ব্যর্থতার দায়ে ঢাবি প্রশাসনের পদত্যাগ চাইলেন সাদা দল
৩০ জুলাই ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কতৃক বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এ দাবির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, দুই প্রো-ভিসি, প্রক্টর ও সংশ্লিষ্ট হলগুলোর প্রভোস্টদের পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি
আজ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা সোয়া ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান। এসময় তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার সাথে পূর্ণ একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদা দলের আহবায়ক প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান। এসময় যুগ্ম-আহ্বায়ক প্রফেসর মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও প্রফেসর আবদুস সালাম, দলটির সাবেক আহ্বায়ক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম সরকারসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের ১১ দফা দাবি হলো- ১. গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্র নামধারী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সকল ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ২. সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ।
৩. অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। ৪. কারফিউ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে জনজীবন স্বাভাবিক করা। ৫. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করে গত ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ হত্যায় জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও একই সাথে এ হামলায় আহত সকলের সুচিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা।
৬. আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।৭. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি হেফাজত থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং গ্রেপ্তারকৃত সকল শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান। ৮. শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার ও হয়ারনি না করা। ৯. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সংকটের সমাধান করা। তদন্ত ছাড়াই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পেশাজীবীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেপ্তার।
১০ রিমান্ডে নিয়ে বর্বোরচিত নির্যাতন বন্ধ করা এবং গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করা। ১১. জনদাবি মেনে নিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে প্রফেসর লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা করে আমরা শুরু থেকেই এ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে আসছি। আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে উদ্ভূত সংকটের দ্রুত সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আমরা একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার একটি ন্যায্য দাবিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে আইন-আদালতের কথা বলে সংকটকে প্রলম্বিত করে। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী আখ্যা দিয়ে তাদের আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।
আন্দোলন ঘিরে ঢাবি ক্যাম্পাসে সহিংসতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্দোলন আরো জোরদার হলে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামধারী এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মম হামলার শিকার হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আক্রমণ হতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়।
ছাত্রলীগের হামলা পরবর্তী সময়ে ১৫ জুলাই দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের রুম ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টিকে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, হামলার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আমরা মনে করি গত দেড় দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, এগুলো ছিল এর প্রতিক্রিয়ায় পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে তাদের কল্যাণে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কোন ভূমিকা ছিলো না উল্লেখ করে প্রফেসর লুৎফর বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই যে, গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষক সমিতি আর সেই ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাদের কর্মকাণ্ডে শিক্ষক সমাজের মতামত ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটছে না। সাম্প্রতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনেও এমনটাই ঘটেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন এগিয়ে আসেনি তেমনি শিক্ষক সমিতিও কোনো ভূমিকা রাখেনি।
এই আন্দোলনে জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উল্লেখ করে শিক্ষকরা আরো বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী চলমান ছাত্র আন্দোলনটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্থ করে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করে বর্তমান সরকার দেশের গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে একটি শ্রেণি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে। অন্যদিকে দেশের সিংহভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন কেবল কষ্টকরই নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের মনে যে দ্রোহের সঞ্চার হয়েছে, এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবারের স্বতঃস্ফুর্ত গণআন্দোলনে।
উল্লেখ্য, শিক্ষকদের ১১ দাবির ২য় দফায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগের কথা উল্লেখ থাকলেও সুস্পষ্টভাবে কাদের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে সে বিষয়ে ইনকিলাবের এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর লুৎফর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টর ও হামলা, ভাঙচুর সংশ্লিষ্ট হলগুলোর প্রভোস্টের পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেন।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মিজানুর রহমান আজহারীর ব্যাখ্যা
বিতর্কিত চিন্ময় কাণ্ড: আত্মসমর্পণের পর জামিন পেলেন ৬৩ আইনজীবী
শরীয়তপুরে ১০ বছরেও নির্মাণ হয়নি আদালত ভবন
শুভেন্দুর হুঙ্কার : ‘বাংলাদেশকে জবাব দিতে পাঁচ-সাতটি ড্রোনই যথেষ্ট’
ষড়যন্ত্র ও হয়রানির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আবেদন বঞ্চিত বিধবার
মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় রুপির সর্বনিম্ন রেকর্ড
দোয়ারাবাজারে অভিযুক্ত বাঁধে বালু অপসারণ!
তালেবান শাসনকে বৈধতা না দেওয়ার আহ্বান নোবেলজয়ী মালালার
ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের
ঢাকার বাইরে প্রথম নরসিংদীতে রয়েল এনফিল্ড লঞ্চ
ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত করা সম্ভব
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না : হাইকোর্ট
বিদ্যুৎ প্লান্টের পাঁচ লাখ টাকার লোহা তামা স্টিল সামগ্রী চুরির দায়ে ৫০ জনের নামে মামলা
নেত্রকোনা গত ১ বছরে ২৩২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু
মেহেরপুর শহরে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম ফুটপথ দখল, সরু সড়ক, যানজট লেগেই থাকে
অ্যাপলের ডাইভার্সিটি নীতি , বৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে বোর্ডের বার্তা
ঢাবি,ভিকি,এনএসইউ ওয়েটিং লিস্টে থাকে,বান্নাহ খাওয়া মাল খায় না'
দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা কর্নেল অলির
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০ জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী