ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

আবরার ফাহাদ এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর- মাহমুদুর রহমান

Daily Inqilab বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম

 

 

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া শহীদ আবরার ফাহাদকে এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর আখ্যা দিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
শহীদ আবরার ফাহাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষীকি উপলক্ষে আজ সোমবার (০৭ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ পলাশীর মোড়ে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত এক স্মরণসভায় এমন মন্তব্য করেন মাহমুদুর রহমান।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে আমাদের যে সংগ্রাম চলছে, শহীদ আবরার ফাহাদের শহীদ হওয়ার ঘটনা এই সংগ্রামের টার্নিং পয়েন্ট। আমরা শহীদ আবরার ফাহাদকে আগামী শত বছর পরেও স্মরণ করতে চাই যে তিনি একজন অসামান্য সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। আবরার ফাহাদ এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সাতটি দাবী জানিয়েছিলাম, যার অন্যতম দাবি ছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে শহিদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ করা। কারণ শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনে বিরুদ্ধে আগ্রাসন বিরোধী প্রতীক। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি আবারো দাবি জানাচ্ছি, আপনি অনতিবিলম্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম আবরার ফাহাদ নামে নামকরণ করুন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের চিত্র স্মৃতিচারণ করে তৎকালীন বুয়েটের ছাত্র মাহমুদুর রহমান বলেন, সেদিন ঢাকার মানুষের যেই আনন্দ আমি দেখেছি তা এখনো আমার চোখে ভাসে। বাংলাদেশের এমন কোন মিষ্টির দোকান ছিল না যেখানে মিষ্টি বাকি ছিল।

তিনি বলেন, এখন আমাদের একটা বিরাট সুযোগ এসেছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার। আমাদের যে তরুণ সমাজ লড়াই করছে তারা তাদের সংগ্রামের প্রথম রাতে জয়লাভ করেছে। আর তা হল শেখ হাসিনার পতন। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনো জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সাথে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে। আমি এই তরুণদের সাথে থেকে এবারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপ্লবী সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, আপনারা বিপ্লবকে ধারণ করুন, বিপ্লবী সরকার হোন; বিপ্লবী সরকার হয়ে রাষ্ট্র পরিচলানা করুন। জনগনের চাহিদা অনুযায়ী একটা সংবিধান রচনা করুন। ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে আপনি অনতিবিলম্বে আপনার সরকারকে বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করুন এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করুন। অতঃপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করো একটি নতুন জনগণের সংবিধান রচনা করুন।

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যে গণরুম, গেস্টরুম কালচার ছিল তা ছিল একেকজন আবরার ফাহাদকে নির্মম নির্যাতনের প্রতীক। আমরা হলে সিট পেয়েছি চতুর্থ বর্ষে উঠে। অথচ ছাত্রলীগের আদু ভাইয়েরা ৯ থেকে ১০ বছর করে একেক জন সিঙ্গেল রুমে ছিল। যেখানে চারজনের রুমে আমাদেরকে ৪০ জন থাকতে হয়েছে সেখানে তারা একাই ছিল। গণরুম গেস্টরুমের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের এমনকি কোনো কোনো দিন কেটেছে যে ফজরের আযানের সময়ও গেস্টরুম চলেছে। সুতরাং অতীতের সেই অপশাসন, অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতি যেন ফিরে না আসে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

আন্দোলনের আরেক অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গত ১৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে যে নির্যাতনের খড়ক চালিয়েছে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী বাহিনী আজকে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যখন একজন শিক্ষার্থীকে শিবির সিদ্ধান্তে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতন জায়েজ মনে করা হয়েছে তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? গত ১৬ বছর ধরে আমাদের মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছে, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? আজকে তারা কি প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে যে তাদেরকে মাফ করে দেওয়া হবে! আমরা বলতে চাই, গত ১৬ বছর ধরে আমাদের উপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে, এবং যেই প্রশাসন ছাত্রলীগের এসব নির্যাতনে প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও চার্জশিট আনতে হবে।

ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও আগ্রাসন বিরোধী প্রতীক। তার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দুটি জিনিস স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। তার একটি হলো আওয়ামী লীগের নির্যাতন অন্যটি হল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম।

৭২ এর সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, যেই সংবিধান গত দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে সেই সংবিধান এখনো কিভাবে বহাল থাকে? কিভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর প্রেসিডেন্ট এখনও বহাল থাকে? কিভাবে সেই বিচারকরাই এখনো রায় দিচ্ছে যাদের রায়ে আমাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে? গত ১৫ বছরের ন্যায় ৫৩ বছর যেই সংবিধান আমাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি নতুন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের এই স্পিরিটকে ধারণ করে সেই সংবিধানকে নতুন করে লিখতে হবে।

 

সভাপতির বক্তব্যে ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসন বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, আবরার ফাহাদ একক কোন ব্যক্তি নয়, কোটি কোটি বাংলাদেশীর স্বাধীনতার প্রতীক। আজ তার শাহাদাতের ৫ বছর হয়ে গেছে। সেদিন যখন আমরা তার মৃত্যুর সংবাদ শুনেছিলাম তখন একটা মিছিলও করতে পারিনি। ২০২০ সালে তার স্মরণে ৮টি স্তম্ভ করেছিলাম, তখন ছিলাম আমরা গুটিকয়েক। কিন্তু আজকে প্রমাণ হয়েছে আমরা গুটিকয়েক নয়, হাজার হাজার। তিনি বলেন বাংলাদেশের মানুষ কোন দেশের আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দিতে পারে না। ভারতের মানুষের সাথে আমাদের কোন বহির্বিতা নেই, আমাদের বইয়ের আধিপত্যের নীতির বিরুদ্ধে।

স্মরণসভা শেষে পলাশী মোড়ে শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে ৮ ফলক বিশিষ্ট স্তম্ভের পুননির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্যরা। এসময় আবরার ফাহাদের বাবা, ছোটভাই সহ আরো বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য রাখেন। আবরার ফাহাদের বাবা জনাব বরকত উল্লাহ বলেন, আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনও হত্যার বিচার পাইনি। যে আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা যেন যেকোনো বাধাবিপত্তিতেও টিকে থাকে।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বরিশালে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভা

বরিশালে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভা

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত

রাখাইনে জান্তাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহত অন্তত ৪০

রাখাইনে জান্তাবাহিনীর বিমান হামলায় নিহত অন্তত ৪০

মির্জাপুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

মির্জাপুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

শিশুদের সৃজনশীলতার নতুন দ্বার উন্মোচনে ভিভো ও এসওএস-এর যৌথ উদ্যোগ

শিশুদের সৃজনশীলতার নতুন দ্বার উন্মোচনে ভিভো ও এসওএস-এর যৌথ উদ্যোগ

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম সাধারণ সম্পাদক দবিরুল

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম সাধারণ সম্পাদক দবিরুল

বিডিআর বিদ্রোহ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৯ জানুয়ারি

বিডিআর বিদ্রোহ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৯ জানুয়ারি

সাতটি নির্ভরযোগ্য শেয়ারের তালিকায় বিএটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক ও জিপি: এসএসএল

সাতটি নির্ভরযোগ্য শেয়ারের তালিকায় বিএটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক ও জিপি: এসএসএল

ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন-বানোয়াট: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন-বানোয়াট: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সেবাদাস হাসিনার পলায়নে সীমান্তে শক্তিশালী বাংলাদেশ দেখছে ভারত

সেবাদাস হাসিনার পলায়নে সীমান্তে শক্তিশালী বাংলাদেশ দেখছে ভারত

শ্রীপুরে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শীতার্তদের কম্বল বিতরণ

শ্রীপুরে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শীতার্তদের কম্বল বিতরণ

সাবেক মন্ত্রী মুজিবুলসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী মুজিবুলসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সিলেটে শেখ মুজিবের ম্যুরাল অপসারণে ৩ দিনের আল্টিমেটাম

সিলেটে শেখ মুজিবের ম্যুরাল অপসারণে ৩ দিনের আল্টিমেটাম

ডিএনসির ‘হাত-পা বাঁধা’ থাকায় মাদক সাম্রাজ্য চালিয়েছেন বদি

ডিএনসির ‘হাত-পা বাঁধা’ থাকায় মাদক সাম্রাজ্য চালিয়েছেন বদি

মৌলভীবাজারে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে ১ হাজার কম্বল বিতরণ

মৌলভীবাজারে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে ১ হাজার কম্বল বিতরণ

বিপিএলের মাধ্যমে তারুণ্যের উৎসব গতি পেয়েছে: ফাহিম

বিপিএলের মাধ্যমে তারুণ্যের উৎসব গতি পেয়েছে: ফাহিম

শমী কায়সারের ব্যবসায়িক তথ্য তলব

শমী কায়সারের ব্যবসায়িক তথ্য তলব

লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও বিদ্যানন্দের ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন খেয়া’

লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও বিদ্যানন্দের ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন খেয়া’

সৈয়দপুরে ইটভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল

সৈয়দপুরে ইটভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল

আগামীর নির্বাচন হবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের: জোনায়েদ সাকি

আগামীর নির্বাচন হবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের: জোনায়েদ সাকি