সীমান্তে ফেলানী থেকে স্বর্ণা দাস হত্যাকান্ড বেপরোয়া বিএসএফ
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পিএম
শেখ হাসিনা সরকার একদিকে ভারতকে একতরফাভাবে ট্রানজিট, বন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যবসাসহ নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে গেছে, অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশকে আন্তসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়নি। সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিলেও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। অথচ সীমান্তে বিএসএফের নিয়মিত হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে কড়া ও স্পষ্ট অবস্থান নেয়া, প্রতিটি ঘটনার বিচার ও তদন্ত দাবি করা, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে জবাবদিহি চাওয়া এবং প্রয়োজনে বারবার হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করার কোনো চেষ্টাই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বতী সরকারের আমল থেকে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে সাধারন মানুষের প্রত্যাশা।
ফেলানীর মতোই বাংলাদেশের আরেক কিশোরীকে গুলি হত্যা করেছে বিএসএফ। গত ১ সেপ্টেম্বর রোববার রাতে মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় থাকা ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় বিএসএফয়ের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস (১৪) নিহত হয়। নিহত স্বর্ণা মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। হত্যাকান্ডের ৪৫ ঘণ্টা পর বিএসএফ নিহত স্কুলশিক্ষার্থীর লাশ হস্তান্তর করেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে বিএসএফ ওই শিক্ষার্থীর লাশ হস্তান্তর করে।
১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনকে হত্যা করা হয় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে আর ১৪ বছর বয়সী স্বর্ণা দাসকে হত্যা করা হয় সেই ঘটনার ১৩ বছরের বেশি সময় পর ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে।
ফেলানী কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে তার পিতার সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছিল আর স্বর্ণা দাস মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে তার মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় অভিবাসী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল। ফেলানী হত্যাকা-ের পর তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশ প্রবল আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। কিন্তু এ রকম আলোড়নের পরও শাস্তি হয়নি ফেলানীকে হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যের। বিএসএফের আদালত তাকে বেকসুর খালাস দেন। এরপর মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গড়ালেও বিচার হয়নি আজও।
বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেছিলেন, এমনভাবে কেউ যেন তার সন্তানকে না হারায়। সীমান্তে একটি পাখিও যেন বিএসএফের হাতে মারা না যায়। কিন্তু বিএসএফের পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। শুধু কিশোরী ফেলানী বা স্বর্ণা নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষকে সীমান্তে গুলি করে বা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করছে। দুই বৈরী প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে গোলাগুলি কিংবা হত্যাকা-ের ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু পরস্পরকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধু দাবি করে আসছে এ রকম দুই দেশের সীমান্তে একটি দেশ কর্তৃক নিয়মিতভাবে অন্য দেশের নাগরিককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী, ২০২৩ সালে ৩১ জন বাংলাদেশি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে নিহত হয়েছেন।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হয়। চোরাচালানিদের হত্যা করা হয়। মনে হয় যেন সীমান্তে গরু জন্ম নেয় আর তা বাংলাদেশে পাচার করা হয়। বাস্তবে এই সব গরু আনা হয় ভারতের অভ্যন্তরে দুই-আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের হরিয়ানা, পাঞ্জাব থেকে। গরুগুলো হাঁটিয়ে, ট্রাক-ট্রেনে করে আনা হয়। তখন কেউ দেখে না! তারা আটকায় না। কারণ, তারা ভাগ পায়। এখানে আসল কথা হলো দুর্নীতি, ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে সব করা হয়। যখন ভাগ-বাঁটোয়ারায় মেলে না, তখন বিএসএফ হত্যা করে। বাংলাদেশকে চাপে রাখতে সীমান্ত হত্যা বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
স্বর্ণার বাবা পরেন্দ্র দাস জানান, ভারতের ত্রিপুরায় তার বড় ছেলে থাকেন। তাকে দেখতে স্বর্ণা ও তার মা গত রোববার রাতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় লালারচক সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রাত ৯টার দিকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে স্বর্ণা ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং ভাগ্যক্রমে তার মা বেঁচে যান। বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের লালারচক বর্ডার ফাঁড়ির (বিওপি) টহল কমান্ডার নায়েক ওবায়েদ বলেন, খবর পাওয়ার পর বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। এরপর ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে বিজিবি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুলাউড়া থানা পুলিশের কাছে স্বর্ণার লাশ হস্তান্তর করে।
সীমান্তের বাসিন্দরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবছরই সীমান্ত সম্মেলনের আয়োজনের করা হয়, প্রতিবছরই সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয় না। মানুষ মরে, খুন হয়। বলাবাহুল্য যে অধিকাংশই বাংলাদেশের। এরপরও আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নীরব থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে মাত্র দুটো দেশের সীমানা রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। কিন্তু, ভৌগলিক অবস্থার কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানার প্রকৃতি ভিন্ন। সেই অর্থে একমাত্র ভারতের সঙ্গেই আমাদের কার্যকর সীমানা। এই একমাত্র প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনায় যদি জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীরব থাকা হয়, তাহলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানাবিধ বিরূপ প্রশ্ন জাগার আশঙ্কা থেকেই যাবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বতী সরকারের আমল থেকে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে সাধারন মানুষের প্রত্যাশা।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বসনিয়ার বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফিরল জার্মানি
ক্রিকেটে দুর্ভাগ্যের সংখ্যা '৫৫৬'!
ভিএআরে প্রতিবাদ করে নটিংহ্যামকে গুনতে হল প্রায় ১২ কোটি টাকা!
চৌদ্দগ্রামে ওভারটেক করার সময় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত, আহত ১
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ২,০০০ কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি
ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণে প্রতিবাদ সভা
শান্তিতে নোবেল পাওয়া জাপানি সংগঠনকে অভিনন্দন ড. ইউনূসের
সবজি বাজারের সিন্ডিকেট এখনো বহাল কিভাবে?
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা কোনভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় - ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
যশোরে নারীকে কুপিয়ে হত্যা করল প্রাক্তন স্বামী
স্বৈরাচার হাসিনা হিটলারেরর চেয়ে জঘন্যতম কাজ করছে
পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন জঘন্য অপরাধ, কথিত শিল্পীদের শাস্তির দাবি ইসলামী দলের
ফের হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হলেন নায়াব সাইনিই!
শেখ হাসিনা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন : মাওলানা মামুনুল হক
৫৮ জন জেলেকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনলো কোস্টগার্ড
আরব সাগরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, এক মাস পর উদ্ধার পাইলটের দেহ
গত ১৫ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ - নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাদশা
যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবানন
সুন্নাহর মাঝেই রয়েছে বৈষম্যমুক্ত আদর্শ দেশ গড়ার চাবিকাঠি -মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব চাই