গুলশানের সেই ‘মাতাল’ তরুণীদের কাণ্ড, সর্বত্র সমালোচনা

Daily Inqilab রুহুল আমিন

১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম

 

রাজধানীর গুলশানে একটি মদের বারের সামনে মাতাল কয়েকজন তরুণী মিলে এক নারীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে ডিবি।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) গ্রেফতারের পর তাদের মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে মারধরের শিকার নারীও ছিলেন।

কিন্তু ডিবি কার্যালয়ে এসেও অভিযুক্ত তরুণীরা ভিকটিম নারী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বিবাদে জড়ান। এ ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

সেখানে দেখা যাচ্ছে, ডিবি কার্যালয়ে ভিকটিমসহ অভিযুক্ত তিন তরুণীরই মুখ ঢাকা ছিল। সাংবাদিকরা তিন তরুণীর ফুটেজ নিতে চাইলে তারা আপত্তি জানান।

এসময় এক তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনার (ভিকটিম) সঙ্গে আমাদের প্রবলেম হইছে, আমরা আমরা সলভ করব। এখানে মিডিয়া রিলেটেড তো কিছু না’। পাশ থেকে আরেক তরুণী বলেন, ‘মিডিয়া কেন এখানে ফুটেজ নেবে’।

অন্যজন বলেন, ‘এটা মেয়েদের বিষয়। আমাদের প্রেস্টিজ আছে না! আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। দিস ইস নট রাইট’।

এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আবার ফুটেজ নিতে চাইলে তরুণীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তারা বলতে থাকেন, ফুটেজ নেবেন কিসের জন্য। আমরা মেয়ে মানুষ। আমরা নিজেরা এটা সলভ করব।

একপর্যায়ে ফুটেজের জন্য নারী পুলিশ সদস্যরা অভিযুক্ত তরুণীদের লাইনে দাঁড় করালে আরও একদফা তর্কে জড়ান তারা। ছবি তোলার জন্য সাংবাদিকরা তাদেরকে সামনে দিকে তাকাতে বললে এক তরুণী বলেন, ‘এখানে কি আমরা নাটক করব যে আপনাদের মুখ দেখাতে হবে’। আরেকজন বলেন, ‘পাত্রী দেখতে আসছেন’? অন্য তরুণী বলেন, ‘আমরা কি ছেলে মানুষ’।

এভাবে আরও কিছু সময় পার হওয়ার পর ‘সেদিন রাতে’ কি ঘটেছিল সে বিষয়ে তরুণীদের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেবেন না- বলে সেখান থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় একজন বলতে থাকেন, ‘আপনাদের মিডিয়াতে ভিউ বাড়ানোর জন্য আমাদের মানহানি করার তো কোনো দরকার নাই’।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। কিছু দূর যাওয়ার পর ভিকটিমের মুখোমুখি হন এক তরুণী। ‘আমরা আপনার (ভিকটিম) সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম’ বলে ঝগড়ায় জড়ান ওই তরুণী। এ সময় সাংবাদিকরা সামনে এসে ভিডিও ধারণ করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘আমার এখন মেজাজটা খারাপ হবে, এগুলো (ক্যামেরা) সামনে থেকে সরান’।

এ সময় পেছন থেকে ওই তরুণীর উদ্দেশে ভিকটিম বলতে থাকেন, ‘অপরাধ করতে পারো, রাস্তায় একটা মেয়ের শাড়ি খুলতে পারো, তাহলে চেহারা দেখাতে দোষ কিসের’।

এরপর পেছন ফিরে ভিকটিমের দিকে তেড়ে আসেন ওই তরুণী এবং বলেন, ‘তাহলে তুমি চেহারা দেখাও। তুমি দেখালে আমিও দেখাব’।

জবাবে মারধরের শিকার নারী বলেন, ‘আমি ভিকটিম, আমি কেন মুখ খুলব’। পরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা উভয়কে ঝগড়া থামাতে বলেন এবং অভিযুক্ত তরুণীকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

এ ভিডিও ছড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।

সাঈদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাত ১২টায় কোনো ভালো নারী বারে যায় নাকি? আবার তারা মিডিয়ার সামনে সভ্যতার পরিচয় দিতে আসছে। এদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’

হারুন-উর-রশিদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অপরাধীরা কতটা উদ্ধত তাদের আচরণ দেখেই বোঝা যায়, এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’

সোহেল আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, ‘এদের চরম শাস্তি হওয়া উচিত, বিশেষ করে এদের স্বামী এবং অভিভাবকদেরও বিচার হওয়া উচিত।’

রিফাত নামে একজন লিখেছেন, এখন শরমে ঘুমটা দিছো কেন? মাল খাওয়ার সময় কাপড় খুইলা মারামারি করলা তখন তোমাদের লজ্জা কোথায় ছিল?

ফারাবি নামে একজন লিখেছেন, ‘সবগুলা লাইসেন্সধারী প্রস্টিটিউট। আবার তারা বলতেছে আমাদের তো একটা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। রাত ১২টার পর বাসা থেকে বের হতে দেয় কোন ফ্যামিলি, এ রকম মেয়েদেরকে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।’

রহমত নামে একজন লিখেছেন, ‘বাজারের পণ্যগুলোর মুখে মাস্ক কেন? এদের চেহারা জাতির কাছে তুলে ধরার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ রোজা মনি নামে একজন লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ তুমি এদেরকে হেদায়েত দান করো আমিন।’


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!

মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!

ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস

ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস

পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫

পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫

সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ

সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত

ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন

জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?

পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!

পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি

২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত

বহির্বিশ্বে মিলল প্রাণের সন্ধান!

বহির্বিশ্বে মিলল প্রাণের সন্ধান!

মোদির ভারতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মুসলিমদের

মোদির ভারতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মুসলিমদের

ইসরায়েলকে সমর্থন, মালয়েশিয়াতে বন্ধ কেএফসির বেশীরভাগ আউটলেট

ইসরায়েলকে সমর্থন, মালয়েশিয়াতে বন্ধ কেএফসির বেশীরভাগ আউটলেট