কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করেও সড়কে ট্রাফিক পুলিশ
২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এসে থামছে বিভিন্ন দিকের যাতায়াতকারী গাড়িগুলো। অপর পাশে অপেক্ষারত পরিবহনগুলোকে যাওয়ার সংকেত দিলো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য। প্রতিমুহুর্তে ব্যস্ততম সড়কের চাপ সামলে পরিবহনের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে এভাবে লেগে আছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। কড়া রোদ, তীব্র গরম, যানজট, উচ্চ শব্দের হর্ন সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীজুড়ে। তবুও তারা তীব্র তাপপ্রবাহে উত্তপ্ত সড়ক ছাড়েনি এক মুহুর্তের জন্যও।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বাড়তি তাপাদাহে সৃষ্ট পরিবেশে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে যখন ভয় পাচ্ছে তখন যানজট নিয়ন্ত্রণে সহকর্মীদের সাথে শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য মোসলেম উদ্দিন (ছদ্মনাম)। চাকরি জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের হয়ে সড়কে দায়িত্ব পালন করে। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ, উচ্চ শব্দের হর্ন আর ধুলোয় থেকে গায়ে জাড়িয়েছে নানা অসুস্থতা। তবুও দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা প্রকাশ পাচ্ছে তার কথায়।
হাসিমুখে ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে ট্রাফিক বিভাগে চাকরি করছি। ঝড় বৃষ্টিই বা গরমের মতো অস্বস্তিকর পরিবেশেও দায়িত্বে অবহেলা করিনি। সিনিয়রদের নির্দেশ পেয়ে অসুস্থতা নিয়েও বহুবার সড়কে দাড়িয়েছি।
গায়ের ইউনিফর্ম দেখিয়ে ট্রাফিক পুলিশের এই সদস্য বলেন, এমন গরমেই আমাদের হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ঝড়, বৃষ্টি বা রোদ যাইহোক আমাদের কাজ করে যেতে হয়। আজও ডিউটির শুরু থেকেই প্রচন্ড গড়মে ঘেমে একাকার। কিন্ত সড়ক ছেড়ে যাইনি। আমরা দায়িত্ব পালন না করলেই এলামেলোভাবে চলতে থাকবে গাড়িগুলো, এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়বে। ডিউটির পুরো সময় দাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের তীব্র গরমেও সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তারা বলছে, এবারের মতো তাপদাহ এর আগে কখনও দেখেননি তারা। এমনিতেই রাজধানীতে প্রচণ্ড গাড়ির চাপ সামলাতে তাদের নানা রকম সমস্যা হয়। এছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে বায়ু দূষণের শিকার হতে হয় তাদের। এর মধ্যে চলমান তাপদাহ তাদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তারা রাজধানীর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ট্রাফিকের কনস্টেবলরা বলেন, রাস্তায় প্রখর তাপে পুড়ছি, গরম তো প্রতি বছর আসে। কিন্তু এমন তপ্ত পরিস্থিতি এই প্রথম। রোদের তাপে রাস্তার পিচও গলে যাচ্ছে। একদিকে রোদের তাপে উত্তপ্ত রাস্তা, অন্যদিকে গাড়ির ধোঁয়া। রাস্তায় যেন আগুন ঝরছে। এমন দায়িত্ব পালনের পরও অনেকেই আমাদের নিয়ে অনেক কটু কথা বলে। সবকিছুর পরেও আমরা সড়ক ছেড়ে যাই না। সড়কে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় অসুস্থ ও হয়ে পড়ি৷ তবে খুশির সংবাদ আমাদের জন্য পানি, স্যালাইন, জুস, শরবত, ছাতাসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করে সহযোগিতা করছেন।
এমন তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে নগরবাসীর যানবাহন সচল রাখতে সাড়ে ৩ হাজার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন রাজধানীতে। প্রখর রোদে তীব্র গরম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘামে তাদের জামা ভিজে যাচ্ছে। এক হাতে ছাতা ধরে অন্য হাতে গাড়ি চলাচলের ইশারা-ইঙ্গিত দিচ্ছেন তারা। তবে দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যরা হিটস্ট্রোকসহ পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। কেউ কেউ ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে।
তবে ডিএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পানির গাড়ি রাখা ছিল। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যরা পানি পান করেন। খাবার স্যালাইন ও বিতরণ করছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
এবিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, চলমান তাপপ্রবাহে ডিএমপির পক্ষ থেকে ৫০টি থানা এলাকার বিভিন্ন স্থান যেমন- বাজার, বাস স্টপেজ ও মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে শ্রমজীবী, রিকশাচালক, নিম্ন আয়ের মানুষরা নিরাপদ খাবার পানি পান করতে পারেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই সারা দেশে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ চলছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সব সময় রাস্তায় থেকে কাজ করেন। রাস্তার ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচন্ড রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের কাজ করতে হয়। এমনকি তারা বিশ্রামেরও সুযোগও পান না।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, চলমান দাবদাহের সময় তাদের জন্য কিছু জায়গায় স্থায়ীভাবে পানির ট্রলি দেয়া হয়েছে। আর বেশ কয়েকটি জায়গায় ভ্রাম্যমান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মেট্রোপালিটন এরিয়ায় যারা রয়েছে তাদের সেবা দেয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা।
চলমান তাপপ্রবাহে সড়কে দায়িত্বপালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার কোনো চিন্তা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো চিন্তা নেই। আমাদের যে পোশাক রয়েছে তার বাইরে গিয়ে বিকল্প পোশাক পরিধানের সুযোগ নেই। তবে কালো যে ছাতাটি রয়েছে সেটির বদলে সাদা ছাতা দেয়া হবে। যেন গরম কম লাগে। একইসঙ্গে রোদে বা তাপপ্রবাহে কোনো পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে গেলে সেবা দেয়ার জন্য পুলিশ হাসপাতাল সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নারাইন নৈপুণ্যে লাক্ষ্মৌর বিপক্ষে বড় জয়ে শীর্ষে কলকাতা
লিভারপুলের বিপক্ষে হেরে অস্বস্তিতে টটেনহ্যাম
অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি
ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী
লক্ষ্যটা নাগালেই রাখল বাংলাদেশ
ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যে কোন দূরভিসন্ধি রুখে দিতে হবে পীর সাহেব চরমোনাই
জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে: কুষ্টিয়ায় হানিফ
উখিয়া ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা
ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী কারিকুলাম প্রত্যাখ্যান করুন
শাহজালালে তিনদিন ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ
মুস্তাফিজকে ছাড়াই চেন্নাইয়ের বড় জয়
সুদহার শিগগিরই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: গভর্নর
মোদির মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় এবার উপজীব্য ভোট জিহাদ, তারপর কী?
‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪’ পালন করলো এনার্জিপ্যাক
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত
দুই দিনে সোনার দাম বাড়ল ১৭৮৫ টাকা
এসআই পদে বয়সসীমা ৩০ করা হোক
ইউরোপীয় রাজনীতিতে শরণার্থী প্রসঙ্গ
হিন্দুত্ববাদের কবলে আমাদের পাঠ্যবই
রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব কী?