খতনার সময় অ্যানেসথেসিয়া দেয়া কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে আহনাফ তাহমিদ নামে দশ বছর বয়সী একটি শিশু মারা গেছে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। দেড় মাস আগে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান আহমেদ নামে আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এবং তার পরিবারও একই অভিযোগ করেছিল।
বাংলাদেশে কোনও ধরনের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া ছাড়াই যুগ যুগ ধরে হাজামরা (যিনি খতনা করান) এ কাজ করে আসছেন। তবে গত কয়েক দশকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে সার্জারির মাধ্যমে খতনা করানোর চল বেশ বেড়েছে। কিন্তু খতনা করানোর সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া ঠিক কতটা জরুরি? দিলেও কখন সেটিতে বিপদ ঘটতে পারে? ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলম ভূঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে শিশুর খতনা করানোর জন্য অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার দরকার রয়েছে। “কিন্তু কোন ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া দরকার, সেটি নির্ধারণ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” ঠিকঠাক শারীরিক পরীক্ষা না করে ভুল সময়ে ভুল অ্যানেসথেসিয়া দিলে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ডা. ভুঁইয়া।
খতনা করানোর উদ্দেশ্যে দশ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিদকে মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন শিশুর বাবা ফখরুল আলম। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ খতনা শেষ হয়। এরপর এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শিশুর চেতনা ফিরে না আসায় মি. আলম উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। “আমি তাদের কাছে বার বার জানতে চেয়েছি আমার ছেলের কোনও সমস্যা হয়েছে কী-না। কিন্তু তারা প্রতি বারই বলেছে সিরিয়াস কিছু না, কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
রাত দশটার দিকে আলমকে জানানো হয় যে, তার ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। “তখন তারা আমাকে বলে যে, ছেলেকে দ্রুত অন্য হাসপাতালের আইসিইউতে নিতে হবে। কারণ তাদের ওখানে আইসিইউ নেই”, বিবিসি বাংলাকে বলেন তাহমিদের বাবা ফখরুল আলম। ছেলেকে আইসিইউতে নিতে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করেন আলম। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সও চলে আসে। কিন্তু ততক্ষণে তাহমিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আলমের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই তার ছেলেকে 'ফুল অ্যানেসথেসিয়া' দেয়া হয়েছে। “ক’দিন আগেই 'ফুল অ্যানেসথেসিয়া' দেয়ায় একটা ছেলে মারা গেছে বলে শুনেছিলাম। সে কারণে ওটিতে নেওয়ার সময় আমি ডাক্তারের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলাম যেন আমার ছেলেকে ফুল অ্যানেসথেসিয়া না দেয়া হয়।” “কিন্তু তারা আমার কথা শুনল না। আমার সুস্থ-সবল ছেলেটাকে মেরে ফেললো”, বিবিসি বাংলাকে বলেন আলম।
ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতেই হাসপাতালের মালিক এবং কর্তব্যরত দুই চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করে শিশুর পরিবার। "আমি চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে" বিবিসি বাংলাকে বলেন আলম। এদিকে অভিযুক্ত তিন জনের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন। “অভিযোগ পেয়ে রাতেই আমরা হাসপাতালের মালিক এবং একজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছি। তাদের প্রত্যেকের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে”, বলেন হোসেন।
ময়না তদন্তের জন্য শিশুর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শিশু আহনাফ তাহমিদ ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার পরিবার আগে ডেনমার্কে বসবাস করতো। দশ বছর আগে সেখানেই তাহমিদের জন্ম হয়। ২০১৭ সালে স্ত্রী-সন্তানসহ দেশে ফিরে আসেন ব্যবসায়ী ফখরুল আলম। তার দুই ছেলের মধ্যে তাহমিদই ছিল বড়।
অ্যানেসথেসিয়ায় বিপদ কখন?
একটা সময় ছিল যখন অ্যানেসথেসিয়া দেয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেটি বদলে গেছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানব শরীরে ছোট-বড় যে কোনও ধরনের অস্ত্রোপচার করার আগে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অ্যানেসথেসিয়া দিলে শরীর বা তার কোনও অংশ অবশ হয়ে যায়, ফলে অস্ত্রোপচারের সময় রোগী কোনও ব্যথা অনুভব করেন না। “এতে নির্বিঘ্নে অস্ত্রোপচার করে ফেলা যায়” বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলম ভূঁইয়া।
অ্যানেসথেসিয়ার একাধিক ধরন রয়েছে। যেমন, শরীরের কোনও নির্দিষ্ট অংশে ছোট অস্ত্রোপচার করার সময় কেবল ওই অংশটিকেই অবশ করা হয়। এটি ‘লোকাল অ্যানেসথেসিয়া’ নামেই বেশি পরিচিত। তবে বড় অস্ত্রোপচার করার আগে অনেক সময় পুরো শরীর অবশ করে ফেলা হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় চলে যান এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবার জেগে ওঠেন।
ছোট-বড় যা-ই হোক, যে কোনও অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার আগে রক্ত, হৃদস্পন্দনের হার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানতে রোগীর বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ‘মূলত রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে এসব পরীক্ষা করা হয়। কোন ধরনের অ্যানেসথেসিয়া দেয়া তার জন্য নিরাপদ হবে, এর মাধ্যমে সেটি বোঝা যায়,’ বলেন মি. ভূঁইয়া।
কাজেই কোনও ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা হলে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন, এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া যাদের জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, বক্ষব্যাধি বা হৃদযন্ত্রে ত্রুটি আছে, তাদের সে অবস্থায় অ্যানেসথেসিয়া না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। ‘এরকম ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিয়া দেয়া মোটেও নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিয়ে সেরে উঠে বা রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে পরবর্তীতে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে,’ বলেন ডা. শাহ আলম ভূঁইয়া। সূত্র: বিবিসি বাংলা। মৃমৃ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে
অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?
জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক
ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা
রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা
বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস
পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ
সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র
চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী
পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম
ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি
সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা