ঢাবি প্রশাসনে শেখ হাসিনার দোসররা বহাল তবিয়তে
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ এএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব চেয়ার থেকে অপসারণ করা হচ্ছে তার লোকদের। এ তালিকায় রয়েছে কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতনরা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিরভাগ কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রিন্সিপালদের অপসারণ করা হয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতর, প্রশাসনিক ভবনে শেখ হাসিনার প্রভাবশালী কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
তথ্যমতে গত দেড় যুগ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনের বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দলীয় লোক বিবেচনায়। এই সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মকর্তাই শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সক্রিয় থেকে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তারা বিভিন্ন দফতরের নিয়োগ থেকে শুরু করে যাবতীয় লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করতেন। নিজেদের দাবিদাওয়া পূরণ না হলে ফাইল আটকে মানুষকে জিম্মি করে রাখতেন। বিরোধী মতাদর্শের লোকদের কোনঠাসা করে রাখতেন। এমনকি ক্ষুদ্র বিষয়ে তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে দ্বিধা করতেন না। নিজেদের মাঝে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি করে গেছেন তারা। এমনকি সরকার পতনের পরও তারা গুরুত্বপূর্ণ সব দফতরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যা নতুন প্রশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে শেষ পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করেছেন অনেকে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে ৪ আগস্ট প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি মিটিং করেন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা। পরে পুরো প্রশাসনিক ভবন-জুড়ে শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন তারা। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা। তবে তারমধ্যে অনেকেই বাধ্য হয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছেন বলে জানা যায়।
ওই মিছিলের ৯ মিনিটের একটি ভিডিও ইনকিলাবের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায় মিছিলে নেতৃত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও ভিসির একান্ত সচিব মো. আরাফাত হোসেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ লাভলু মোল্লাহ শিশির, একই অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মঞ্জুর হোসেন। আরাফাত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার পুরো পরিবারও আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। শিশির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। মঞ্জুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ কমিটির সদস্য হন। জানা যায়, তারা অফিসে যোগদানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন অফিস কেন্দ্রিক।
সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ দফতর ভিসি অফিসকে সাজানো হয়েছে এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারা। ফলে দ্বিধাহীনভাবে নিজের কাজ করে যেতে পারতেন আওয়ামীপন্থী ভিসিগণ। ভিসি অফিসের প্রধান সহকারী তানভীর হোসেন। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে মিছিলে প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া ভিসি অফিসের নানান দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্রর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নয়ন তালুকদার। বর্তমানে তিনি ভিসি অফিসের প্রধান সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রাপ্য সম্মান দেন না নয়ন। সবসময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতা জাহির করতেন। একই অফিসের সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত নিপু ইসলাম তন্মী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি। যা বর্তমান নিরপেক্ষ ভিসির জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আরেক দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কর্মচারী হলেন ভিসি অফিসের পিয়ন মোজাম্মেল হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং অফিসে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা এমনভাবে জাহির করতেন যে সিনিয়র অনেক কর্মকর্তা তার হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এই ভবনে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে যত দুর্নীতি সবগুলোর মূল হোতা হলেন লাভলু মোল্লাহ শিশির, আরাফাত হোসেন গং।
প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহমুদা খানম সুমি। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বড় ভাই রাসেল রিপন-রোটন পরিষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট তিনি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি গ্রুপে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপক্ষে লেখালেখি করেন বলে জানা যায়। একই অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার আজম রানা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে একনিষ্ঠ-ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনিও নানান দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং কোটা-বিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার সুমনা আক্তার ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তার স্বামী আওয়ামী লীগের একটি উপকমিটির সদস্য। ৪ আগস্ট তিনি মিছিলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এ কে এম আফতাবুজ্জামান। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। চাকরিতে জয়েন করার পর ক্ষমতা কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে নানান দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
ট্রেজারার অফিসের অন্যতম দুর্নীতিবাজ অফিসার হলেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ রুহুল আমিন। তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম দোসর ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতাকারীদের একজন। ট্রেজারার অফিসের সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার হলেন রুহুল আমিন। এই অফিসের নানান অনিয়ম দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ৪ আগস্টে মিছিলে সামনের সারিতে থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দেন রুহুল আমিন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানান গোপন মিটিংয়েও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বলে জানা যায়। ক্ষমতার দাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
৪ আগস্টের মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া আরেকজন কর্মকর্তা হলেন বিল শাখার সহকারী হিসাব পরিচালক আল মামুন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রাক্তন ছাত্রলীগের নেতৃত্বের সাথে জড়িত অফিসারদের সাথে সখ্যতা রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক ভবন রাসেল টাওয়ারে থেকে নানান অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পেশাজীবী লীগের(একাংশের) সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সুমন খান। তিনি হিসাব পরিচালক অফিসের বিল শাখা-১ এর হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। পেশাজীবী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে হিসাব পরিচালকের ছত্রছায়ায় নানান অনিয়ম এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া আরেকজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এর সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সুজন। তিনিও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। রেজিস্ট্রার অফিসের (শিক্ষা-২) এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলাম। তিনিও ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এবং আওয়ামী সরকার পতনের পরও ফেইসবুকে সরকারের হয়ে লেখালেখি করার অভিযোগ রয়েছে। একই অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মি. সুব্রত গোস্বামী। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। হিসাব পরিচালক অফিসের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। তিনিও হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিনেট এবং সিন্ডিকেট সদস্য বাহালুল হক মজনুর ছত্রছায়ায় বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানান অপকর্মে জড়িত। সূত্র জানায়, তিনি হিসাব পরিচালকের প্রভাব খাটিয়ে অফিসে বহিরাগত লোক এনে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নিতেন।
রেজিস্ট্রার অফিস, প্রশাসন-১ এর শারমিন জাহান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে হেনো কোন অপরাধ নেই তিনি করেননি। তিনি করোনা-কালীন মাস্ক কেলেঙ্কারি সাথে জড়িত হয়ে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেছেন। জুলাই গণহত্যার পূর্বে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে বিনা ছুটিতেই সফর সঙ্গী ছিলেন শারমিন। শেখ হাসিনার পতনের পরও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের গ্রুপে তিনি বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম। তিনিও বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগানের নেতৃত্ব দেন। তিনি শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তৃতায় ইসলামপন্থীদের জঙ্গি বলে গালি দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র অ্যাডমেনিস্ট্রেটিব অফিসার রিনা বেগম। শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং ৪ আগস্টের মিছিলেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। জানা যায় তার স্বামী ব্যবসায় অনুষদের একটি অফিসে কর্মরত ছিলেন এবং যৌন নিপীড়নের দায়ে চাকরীচ্যুত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে কর্মরত ছিলেন মিঞা হাসান জামিল শিশির। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এখন তিনি কলেজ পরিদর্শক অফিসের কলেজ উপ-পরিদর্শক। শিশিরের ভাই হাসান জাহিদ তুষার ছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের উপ-প্রেস সচিব। যৌন ক্যালেঙ্কারির দায়ে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এসব দুর্নীতিবাজদেরকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে গেছেন সহকারী হিসাব পরিচালক মোন্তাজ আলী, সুমন খান, ধীরেন্দ্র নাথ, মুরাদ হোসেনরা। মুরাদ হোসেনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেন সাইফুল ইসলাম। এরা সবাই নিজ নিজ অফিস ছেড়ে প্রায়ই হিসাব পরিচালকের কাছে এসে বসে থাকতে দেখা যায়। জানা যায়, হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম বিএনপিওন্থী হলেও আওয়ামী লীগের আমলে তাদের সাথে লিয়াঁজো করে পদন্নোতি পান এবং নানান অনিয়ম দুর্নীতির অংশীদার করেন আওয়ামীপন্থীদের। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত-পন্থী কর্মকর্তারা গত ৭ থেকে ১০ বছরেও প্রমোশন না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সেকশন অফিসার মির্জা ইশতিয়াক আলম বেগ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর সাথে থেকে বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান পাপ্পু। তিনি সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ৪ আগস্ট এর মিছিলে তিনিও নেতৃত্ব দিয়েছেন। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক এবং গজারিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ভিসি অফিসের লাভলু মোল্লাহ শিশির ও আরাফাত সহ একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন মোজাম্মেল। সাবেক ভিসি ড. আখতারুজ্জামানের আমলে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হলের সিনিয়র অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ অফিসার আব্দুল হাই। জানা যায়, আব্দুল হাই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আখতারুজ্জামান এর ভাগ্নে হয়। আখতারুজ্জামানের সময়ে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। এমনকি অভিযোগ রয়েছে হিসাব পরিচালকের সাথে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত হিসাব পরিচালক থেকে পরিচালক হয়েছে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে ট্রেজারার অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিন, আব্দুল হাই ও বাহালুল হক চুন্নু এবং হিসাব পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের একান্ত আস্থা-ভাজন ধীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ।
সূত্রমতে, ট্রেজারার অফিসের রুহুল আমিন এবং প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অফিসের আফতাবুজ্জামান হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে তারা যৌথভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হিসাব পরিচালক অফিসের সুমন, ধীরেন্দ্র নাথ, মুরাদ হোসেন, মোন্তাজ আলি প্রমুখকে দিয়ে তিনি সবসময় এই অফিসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। অফিসে না এসেও বিভিন্ন বিল তৈরি করার মতো নানান দুর্নীতির সাথে জড়িত সাইফুল ইসলাম। অভিযোগ অনুযায়ী হিসাব পরিচালক কারো কোন মতামতকে গুরুত্ব দেন না। নিজে যা মনে করেন তাই বাস্তবায়ন করেন।
তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিধি অনুযায়ী বাজেট শাখা এবং জেনারেল একাউন্টস হিসাব শাখা একই। অর্থাৎ বাজেট শাখার যিনি দায়িত্বে থাকবেন একই ব্যক্তি জেনারেল হিসাব শাখারও দায়িত্বে থাকবেন।অথচ হিসাব পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে জেনারেল অ্যাকাউন্টস শাখার দায়িত্ব তার হাতে ধরে রেখেছেন যা আর্থিক সংবিধির ব্যত্যয়। এছাড়াও ভিন্ন মতাদর্শীদের সব সময় তিনি কোণঠাসা করে রাখেন। যারা তার পদলেহন করতো তাদের তিনি বাছবিচারহীন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাখেন। তার ছত্রছায়ায় ইন্টারনাল অডিট শাখার সহকারী হিসাব পরিচালক আহসানুল আলম বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়। যার ব্যাপারে সদ্য সাবেক ভিসি ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নিকট অভিযোগ গেলে তিনি তাকে জবাবদিহি করেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ অনুযায়ী, হিসাব পরিচালকের অফিস ছিল ছাত্রলীগের আড্ডার স্থান। অফিস টাইমের পর যখন কেউ থাকতো না তখন হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে খোশগল্প করতেন। এছাড়া সহকারী হিসাব পরিচালক মুরাদ হোসেনকে দিয়ে তিনি ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নিতেন। তাই তাকে প্রায়শই অফিসে পাওয়া যায় না। রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে আরো জানা যায়, হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী একই অফিসে পেনশন শাখার দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু অফিস টাইমেও ঘন্টার পর ঘন্টা তার চেয়ার ফাঁকা থাকে। অথচ বিষয়টি নিয়ে কোন জবাবদিহিতা নেই। বর্তমানে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকে রেজিস্ট্রার ভবনে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, সরকার পতনের পর রাতারাতি খোলস বদলে ফেলেছেন অনেকেই। এখন বিএনপিপন্থী কর্মকর্তার সংখ্যা ও প্রভাব দু'টোই বাড়ছে রাতারাতি। গত বুধবার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সভা করেছেন বিএনপি সমর্থক ১০-১৫ কর্মকর্তা। এর মধ্যে ছিলেন হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম, পরিবহন ম্যানেজার কামরুল হাসান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমজাদ হোসেন শিশির, সফিউল্যাহ প্রমুখ। সভায় কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদগুলোতে কাকে বসানো যাবে, এসব বিষয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করেন বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন টেন্ডারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, কারো বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে এখন আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা। অন্যান্য গভীরতম বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যুবদল নেতা হান্নানের চিকিৎসায় সহায়তা দিলেন মজনু
কারো কাছে থাকা আমানত চুরি হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।
মাগুরায় ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল চালক নিহত
শেখ হাসিনার আমলে সীমান্তের কাঁটা তারে লাশ ঝুলন্ত, এখন পতাকা বৈঠক হয়--শাকিল উজ্জামান
পেকুয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় মাওলানা ইমতিয়াজ
থানা থেকে ছিনাইয়া নেওয়া যুবদল নেতা গ্রেফতার
শ্রীনগরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার
মুকসুদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা, প্রতিবাদ জানালো আ.লীগ
নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ
এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান
শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!
সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি
কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০
দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার
পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন
তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ