ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের দাবীতে ঢাকা মহানগরবাসীর গণ-সমাবেশ

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা

২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

 

 

রাজধানীর রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের দাবীতে গণ-সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগরবাসী। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ ফালইয়াফরাহু চত্বরে এই গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর অধিবাসী’র ব্যানারে আগত বক্তাগণ নিধনের মাধ্যমে দ্রুত কুকুর সমস্যার সমাধান চান। এতে সহস্রাধিক নগরবাসী অংশ নেন।

সমাবেশ তারা বলেন, বর্তমানে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি অলি-গলিতে ২৫-৩০টি কুকুর পাল বেধে বিচরণ করে এবং প্রায়শঃ পথচারীদের উপর আক্রমণ করে। কুকুরের কামড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আহত হচ্ছে এবং তাদের র‌্যাবিস (পানিআতঙ্ক) রোগের টিকা নিতে হয়েছে। কুকুরের কামড়ে দরিদ্র অধিবাসীরা আহত হলে তাদের চিকিৎসা ব্যয় মেটানোও কষ্টসাধ্য বিষয়। কুকুরের যন্ত্রনায় রাতে নাইটগার্ডদের ডিউটি কষ্টসাধ্য হয়ে হচ্ছে।

বেওয়ারিশ কুকুরগুলো দিনের বেলায় ঘুমিয়ে থাকলেও সন্ধ্যার পর ভয়ঙ্কর সক্রিয় হয়ে উঠে। রাতে প্রচণ্ড চিৎকার চেচামেচিতে বাসায় শিশুরা শারীরিকভাবে নিরাপদ বোধ করলেও, মানসিকভাবে তাঁরা ভয়ে আতঙ্কিত থাকেন ও বৃদ্ধ মানুষের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। এছাড়া কুকুর নোংরা আবর্জনা মুখে করে নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেয়ে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর করে। বিশেষ করে কুকুর রাস্তাঘাট ছাড়াও অনেক বাড়ির গেটের ভেতরে ঢুকে মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন করে। টিনশেড বাড়িসমূহের ছাদে কুকুরের দল দেখা যায়। এছাড়া ভোর বেলায় মসজিদে আগত মুসল্লী ও স্কুলগামী ছোট ছোট বাচ্চাদের উপর কুকুরের আক্রমণ নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

সমাবেশে আগত বক্তাগণ বলেন, অনেকে বন্ধ্যাকরণ ও ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বেওয়ারিশ কুকুর সমস্যার সমাধান দাবী করে। কিন্তু ব্যয়বহুল বন্ধ্যাকরণে কুকুরের প্রজনন বন্ধ হবে, কিন্তু কুকুরের বিভিন্ন উপদ্রব যেমন-পথচারি ও শিশুদের কামড়ানো বা ধাওয়া দেয়া কিংবা চিৎকার চেচামেচি বন্ধ হবে না। বরং বন্ধ্যাকরণ করলে হরমোনাল ইমব্যালান্সের দরুণ কুকুর আচরণ পরিবর্তন হয়ে কুকুর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে কিংবা স্বরণশক্তি লোপ পেয়ে মানুষকে আক্রমণ করে, যা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়।

সমাবেশে আগত বক্তাগণ আরো বলেন, কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করলে প্রাণীটির ক্যান্সার, ডায়বেটিস, থাইরডেট সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ধিরে ধিরে রোগে ভুগে করুণ মৃত্যুতে পতিত হয়, যা খুবই অমানবিক। সে দিক বিবেচনায় বেওয়ারিশ কুকুরকে চেতনানাশক ইনজেকশন (ইউথেনেশিয়া) দিয়ে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো অনেক বেশি মানবিক, সহজ ও স্বল্পব্যয় হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেই এ পদ্ধতিতে কুকুরের জনসংখ্যা হ্রাস করা হয়। এছাড়া কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়ে শুধুমাত্র র‌্যাবিস (পানি-আতঙ্ক) রোগ দমন করা হয়। কিন্তু কুকুরের দ্বারা মানুষের শরীরে প্রায় ৩০০ ধরনের রোগ (zoonotic diseases) ছড়ায়। ভ্যাকসিন দিয়ে শুধুমাত্র ১টি রোগ (র‌্যাবিস) সারলেও ২৯৯টি রোগ সারবে না।

সমাবেশে আগত বক্তাগণ আরো বলেন, কুকুরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়াও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ কুকুরকে এক এলাকা থেকে সরিয়ে অন্য এলাকায় নিলে, সে অন্য এলাকায় গিয়েও মানুষকে বিরক্ত করবে এবং ঐ এলাকার কুকুরের সাথে দ্বন্দ্ব ঘটিয়ে ঝামেলা তৈরী করবে, যা ঐ এলাকার মানুষের জন্য কষ্টের কারণ। তাই সবকিছু বিবেচনায় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করে কুকুরের সমস্যার সমাধান করা অনেক বেশি যৌক্তিক ও মানবিক হয়, যা ভ্যাকসিনের ও বন্ধ্যাকরণের মত ব্যয়বহুল পদ্ধতির মাধ্যমে কখনই সম্ভব নয়।

আমরা জানি, কিছু কুকুরপ্রেমী এনজিও ২০১৪ সালে কুকুর নিধন বন্ধে রিট আবেদন করে এবং মাত্র ৪ সপ্তাহের জন্য কুকুর নিধন বন্ধে স্থগিতাদেশ পায়, যে সময় ইতিমধ্যে গত হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে প্রাণী কল্যাণ আইন পাস হয়, যার ৭ম ধারায় সাধারণভাবে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন নিষেধ করা হলেও ৬/৪/খ ধারায় মানুষের উপকারের জন্য কুকুর নিধনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর তৃতীয় তফসিল, পঞ্চম তফসিল ও সপ্তম তফসিলের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং জনগণের উপকারের জন্য রাষ্ট্রীয় আইন অনুয়ায়ী কুকুর নিধনের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

এরপরও কিছু লোক যদি কুকুরপ্রেম দেখাতেই চায়, তবে তারা যেন বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে সিটি কর্পোরেশন থেকে রেজিস্টি করে নিজ বাড়িতে রাখে। জনগণকে কষ্ট দিয়ে কুকুরপ্রেমীদের কুকুরপ্রেম কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর আমরা সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স দিয়ে এলাকায় বসবাস করি। রাস্তায় চলাচলে যাবতীয় নিরাপত্তা পাওয়া আমাদের অধিকার। রাস্তার কুকুরের কারণে যদি আমাদের চলাচলে সমস্যা হয়, তবে রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব কুকুর নিধন করে আমাদের সুসাস্থ্যকর ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা।

সমাবেশ বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক রাষ্ট্রদ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আর পবিত্র দ্বীন ইসলামে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী শরীফে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং বাংলাদেশে কুকুর নিধনে আর কোন প্রকার বাধা থাকার কথা নয়।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মানবাধিকার বিষয়ক আইন নিয়ে র‍‍্যাবের সেমিনার

মানবাধিকার বিষয়ক আইন নিয়ে র‍‍্যাবের সেমিনার

কোটা পূরণে হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করুন

কোটা পূরণে হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করুন

আইপিএলের দশ দলের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড (দামসহ)

আইপিএলের দশ দলের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড (দামসহ)

আতঙ্ক নয়, পুলিশ হবে জনগণের শেষ ভরসাস্থল -  জিএমপি পুলিশ কমিশনার

আতঙ্ক নয়, পুলিশ হবে জনগণের শেষ ভরসাস্থল - জিএমপি পুলিশ কমিশনার

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে কি না জানা যাবে কাল

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে কি না জানা যাবে কাল

আতিফের কনসার্টে সাইবার হামলা,আটক হয়েছে অপরাধী

আতিফের কনসার্টে সাইবার হামলা,আটক হয়েছে অপরাধী

চট্টগ্রামে মসজিদে ইসকন সমর্থকদের হামলা-ভাঙচুর

চট্টগ্রামে মসজিদে ইসকন সমর্থকদের হামলা-ভাঙচুর

বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়া ১৬ গ্রেপ্তার

বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়া ১৬ গ্রেপ্তার

তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক

তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক

ইসকন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বিদেশের হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করছে

ইসকন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বিদেশের হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করছে

ইসকনের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইসকনের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ

মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি সিলেটের তাফসিরুল কুরআন মহাসম্মেলন আগামী শনিবার

মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি সিলেটের তাফসিরুল কুরআন মহাসম্মেলন আগামী শনিবার

ভালো নিয়ত থাকলে, ভালো কিছু করতে পারব আমরা- সিলেটে তারেক রহমান

ভালো নিয়ত থাকলে, ভালো কিছু করতে পারব আমরা- সিলেটে তারেক রহমান

ডেঙ্গুতে আরও ১০ মৃত্যু, শনাক্ত ৯৯০

ডেঙ্গুতে আরও ১০ মৃত্যু, শনাক্ত ৯৯০

সংস্কার করতে করতে আসল বিষয় যেন হারিয়ে না যায় - গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

সংস্কার করতে করতে আসল বিষয় যেন হারিয়ে না যায় - গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

চিন্ময়ের মুক্তির দাবীতে সিলেট সনাতনীতের কর্মসূচী : নৈপথ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তৎপরতা

চিন্ময়ের মুক্তির দাবীতে সিলেট সনাতনীতের কর্মসূচী : নৈপথ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তৎপরতা

কোনো উসকানিতে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানালেন উপদেষ্টা আসিফ

কোনো উসকানিতে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানালেন উপদেষ্টা আসিফ

পাকিস্তানে সংঘর্ষ, ৪ নিরাপত্তা সদস্যসহ নিহত ৫

পাকিস্তানে সংঘর্ষ, ৪ নিরাপত্তা সদস্যসহ নিহত ৫

আদানির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিহার বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ

আদানির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিহার বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ