ঢাকা   সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১

দুই হাসপাতালে এখনো ২০ লাশ পচছে, নিতে আসছে না কেউ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৫ এএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৫ এএম

সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের সময় থেকে সহিংসতায় নিহত ২০ জনের লাশ এখনও পড়ে আছে ঢাকার দুটি হাসপাতালের তিনটি মর্গে।

লাশগুলো বিকৃত হয়ে যাওয়ায় পরিচয় বোঝা যাচ্ছে না, কেউ খোঁজ করতেও আসছেন না। থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় করা যাচ্ছে সুরতহাল। লাশগুলো পচে ফুলে গেছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আটটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নয়টি এবং শেরে-বাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তিনটি মরদেহ রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের নয়টি মরদেহের দুটি উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে, তিনটি মরদেহ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে এসেছে। পুলিশ হাসপাতাল থেকে আসা তিনটি মরদেহ পুলিশের বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের ডোম রামু চন্দ্র দাস বলেন, “বডিগুলো চেনার কোনো উপায় নাই। প্রত্যেকটাই ফুলে গেছে।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পড়েছে শাহবাগ থানা এলাকায়। সেখানে দায়িত্বপালনকারী শাহবাগ থানার কনস্টেবল সালাহ উদ্দিন আহমেদ খান শনিবার বলেন, এখন পর্যন্ত আসা লাশের মধ্যে যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেগুলো তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭টি লাশের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

“কয়েকটি লাশ সড়কে পড়েছিল কয়েকদিন, লাশগুলো ফুলে এমন অবস্থা হয়েছে সেগুলোর বায়োমেট্রিক ডেটা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনটি বডি পুড়ে গেছে। এগুলোর কিছু করা যাচ্ছে না।”

কনস্টেবল সালাহ উদ্দিন বলেন, থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলো সৎকারের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে দেওয়ার পক্ষে তিনি।

“আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি, এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের একটাই পথ, অজ্ঞাত হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে, ডিএনএ সংগ্রহ করে লাশগুলো দ্রুত আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে দিয়ে দেওয়া। এতে লাশও মুক্তি পাইল, আমরাও মুক্তি পাইলাম। এছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নাই।”

মরদেহগুলো নিয়ে বিপাকে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষও। থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মরদেহগুলোর সুরতহাল তৈরি করতে পারছেন পুলিশ। আর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন ছাড়া এসব মরদেহের ময়নাতদন্ত করা যাচ্ছে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী গোলাম মোখলেসুর রহমান বলেন, “আমাদের মরচুয়ারিতে জায়গা কম। ফলে এতগুলো মরদেহ এখানে দীর্ঘদিন রাখাও যাচ্ছে না। থানার কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় আছি আমরা। পুলিশ যদি সুরতহাল করে দেয়, তাহলে আমরা অটোপসি করে করে দেব।

“ডিএনএস স্যাম্পল রেখে সেগুলো আনজুমান মফিদুল ইসলামে দিয়ে দেব। আর পরে কেউ ক্লেইম করলে ডিএনএ টেস্ট করে তাদের স্বজনদের জানানো যাবে।”

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো. শফিউর রহমান বলেন, তার হাসপাতালে ৫ অগাস্টের পর তিনটি মরদেহ এসেছে, যাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। সেগুলো মর্গে রাখা আছে।

“যাদের ডেডবডি আছে, তাদের মধ্যে ছাত্রও আছে। এজন্য ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বলেছি। তারা পরিচয় শনাক্ত করতে পারে কি না। আমাদের ফ্রিজ মেরামত করতে হবে। মরদেহগুলো না সরালে সেটা করতে পারছি না। গত কয়েকদিনের সহিংসতার সময় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের কি ধরনের ইনজুরি, সেটা আমি বলতে পারব না। আমি ডেডবডি দেখেনি।”

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলার সময় ১৮ জুলাইয়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে প্রায় তিনশ মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এরপর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে ৪ ও ৫ অগাস্ট ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়।

সে সময় পুলিশের গুলিতে অনেকে মারা যায়। আন্দোলনকারীরা ঢাকার বিভিন্ন থানায় হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে অনেক পুলিশ সদস্যেরও মৃত্যু হয়।

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলার মধ্যে গত ২৬ জুলাই পর্যন্ত ২১টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। এসব মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছিল।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ছয় মাসে সউদীর সিনেমা হলে আয় ১৩শ কোটি

ছয় মাসে সউদীর সিনেমা হলে আয় ১৩শ কোটি

‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ পুনর্গঠন, কমিটিতে আছেন যারা

‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ পুনর্গঠন, কমিটিতে আছেন যারা

চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে লাখো ভক্তের ঢল

চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে লাখো ভক্তের ঢল

৮১ শতাংশ মানুষ সংস্কার সম্পন্ন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ চান

৮১ শতাংশ মানুষ সংস্কার সম্পন্ন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ চান

‘স্বৈরাচারের চল্লিশা’ উদযাপন, অতিথি বাঁধন

‘স্বৈরাচারের চল্লিশা’ উদযাপন, অতিথি বাঁধন

পালানোর সময় যেভাবে আটক হলেন মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তরা

পালানোর সময় যেভাবে আটক হলেন মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তরা

রাজবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা

রাজবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা

ভারতে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার ৮৬ নারী

ভারতে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার ৮৬ নারী

কলকাতায় এবার রোগীর মাকে শ্লীলতাহানি, ভিডিও ধারণ

কলকাতায় এবার রোগীর মাকে শ্লীলতাহানি, ভিডিও ধারণ

দোয়ারাবাজারে গলায় ফাঁশ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

দোয়ারাবাজারে গলায় ফাঁশ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন, নতুন কমিটিতে যারা আছেন

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন, নতুন কমিটিতে যারা আছেন

বড় চমক দেবে হোয়াটসঅ্যাপ! ইউজারদের সঙ্গে এবার কথা বলবে মেটা এআই

বড় চমক দেবে হোয়াটসঅ্যাপ! ইউজারদের সঙ্গে এবার কথা বলবে মেটা এআই

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় কারাগারের দেয়াল ধস, পালিয়ে গেল প্রায় ৩০০ বন্দি

নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় কারাগারের দেয়াল ধস, পালিয়ে গেল প্রায় ৩০০ বন্দি

চীনের সাংহাইতে ৭০ বছর পর শক্তিশালী টাইফুনের আঘাত

চীনের সাংহাইতে ৭০ বছর পর শক্তিশালী টাইফুনের আঘাত

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে ওজোনস্তর রক্ষা করতে হবে: ড. ইউনূস

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে ওজোনস্তর রক্ষা করতে হবে: ড. ইউনূস

চলতি বছর ‘লা নিনা আবহাওয়া’ পরিস্থিতি ঘটার সম্ভাবনা ৫৫ শতাংশ

চলতি বছর ‘লা নিনা আবহাওয়া’ পরিস্থিতি ঘটার সম্ভাবনা ৫৫ শতাংশ

ভারতে পাচারের সময় ৮৫০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছে বিজিবি

ভারতে পাচারের সময় ৮৫০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছে বিজিবি

রাস্তায় জন্ম নেয়া ব্রেক ড্যান্স যেভাবে পৌঁছে গেছে অলিম্পিকে

রাস্তায় জন্ম নেয়া ব্রেক ড্যান্স যেভাবে পৌঁছে গেছে অলিম্পিকে

ফের ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত ঢাবি

ফের ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত ঢাবি