ঢাকা   বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন গল্প পুলিশকে দুর্বল করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র

Daily Inqilab সাখাওয়াত হোসেন

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম


আন্দোলনে গুলি করে লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন কর্মকর্তাসহ পুলিশের শতাধিক সদস্য। এ সব পুলিশ কর্মকর্তারা আড়ালে থেকে নানাভাবে পুলিশ বাহিনীকে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র করছেন। অভিযোগ রয়েছে, নেপথ্যে থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই মোটা অংকের টাকা খরচ করে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঞ্চিত ও ত্যাগী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সাজানো গল্প তৈরি করছেন পুলিশের মনোবল দুর্বল করতে। এদের উদ্দেশ্য পুলিশ বাহিনীর পেশাদার ও ত্যাগি কর্মকর্তারা ভেঙ্গে পড়লে বর্তমান সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিতেও প্রভাব পড়বে। ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনগনের মানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ বাহিনী।
ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের থেকে দু’জন সাবেক আইজিপি এবং সাবেক পুলিশ কমিশনার গ্রেফতার হয়েছেন সুনিদিষ্ট মামলায়। নির্বিচারে গুলি চালানোর সাথে জড়িত ও হুকুমদাতা পুলিশ কর্মকর্তারা এখনও অধরা। রহস্যজনক কারনে ৯৪ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অথচ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৯৭টি। যে সব পুলিশ কর্মকর্তারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে ভঙ্গুর পুলিশ বাহিনীকে পুনগঠনে রাত দিন কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যখন পুলিশের বিদ্রোহ চলছিলো তখন এসব পেশাদার কর্মকর্তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠনে ভ’মিকা রেখেছিলেন।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে ক্যাডার কর্মকর্তা ৩৫৫০জন। এক সময় তা ছিল এক হাজারের কম। বর্তমানে এসপি রয়েছেন প্রায় ৮০০। কিন্তু জেলা রয়েছে ৬৪টি। বর্তমানে পুলিশে ডিআইজির সংখ্যা ১২০জন। রেঞ্জ ও মেট্টোসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা সম্ভব ২০জনকে। অতিরিক্ত আইজিপি পদ রয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে ২২টি পদ গ্রেড-টু। বাকী ১০টি পদ সুপারনিউমারারি। অতএব বঞ্চিত সব কর্মকর্তাদের পছন্দ পদে পদায়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, বিগত সময়ে যে সব পুলিশ কর্মকর্তা অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তারাই এখন নেপথ্যে থেকে পুলিশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। নেপথ্যে থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই মোটা অংকের টাকা খরচ করে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঞ্চিত ও ত্যাগী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সাজানো গল্প তৈরি করছেন পুলিশের মনোবল দুর্বল করতে। এদের উদ্দেশ্য পুলিশ বাহিনীর পেশাদার ও ত্যাগি কর্মকর্তারা ভেঙ্গে পড়লে বর্তমান সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে সকলকে সর্তক থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান ওই কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, পুলিশ সংস্কারের দাবীগুলো যৌক্তিক বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পুলিশের পলাতক শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বিচার এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবী যখন জোরালো হচ্ছে তখন ঐসব পলাতক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সারাদেশের পুলিশ সদস্যদেরকে বিভ্রান্ত করছে। ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব এই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের জনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত না হয়ে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হউক এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
সূত্র জানায়, বিগত সময়ের প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ আছে, কারণ পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করে নাই। কমান্ডিং থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত সবাই অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে পার করেছে। একটা দলের আজ্ঞাবাহ হয়ে কাজ করতে হয়েছে। সবকিছুতে পুলিশ টাকা নিয়েছে বলে একটা দুর্নাম ছিলো। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ নেই। পুলিশে অনেক আবর্জনা আছে। এগুলো দূর করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় ১৬ বছর অব্যাহতভাবে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছিল। আজীবন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার যাবতীয় নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান পুলিশ বাহিনীকে দুর্বল করা একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ। এ বিষয়ে সকলকে সর্তক থাকার পাশাপাশি দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করতে হবে। বিগত সময়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে টেলে দেয়া হয়েছে। দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিকসহ সব মৌলিক মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে, এ জনপদের মানুষের চিরায়ত নীতিনৈতিকতা, মূল্যবোধকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। দেশের টাকা লুটপাট, পাচার ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়ে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত এখনো ভাঙেনি। নানা রূপে নানা রঙ্গে ঢঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে এরা। এদের এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংস্কার আর ষড়যন্ত্র এখন সমান্তরালভাবে চলছে। ষড়যন্ত্র নানারূপে আত্মপ্রকাশ করছে। মিথ্যার চেয়ে অর্ধসত্য আরো বেশি ভয়ঙ্কর। অর্ধসত্য নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে হতাশ ও হতবিহ্বল করার চেষ্টা চলছে অনবরত।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সাবেক এমপি আলতাফ জর্জ ৩ দিনের রিমান্ডে

সাবেক এমপি আলতাফ জর্জ ৩ দিনের রিমান্ডে

পূর্বানুমতি ছাড়া ঢাবি উপাচার্যসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

পূর্বানুমতি ছাড়া ঢাবি উপাচার্যসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পূজা কমিটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভা।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পূজা কমিটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভা।

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপের সুযোগ বিষয়ে খুবিতে সেমিনার

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপের সুযোগ বিষয়ে খুবিতে সেমিনার

দূর্নীতি উৎখাত ও পর্যটক আকর্ষণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে - কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন

দূর্নীতি উৎখাত ও পর্যটক আকর্ষণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে - কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন

হত্যা মামলায় হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিম কারাগারে

হত্যা মামলায় হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিম কারাগারে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমাপ্তির আশ্বাস রাশিয়ার

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমাপ্তির আশ্বাস রাশিয়ার

পিলখানা হত্যাকান্ডে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহালের দাবি

পিলখানা হত্যাকান্ডে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহালের দাবি

অক্টোবরে উদ্বোধন বেনাপোল বন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য

অক্টোবরে উদ্বোধন বেনাপোল বন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভায় ৪ প্রকল্প অনুমোদন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভায় ৪ প্রকল্প অনুমোদন

তারাকান্দায় জনতার হাতে আটক যুবলীগ নেতা ফারুককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ

তারাকান্দায় জনতার হাতে আটক যুবলীগ নেতা ফারুককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ

দুই শিক্ষিকাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা

দুই শিক্ষিকাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা

আওয়ামীলীগের এজেন্ট কাউকে ভিসি হিসেবে চায়না শিক্ষার্থীরা

আওয়ামীলীগের এজেন্ট কাউকে ভিসি হিসেবে চায়না শিক্ষার্থীরা

কলাপাড়ায় শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কলাপাড়ায় শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যৌথ বাহিনীর তল্লাশি, জেব্রা ও হরিণের চামড়া উদ্ধার

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যৌথ বাহিনীর তল্লাশি, জেব্রা ও হরিণের চামড়া উদ্ধার

ফরিদপুরে বাসের হেলপার হত্যায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন

ফরিদপুরে বাসের হেলপার হত্যায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন

সাতক্ষীরায় সুপারি গাছ ভেঙে মাদ্রাসার জমিদাতা নিহত

সাতক্ষীরায় সুপারি গাছ ভেঙে মাদ্রাসার জমিদাতা নিহত

আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল পরিদর্শনে র‌্যাব

আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল পরিদর্শনে র‌্যাব

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা