শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক
১৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এখন ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ক্যাম্পাসগুলো ছিল কার্যত রণক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বহিরাগত ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে পড়েছে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের হিড়িক। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করার ঘটনা সামনে এসেছে। বহিরাগত টোকাই শ্রেণীর ছাত্রলীগ কর্মীদের এনে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার করার প্রতিবাদে এই পদত্যাগ বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনেকে।
গত রোববার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের পর থেকে এই পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আসে। প্রথমে এদিন রাতের মধ্যেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন ছাত্রলীগ নেতা। পরবর্তীতে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত যুবকদের এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার পর রাতেই পদত্যাগ করেন আরো অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেয় অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগকারীদের মধ্যে- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, একই অনুষদের বিষয়ক উপ সম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন, নাট্য ও সাহিত্য সম্পাদক মেহেরুন্নিসা মিম, একই হলের আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশাসহ বিভিন্ন হল এবং অনুষদের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে, গত রোববার (১৪ জুলাই) রাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এর প্রতিবাদে ও কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রলীগের ৩জন নেতা পদত্যাগ করেন। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ এবং আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সহ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা শিপন মাহমুদ ফেসবুকে লেখেন, আমি চলমান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান করছি। ন্যায়ের পক্ষে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকজ খাওয়া এবং মুচলেকার মুখে পড়া ছাত্র আমি। আমি আজীবন নজরুল। প্রতিবাদ আমার রক্তে। আমি আজন্ম প্রতিবাদী পুরুষ। আমি মো. শিপন মিয়া, সহ-সভাপতি, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিজয় একাত্তর হল-এর সহ সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। অন্যায় আর শিপন এক লাইনে থাকে না।
জুয়েনা আলম মুন বলেন, ছাত্রলীগকে ন্যায়ের কান্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা ছিলো এটাও মনে করলে আমার রক্তাক্ত বন্ধুবান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি।
হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, ছাত্রলীগের সাথে আমার পূর্বের সকল সম্পর্ক ত্যাগ করলাম, আমার ছোটভাই বন্ধুদের অনেককে নির্মমভাবে পেটানো হইছে। ঘৃণা হচ্ছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে এতদিন কাজ করায়। বিদায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত বলেন, আজকের পর থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে বাকী জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নাই। পুলিশ ভেরিফিকেশন, তদবির, কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে অন্য যেকোনো ধরণের অসহযোগিতা ও সকল ধরণের কনসিকোয়েন্স মাথায় রেখে, কারো প্ররোচনায় না, বরং বিবেকের তাড়নায়, ও সজ্ঞানে আমি বিজয় একাত্তর হলের ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করলাম।
একদিকে পদত্যাগের হিড়িক অন্যদিকে ত্যাগী নেতাদের চলছে পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপে নেতারা লিখছেন, 'এখন আপনাদের পরীক্ষার সময়। এখনকার অবস্থানের উপর নির্ভর করবে আপনাদের পদ পদবি।' ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী রাহাত ইসলাম বলেন, যারা এই ক্রান্তিলগ্নে পদত্যাগ করছেন তারা আসলে ছাত্রলীগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদী। তারা এতদিন ছাত্রলীগের এই পদ পদবিকে হলে শান্তিতে থাকার হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে।
নেতাকর্মীদের এমন পদত্যাগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, মূলত প্রতিটি রুমে রুমে গিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা তাদেরকে জোরপূর্বক পদত্যাগের স্ট্যাটাস দেওয়াচ্ছে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে
অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?
জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক
ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা
রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা
বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস
পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ
সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র
চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী
পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম
ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি
সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা