দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গিদের রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা ছিল
১৪ মে ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্য বিভিন্ন সময়ে বান্দরবানে পাহাড়ি সংগঠন ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিনের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এজন্য জঙ্গি সংগঠনটি কুকি চিনকে প্রশিক্ষণের বিনিময়ে ব্যাপক অর্থও দিয়েছে। গতকাল সোমবার জঙ্গি সংগঠনটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
সংগঠনের সদস্যরা দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গিদের খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা, নিজ দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে জড়িয়ে শহীদ বা গাজী হওয়ার অপেক্ষায় থেকে রসদ সামগ্রী এবং কর্মী সংগ্রহে তৎপর ছিল সংগঠনটি।
সোমবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) গোয়েন্দা তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী এলাকায় রানাসহ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার ও হাবিবুর রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩ টি স্মার্টফোন ও ২ টি বাটনফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে তাদের প্রশিক্ষণের ভিডিও ছবি আছে।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত রানা ২০০২ সালে হুজিনেতা ও ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত মাওলানা আব্দুর রউফের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে যায়। ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি হুজি সদস্য সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট প্রশিক্ষণ নেয়। ২০০৩ সালে বাবা, মামা, ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন সদস্য হুজি নেতা আব্দুর রউফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। বর্তমানে আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত এই রানা সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য ৩ সদস্যকে ইতোমধ্যে বান্দরবানে কু কি চিনের সন্ত্রাসীদের কাছে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মশিউর রহমান প্রথমে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিল। ২০০২-৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে আব্দুর রউফের মাদ্রাসায় সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। ২০১৩ সালে অপরাপর হুজি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেডসহ ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে চার বছর সাজা খাটে।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ সাল থেকে পাহাড়ি বৈরী পরিবেশে কমান্ডো হিসেবে টিকে থাকা, পিটি-প্যারেড শিখা, আন আর্মড কমব্যট, অ্যাসল্ট রাইফেল চালানো, বোমা সামগ্রী তৈরি এবং ব্যবহারসহ ‘সিকিউবি’ বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২ বছর বান্দারবানে কু কিচিনের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করে। এই কষ্টকর প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে সমতলে ফেরত আসে মশিউর। আর হাবিবুর রহমান ছিলেন সংগঠনের নতুন রিক্রুট। তিনি আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে আমির হোসেনের অধীনে কাজ করতেন। আমির হোসেন একই মতবাদে দীক্ষিত করে তাকে ইতোমধ্যে জঙ্গি সংগঠনে রিক্রুট করে বান্দবানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ডিবি প্রধান বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম ও জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) মুক্তিপ্রাপ্ত এবং পলাতক বেশ কিছু সদস্য মিলেমিশে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ গঠন করে। নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা বিশ্বাস করে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক ধর্মযুদ্ধ হবে। কোন এক সময় দাজ্জালের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে মুসলিম নিধনের বড় রকমের চেষ্টা করা হবে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ইসলামকে সমুন্নত রাখতে এবং মুসলমানদেরকে সুরক্ষা দিতে যারা ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক এ ধর্মযুদ্ধে তারা অংশগ্রহণ করবেন। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ অথবা গাজীদের মত মর্যাদা পাবেন বলে বিশ্বাস করেন।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ধারাবাহিক তৎপরতায় সফল জঙ্গি অভিযানের কারণে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি সমতল এড়িয়ে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ খুঁজছিল। পার্বত্য বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে বসবাসকারী বম সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত সন্ত্রাসীদের দ্বারা গঠিত কুকি চিনদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শারক্বীয়ার।
হারুন অর রশীদ বলেন, অর্থের বিনিময়ে কু কি চীনের সন্ত্রাসীরা শারক্বীয়ার সদস্যদেরকে বৈরী পরিবেশে সারভাইবাল, আন আর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল পরিচালনা, এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস তৈরি এবং ব্যবহার, সিকিউবি’তে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গিদের খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা, নিজ দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে জড়িয়ে শহীদ বা গাজী হওয়ার অপেক্ষায় থেকে রসদ সামগ্রী এবং কর্মী সংগ্রহে তৎপর ছিল সংগঠনটি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিচের অভিযানে এদের অনেক সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন: সংগঠনটিতে ৫৩ জনের মতো সদস্য ছিল। এরমধ্যে ৪৯ জনই ইতোমধ্যে ধরা পড়ে গেছে। গ্রেপ্তার রানা বর্তমানে সংগঠনের প্রধান রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
ডিবি প্রধান বলেন, সারা দেশ থেকেই তাদের সদস্য রিক্রুটের পরিকল্পনছিল। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে হয়তো আরেকটা গ্রুপকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। গ্রেপ্তারদের ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। তাদের সঙ্গে জড়িত আর কারা আছে জানার চেষ্টা করব। জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান