রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
রাজধানীতে দুঃসহ যানজট। সারাদেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট। দেশের প্রধান এই দুই সমস্যার নেপথ্যে প্রায় ৫৫ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ব্যাটারির মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে এসব যানের ব্যাটারি কয়েক ঘণ্টা পরপর চার্জ দিতে হয়। হাসিনা সরকারের আমলে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে সব যানের চার্জিং ব্যবসা করতো আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা। বর্তমানে তাদের অধিকাংশ পলাতক থাকলেও ব্যবসা চলছে আগের মতোই। ৫৫ লাখ অবৈধ যান প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে। এর মধ্যে ৫০০ ওয়াটের টাকাও বিদ্যুৎ বিভাগ পাচ্ছে না।
হাসিনা সরকারের আমলে অবৈধ এসব যান চলাচল নিষিদ্ধের জোড়ালো দাবি উঠলেও সরকার রাজনৈতিক কারণে এগুলো বন্ধ না করে অবাধে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। এসব যান নিষিদ্ধ করার দাবিতে সবচেয়ে বেশি সরব ছিল সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। সেই সময় আন্দোলনরত শ্রমিক ইউনিয়নের একজন নেতা জানান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে একবার সভা ডেকেছিলেন। সেই সভায় তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে বিদ্যুত চুরির বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
তখন সভায় উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী চৌধুরী ওই নেতাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে আপনার এত ভাবনা কেন? বিদ্যুৎ আমি দেবো। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন সেদিনের কথা স্মরণ করে বলেন, মূলত তারা বিদ্যুৎ চুরিসহ উল্টাপাল্টা পলিসি নিয়ে রাষ্ট্রের চরম ক্ষতি করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের প্রকল্প নিয়ে দেশকে ফতুর করেছেন। যেটা এখন সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যানজটে স্থবির রাজধানী ঢাকা। অলিগলিসহ ভিআইপি রাস্তাগুলোতে যানবাহন আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর কারণ নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক অবাধে চলছে রাজধানীর ভিআইপি সড়কসহ সকল সড়কে। এগুলোর ভিড়ে যানবাহনের চাপ এতটাই বেড়েছে যে কোন গাড়িই আর ঠিকমতো চলতে পারছে না। বাস, সিএনজি অটোরিকশা মালিক শ্রমিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে এখন কমপক্ষে ৫ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রবেশ করেছে। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রবেশ করেছে আরও কমপক্ষে এক লাখ ইজিবাইক। ঢাকায় মোটরসাইকেল চলাচল করছে প্রায় ১২ লাখ।
এর সাথে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ২৫ লাখ যানবাহন তো আছেই। সব মিলে ঢাকার রাস্তা এখন যানবাহনের দখলে। এতে করে স্বাভাবিক নিয়মেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকায় যে চার হাজার ট্রাফিক পুলিশ আছে, তারা মূলত নিস্ক্রিয়। এ কারণে দিনের শুরুতে একবার যানজট সৃষ্টি হলে তা ক্রমে বাড়তে বাড়তে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, প্রতিটি রিকশা গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটোবাইক ও রিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয়। সবগুলোতেই ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। ফলে প্রতিদিন উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার ইজিবাইক। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। তার মানে এসব যান নিয়ন্ত্রণ করা গেলে উৎপাদিত বিদ্যুত দিয়েই সারাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে ৫৫ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং তিন চাকার ইজিবাইক চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। কিন্তু এর বেশির ভাগ বিদ্যুৎ গ্যারেজ মালিকরা অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন বলেন, ৫৫ লাখের কম-বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। যদিও এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আর সরকারও এর সঠিক পরিসংখ্যান দিচ্ছে না। এগুলো শুধু বিদ্যুৎ খরচ করছে না, এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক সড়ক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। একই সঙ্গে সড়কে যানজটের সৃষ্টি করছে। এসব যানের ব্রেক ও সাসপেনশন সিস্টেম মোটেও ভালো নয়। যাত্রীর তুলনায় হালকা হওয়ায় এগুলো সহসাই উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। সরকারের উচিত মফস্বলে এগুলো রেশনিং সিস্টেমে চলাচলের ব্যবস্থা করা। আর দীর্ঘমেয়াদী সুরাহার জন্য বিকল্প উন্নতমানের যানবাহন আমদানি করে যারা এসব যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। সেই সাথে রাজধানীতে এসব যান চলাচল একেবারে নিষিদ্ধ করা।
জানা যায়, ২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। এরপর ২০১৭ সালে এসব পরিবহন বন্ধে আরেক দফা নির্দেশনা আসে হাই কোর্টের। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর অটোরিকশা বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধ করে আবারও নির্দেশনা দেন হাই কোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ২০ জুন এসব রিকশা-ভ্যান বন্ধের নির্দেশ দেন। বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশনও এগুলো বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এসবের সংখ্যা না কমে বরং বাড়তে থাকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু রাজধানী নয়; দেশের জেলা, উপজেলা, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় চলছে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার ইজিবাইক।
এ অবৈধ বাহনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। সারা দেশে জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম প্রধান কারণ নিষিদ্ধ ইজিবাইক বা অটোরিকশা। দেশের ৯০ শতাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনাও। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কোনো সংস্থা।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার
১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন
’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত
ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়
চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি
দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির
'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'
বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়
তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ
ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি
লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে
মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ
গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত
সিরিয়ায় আসাদ অনুগত কর্মকর্তার জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ
ইয়েমেনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র-বন্দরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলা
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ২১, মানবিক বিপর্যয় চরমে
ফেনীর মহিপালে এক শিশুসহ ৭ রোহিঙ্গাকে আটক