এনবিআরের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের অনিশ্চিত ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে বলে মনে করেন টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশে বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস মোবাইল ফোন অপারেটররা। কিন্তু তাদের ওপর একের পর এক করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রণোদনা দিয়ে মোবাইল প্রস্তুতকারকদের বিনিয়োগ নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তাদের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এমন অনিশ্চিত এবং অপরিকল্পিত পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম ট্যাক্সেশান ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এ বৈঠক আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে অ্যামটব মহাসচিব লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কর দিতে হয় বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের। কর বাবদ তাদের ১০০ টাকার ৯৮ টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ এই কর বাদ দিয়ে যদি সিম ও কর্পোরেট কর প্রত্যাহার এবং স্মার্টফোন ও ডাটা সহলভ্য করা হয় তবে জিডিপিতে অবদান রাখা সম্ভব হবে। বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ মোবাইল বাজার বাংলাদেশ। দেশের জিডিপিতে অন্তত ২ দশমিক ৮ শতাংশ অবদানের লক্ষ্য তাদের।
অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, বাংলাদেশে এখন বিদেশী বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। এনবিআরের অনিশ্চিত এবং অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের কারণে, বিশেষ করে দেশের হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলোকে এখানে বিনিয়োগ করার জন্য প্রণোদনা দিলেন, তারা সবাই বিনিয়োগ করল। কিন্তু দুই বছর পরে তাদের ওপর ভ্যাট এবং শুল্ক চাপিয়ে দেয়া হলো। এতে তাদের উৎপাদন কমে গেল, কস্ট অব বিজনেস বেড়ে গেল। তার ফলাফল জনগণের ওপর যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি এখন আর আলাদা খাত নয়। এটি এখন ক্রস কাটিং সেক্টর হয়ে উঠেছে। সব খাতের সাথে এর সম্পৃক্ততা রয়েছে। পাসপোর্টে আবেদন, চাকরির আবেদন, বিভিন্ন কোম্পানির ফি প্রদান সব অনলাইনে চলে গেছে। কিন্তু এনবিআরের ইমপ্লিকেটেড অটোমেটেড সিস্টেম থাকবে না? কেন এটা ম্যানুয়ালি হবে? কেন মানুষকে তাদের সামনে গিয়ে দর কষাকষি করতে হবে। ভারত তার সব খাতকে অটোমেশনের আওতায় এনেছে। তারা আমাদের জন্য উদাহরণ। রিটার্ন, সার্টিফিকেট, ভ্যাট, জিএসটি সবকিছুসহ তারা এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গেছে, তাদের রাজস্ব বেড়ে গেছে।
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, গ্রামীণফোনের লভ্যাংশের ৭৭ শতাংশ সরকারি কোষাগারে দিয়ে দিতে হয়। আমরা সব সময় কোম্পানির লভ্যাংশ দেখি, লভ্যাংশের আগে কত দশগুণ বেশি দিয়ে আসতে হয় তা দেখি না। দেশে ইন্টারনেট প্যানিট্রেশন বাড়ানোর জন্য আমাদের কর ছাড় দিতে হবে, একই সাথে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্মার্টফোনের উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায় তাও দেখতে হবে।
বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত সিইও তাইমুর রহমান বলেন, আমরা কর ব্যবস্থা নিয়ে স্বল্প সময়ের পরিকল্পনা করছি, দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিকল্পনা করছি না। সরকারের রাজস্ব খাতে অবদানের জন্য টেলিকম খাতের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিছু কিছু খাত থেকে নিচ্ছি। আমাদের ২০ কোটি সিম ব্যবহারকারী রয়েছে, শতভাগ মানুষ আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এদেরকে যদি ট্যাক্স ব্র্যাকেটে আনতে পারতাম, তাহলে কর খাতে অনেক নতুন সুযোগ উন্মোচন হতো। টেলিকম এখন শুধু ভয়েসে বা ডাটায় নেই। এটা এখন ই-কমার্স সহ সব খাতেই ছড়িয়ে গেছে। আমরা সবার সাথে পার্টনারশিপ করছি। কর ব্যবস্থা যদি স্মার্ট করা যায় তাহলে সরকারের রাজস্বে বড় ধরনের প্রভাব আনতে পারবে।
রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মুহাম্মদ শাহেদ আলম বলেন, কর আরোপে আমরা সবসময় একটি ব্যারিয়ার তৈরি করছি। আমরা ইন্টারনেট প্যানিট্রেশন, ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যক্তি প্রতি ৬ দশমিক ৫ জিবি, এ নিয়ে গর্ববোধ করছি। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যক্তি প্রতি ১৯ দশমিক ৫ জিবি। কর প্রদানে আমাদের সক্ষমতা আছে, আমাদের জনগণেরও আছে। যদি না থাকে তাহলে আজকের যে উন্নয়ন তা কোথা থেকে আসল? টেলিকম খাতকে বিশেষ খাত হিসেবে গণ্য করা হয়, কিন্তু আমাদের বিশেষ সম্মান দেয়া হয় না। আপনারা দেখছেন ৫৪ শতাংশ ট্যাক্স দেই আমরা, কিন্তু আমাদের সত্যিকার ট্যাক্স হার ৭২ শতাংশ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে বিশ্বের চেহারা পাল্টে যাবে। আমরা একই তালে, একই গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। এই ট্যাক্সেশন সিস্টেমের যদি কোনো রিভিউ করতে হয়, তাহলে টেলিকম ইকোসিস্টেমের সাথে টপ টু বটম যতগুলো খাত জড়িত আছে, সবাইকে নিয়ে বসে এবং সরকার নতুন করে চিন্তা ভাবনা করতে পারে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের জিডিপিতে অবদান রাখতে টেলিকম খাতের প্রস্তুতি হিসেবে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউকে স্মার্ট করতে হবে। স্মার্ট কর নীতিমালা ছাড়া টেলিকম খাতের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। টেলিকম খাতকে ঢেলে সাজিয়ে স্মার্ট টেলিকম খাত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য ঈদের পর এনবিআর চেয়ারম্যান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকম খাতে পিএসআরসহ দীর্ঘমেয়াদী যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধান উদ্যোগ গ্রহণ করব।
টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সভাপতি রাশেদ মেহেদির সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুদুজ্জামান রবিন প্রমুখ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান