নাইম বলেন, আমাকে যখন মারা হচ্ছিল তখন আমি এডিসি হারুনকে বলি, আমি ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তখন সে আমাকে বলে, কীসের ছাত্রলীগ, আমি ছাত্রলীগ থেকে কোনো সুবিধা গ্রহণ করি না। ছাত্রলীগ পরিচয় পাওয়ার পর আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগকে গালাগাল করে আমাকে আরও মারতে থাকে।
ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, মারধরের একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি, আমি কাকরাইলের ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। আমার ঠোঁটে সেলাই হয় ৮-১০টা। ছাত্রলীগ আমার পাশে আছে। গতকাল রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার সঙ্গে দেখা করে গেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই, এডিসি হারুনকে বরখাস্ত করে যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়। তার বিচার হলে ছাত্রসমাজ সাধুবাদ জানাবে।
নাঈমের মা নাজমুন নাহার বলেন, আজ সকাল ৬টার দিকে আমার ছেলের এ অবস্থা জানতে পেরেছি। আমার ছেলে গিয়েছিল তার এক পরিচিত ভাইয়ের খোঁজ নিতে, তার কি হয়েছে। বিনা কারণে আমার ছেলেকে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো এডিসি হারুন ১০-১২ জনকে নিয়ে মারধর করে। আমার ছেলেকে মেরে ফেলার জন্যই এভাবে মারধর করেছিল হারুন। আমার ছেলের মাথা, মুখসহ সমস্ত শরীরে আঘাত করে মারধর করেছে হারুন।
তিনি বলেন, আমার সন্তান ছাত্রলীগ করে মার খেয়েছে, আর কোনো মায়ের সন্তান যেন এভাবে মার না খায়। এডিসি হারুনের বিচার চাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কোনো মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে না। আমার ছেলে গিয়েছিল মানুষের উপকার করতে। আমি এডিসি হারুনের গ্রেপ্তার চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে ঘটনার পর রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) হারুনকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে বদলি করা হয়েছে। প্রথমে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। এরপর বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এডিসি হারুন অর রশীদকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়েছে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক আহত
কুমিল্লা জজকোর্টের ৩ পিপি-এপিপিকে সংবর্ধনা
চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১৪টি অবৈধ স্বর্ণেরবার উদ্ধার, আটক ৩
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনার দ্রুত সুরাহা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘ছাত্র-জনতা সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছে’
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
‘ট্রানজিটের নামে দিল্লিকে দেয়া করিডর জনগণ মেনে নেয়নি’
বদলির ৩ মাস পরই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরলেন শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বজলুর রশিদ
বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার