ঢাবিতে ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চায়- গবেষণা

Daily Inqilab বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ পিএম

 

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে ৮৩.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মতামত দিয়েছে। অন্যদিকে সংস্কাররূপে দলীয় ছাত্ররাজনীতির পক্ষে মতামত দিয়েছে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির কোনো দরকার নেই বলে মতামত দিয়েছে এবং দলীয় ছাত্ররাজনীতির বিকল্প হিসেবে ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ব্যাপারে মন্তব্য প্রদান করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি ও রাজনৈতিক কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত'-শীর্ষক ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটির এক গবেষণা জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনটি।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী সর্বমোট ৯৬% শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন, যার মধ্যে ৭১ শতাংশ খুবই নেতিবাচক প্রভাব ও ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন। এর বিপরীতে ৩শতাং শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন, যার মধ্যে ১শতাংশ খুবই ইতিবাচক প্রভাব ও ২শতাংশ ইতিবাচক প্রভাব বলে মনে করেন। ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও দলীয় ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী শুধুমাত্র ছাত্রসংসদ চান, তবে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চান না বলে মতামত দিয়েছেন। ছাত্ররাজনীতির মূল প্রভাব হিসেবে ৮৭.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্ষমতার অপব্যবহারকে উল্লেখ করেছেন। ৮৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ, ৮৪.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভয়ংকর গেস্টরুম কালচার, ৭৭.২ শতাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা, ৭৪.১ শতাংশ দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ৬৮.৮ শতাংশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থতা, ৬৮.৭ শতাংশ জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাব, ১১.৪ শতাংশ নেতৃত্বে সুযোগ সৃষ্টি, ৪.৬ শতাংশ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং ৪.৫ শতাংশ অন্যান্য প্রভাব উল্লেখ করেছেন।

জরিপের ফলাফলে আরো দেখা যায়, ক্যাম্পাসভিত্তিক বা হলভিত্তিক দলীয় ছাতরাজনীতির কমিটি প্রদানকে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সমর্থন করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের বিপক্ষে মতামত প্রদান করেন ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। দলীয় ছাত্ররাজনীতি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেন ৫৯ শতাংশ এবং সন্তোষজনক মনে করেন ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রকৃত অর্থেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম নয় বলে মনে করেন ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।

রাজনৈতিক কার্যক্রমের ফলে ৭৪% শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে বলে উল্লেখ করেন, অপরদিকে মাত্র ২৬% শিক্ষার্থীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা নেই বলে মতামত প্রকাশ করেন। ৯০% শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না। এই জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৬% শিক্ষার্থী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই (জরিপে অংশগ্রহণকালীন সময়ে) বলে জানিয়েছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেন না। এর কারণ হিসেবে পূর্বের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বিশেষত নির্যাতন ও নিপীড়নজনীত অভিজ্ঞতা (গণরুম ও গেস্টরুম কালচার, টর্চার সেল, জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং এ অংশগ্রহণ করানো ইত্যাদি) উল্লেখ করেছেন। দলীয় ছাত্ররাজনীতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে।যেসকল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেন তারা এর কারণ হিসেবে ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্ব নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জরিপে অংশ নিয়েছেন। যেখানে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৩৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচালিত হয় এই গবেষণা।

গবেষকরা জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ৪টি সুপারিশ প্রদান করেন। সেগুলো হলো- ১। দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। ২। ডাকসু পুনর্জীবিত ও সংস্কার। ৩। শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন। ৫। শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার

সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার

১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন

১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন

’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত

’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত

ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে

ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়

চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি

চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি

দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির

দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির

'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'

'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'

বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়

বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়

তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি

তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ

ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি

ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে

মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ

মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ

গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত

গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত

সিরিয়ায় আসাদ অনুগত কর্মকর্তার জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সিরিয়ায় আসাদ অনুগত কর্মকর্তার জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ

ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ

ইয়েমেনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র-বন্দরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলা

ইয়েমেনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র-বন্দরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলা

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ২১, মানবিক বিপর্যয় চরমে

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ২১, মানবিক বিপর্যয় চরমে

ফেনীর মহিপালে এক শিশুসহ ৭ রোহিঙ্গাকে আটক

ফেনীর মহিপালে এক শিশুসহ ৭ রোহিঙ্গাকে আটক