আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমের প্রতি বাংলাদেশি অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ পিএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ পিএম
সন্তানদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে দেশের অভিভাবকদের মনে প্রায়শই একটি প্রশ্নের উদয় হয়; তা হল: সামাজিক মূল্যবোধ বজায় রেখে কীভাবে সন্তানদের ভবিষ্যৎ উপযোগী শিক্ষাদান করা যায়? বিদেশি পাঠক্রম কী আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্বারোপ করে? শিক্ষক হিসেবে আমাকে প্রায়ই অভিভাবকদের এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন পরিচালিত ‘দ্য এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট ২০২৩’-এ উঠে এসেছে, বাংলাদেশের অভিভাবকরা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চাইছেন যেখানে শ্রেণিকক্ষগুলোর ওপর বিশেষ জোর দেয়া হবে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে উপযুক্ত করে তোলা হবে, সংযুক্ত বিশ্বের উপযোগী করে শিশুদের প্রস্তুত করা হবে, যেনো তারা সফলভাবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে পারে। অভিভাবকদের এ প্রত্যাশার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালরিয়েট (আইবি) শিক্ষাক্রমের জনপ্রিয়তা। উল্লেখ্য, এ শিক্ষাক্রমে জীবনমুখী শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সচেতনতা ও ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়।
স্কুল ও পরিবারগুলোয় এমন ধারণা বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে বোঝা যায় যে, তারা সব পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে পারবে এমন নেতৃত্ব, সামাজিকভাবে সচেতন নাগরিক ও ক্রিটিক্যাল থিংকার্স গড়ে তুলতে চান। বাংলাদেশের আগামী দিনের শিক্ষার চাহিদার সাথে এ ধরনের লক্ষ্যের মিল দেখা যায়।
অর্থনৈতিকভাবে বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের জন্য বৈশ্বিক সুযোগ তৈরি করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনের চাহিদাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যারিয়ায়ের জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমকে বেছে নিতে চাইছেন। এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত নতুন শিক্ষাক্রম, বিশেষ করে বৈশ্বিক শিক্ষাক্রম শিশুদের জন্য জীবনমুখী দক্ষতার শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি এবং আবেগগত ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি (ইমোশনাল অ্যান্ড সোশ্যাল গ্রোথ) নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে, পাশাপাশি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়িয়ে তোলে।
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষা কীভাবে আমাদের প্রথাগত অ্যাকাডেমিক অর্জনের ধারণার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। আইবি কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) শিশুদের মাঝে ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে, পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শিক্ষাক্রমটিতে প্রাইমারি ইয়ারস প্রোগ্রাম (পিওয়াইপি), মিডল ইয়ারস প্রোগ্রাম (এমওয়াইপি) ও ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম (ডিপি) - এই তিনটি প্রোগ্রাম রয়েছে। ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রোগ্রামেই আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া ও জানার আগ্রহ তৈরির প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়।
বেশিরভাগ শিক্ষাক্রমের মতোই আইবি’তে বাস্তব বিশ্বের উপযোগী ও জিজ্ঞাসা-ভিত্তিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একইসাথে, শিক্ষার্থীদের জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা এবং সর্বব্যাপী বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করতে ভূমিকা রাখছে এই শিক্ষাক্রম।
বিশ্লেষণমুখী গবেষনা দক্ষতার জন্য বৈশ্বিকভাবে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরিদাতাদের মাঝে আইবি গ্র্যাজুয়েটদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০ বছর আগে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র স্কুলে আইবি শিক্ষাক্রমের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে, দেশের ১১টি স্কুলে এক বা একাধিক আইবি প্রোগ্রাম পড়ানো হয়। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার ক্ষেত্রে বলা চলে, আমরা আইবি শিক্ষাক্রমের আন্তর্জাতিক মানদ- ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে সবচেয়ে সফলভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি। ফলে, আমাদের গ্র্যাজুয়েটরাও সামাজিকভাবে সচেতন ও সব বিষয়ে পারদর্শী হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।
বলা চলে, শিক্ষার্থীদের সব পরিবেশে মানিয়ে চলার উপযোগী করে তৈরি করার লক্ষ্যই আইবি শিক্ষাক্রমের মূল সক্ষমতা। এতে করে স্কুলগুলো শিক্ষাক্রমের আন্তর্জাতিক আবহ ঠিক রেখেও মূল্যবোধ ও ভাষার মতো স্থানীয় সংস্কৃতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুলগুলোর আইবি শিক্ষাক্রমে বাংলা ভাষার সাথে যুক্ত হয় কমিউনিটি সার্ভিস (স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ); ফলে, শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এই মূল্যবোধ ও ভাষার মিশ্রণের সাথে যুক্ত হয় বিশ্বকে দেখার নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি; ফলে, শিক্ষার্থীদের মাঝে সমতার অনুভুতি গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশি সমাজ ও বৈশ্বিক পরিসর, দুই ক্ষেত্রেই সক্রিয় সহযোগী হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পায়। শিক্ষাক্রমের সফল প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সামাজিকভাবে সংযুক্ত থাকা। এতে করে একদিকে যেমন শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা যায়, তেমনি কমিউনিটি-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়।
শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট পুনর্গঠন করে দেশের জন্য অনন্য সুযোগ তৈরি এবং আগামী প্রজন্মের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন করা জরুরি। বাংলাদেশে আইবি বা এ ধরনের আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক সাফল্য অর্জন করতে পারবে, আবার ক্রমশ বদলে যেতে থাকা পরিস্থিতির সাথেও নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে।
ক্স বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক শিক্ষিকা (এমওয়াইপি এবং ডিপি), বিভাগীয় প্রধান - বাংলা (কে-১২), ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি)
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অবৈধ শিসা তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর
সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন , বন্ধ দাপ্তরিক কাজ
স্থানীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা আজ স্বাবলম্বি
মনোহরগঞ্জে দারুল উলূম বান্দুয়াইন মাদরাসার বার্ষিক মাহফিললে-আল্লামা মামুনুল হক
ঈশ্বরগঞ্জে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মানববন্ধন
আ'লীগ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে- মির্জাগঞ্জে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বুমরাহকে অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড উপহার দেওয়া কনস্টাসের দিন
সাভারে বন্ধ থাকা টিএমআর কারখানা চালু করার নির্দেশনা উপদেষ্টার
ঐশ্বরিয়ার লেহেঙ্গা অস্কারের জাদুঘরে
কক্সবাজারে ছাত্রদল নেতা রাফির মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ, যানবাহন ভাঙচুর ও রাস্তা ব্লক
কুড়িগ্রামে দেখা মিলেছে বিপন্ন প্রজাতির শকুনের
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন নিহত
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেলে দায়ী করা হবে: ফজলুর রহমান
সচিবালয়ে লাগা আগুনের কারণ খুঁজতে কমিটি গঠন
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নতুন বছরে চোখধাঁধানো সিনেমায় হলিউডের সাজ
সচিবালয়ে আগুন : হুঁশিয়ারি সারজিস আলমের
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলা পুড়ে ছাই
মানবিক-আদর্শিক-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে- শিক্ষক সমাজের ৫ দফা দাবি
সফর স্থগিত করে ঢাকা ফিরলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ