আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলা
১৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৩১ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২২ পিএম
উচ্চহারে গৃহকর আদায় বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার মধ্যে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ইট-পাটকেল নিক্ষেপে পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। গতকাল বুধবার নগরীর টাইগারপাসে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকে নগর ভবনের ফটকে তালা মেরে দেওয়া হয়। এতে সেবাপ্রার্থীরা পড়েন বিপাকে। করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তারাও নগরভবনে ঢুকতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। একই সময়ে সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচি ঠেকাতে মেয়রের পক্ষের লোকজন নগরভবনের আশপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরে তুলকালাম কাÐ ঘটে নগরভবন ও এর আশপাশের এলাকায়।
‘গলাকাটা’ গৃহকর বাতিলের দাবিতে দুপুর ১২টার দিকে সুরক্ষা পরিষদের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে আসেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিলটি নগরভবনের দিকে এগিয়ে যেতেই পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের বাকবিতÐা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ঠিক এ সময় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ একদল যুবক পাল্টা সেøাগান দিয়ে সুরক্ষা পরিষদের সমাবেশে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় বেশ কয়েকজনের মাথা ফেটে যায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ছাত্রলীগের কর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারা চলে যাওয়ার সময় সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে সেøাগান দেয়। সুরক্ষা পরিষদের মিছিল টাইগারপাসে আটকে দিয়ে সেখান থেকে চার নেতাকে নগর ভবনে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। তারা মেয়রের সাথে দেখা করে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নোবেল চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, নগর ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিষদকে নগরভবনে যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যখানে অবস্থান নেয়।
এর আগে বেলা ১১টা ২০মিনিটের দিকে নগরীর কদমতলীর আবুল খায়ের মার্কেট চত্বর থেকে মিছিল বের করে পরিষদ। মিছিলটি কদমতলী মোড়, দেওয়ানহাট হয়ে দুপুর ১২টার দিকে টাইগারপাস মোড়ে আসে। করদাতা সুরক্ষা পরিষদ অতিরিক্ত গৃহকর আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল। সুরক্ষা পরিষদের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি কদমতলীর সমাবেশ থেকে নগরভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি বহাল থাকার কথা জানান সংগঠনের এই নেতারা। নেতারা বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় দীর্ঘদিন আন্দোলন করার পরও সিটি মেয়র দাবির প্রতি কর্ণপাত না করায় বাধ্য হয়ে তারা নগরভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
এদিকে কর্মসূচিকে ঘিরে নগরভবনের প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও অফিসে ঢুকতে পারেননি। তাদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে। করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচির কারণে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অফিস শুরুর সময় সকাল ৯টা। এখন থেকে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে হাজির থাকতে হবে। আজ থেকে এই নিয়ম কার্যকর করতে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদ মাহমুদ বলেন, কর নির্ধারণে সিটি কর্পোরেশনের ভ‚মিকা নেই। আইন অনুযায়ী সাত বছর আগে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শুরুতে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময় ২০১৭ সালে কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছিল। পুনর্মূল্যায়নের পর নগরীর বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পুরোনো নিয়মে তা ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নতুন কর পুনর্মূল্যায়নের পর সরকারি খাতের করদাতা প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৪৭টি। এর বিপরীতে বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ২৮০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৭০০। বিপরীতে বার্ষিক কর ধরা হয় ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
স্থাপনার আয়তনের পরিবর্তে ভাড়ার ভিত্তিতে এই কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এর বিরুদ্ধে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন তখন আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে এই কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম আর বাস্তবায়িত হয়নি। তখন এর বিরুদ্ধে মাঠে নামেন সাবেক মেয়র মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গত ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত জুলাই থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন। এখন তা আদায়ের কার্যক্রম চলছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজন ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা;আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ