বিএনপিকে ভোট চুরির ‘মহারাজা’ হিসেবে অবিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মির্জা ফখরুল সাহেব, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার কারা করেছে? ভোট চুরির অপবাদ আওয়ামী লীগকে দেবেন না। ভোট চুরির মহারাজা বিএনপি।

গতকাল বুধবার ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টে ভোট চুরি করে ধরা খেয়ে বিএনপি জঙ্গি সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে বিএনপিপন্থি নেতারা হাইকোর্ট নির্বাচনে ভোট চুরি করছে। এবার হাইকোর্টে হামলা করতে চার শ সন্ত্রাসী পাঠিয়েছে বিএনপি। এরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী।

ওবায়দুুল কাদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে এক নেতা ব্যালট চুরি করতে গেছেন। ব্যালট চুরি করে নির্বাচনে জিতবে, এ জন্য সকালে আদালতে হামলা করেছে। ভোটকে পÐ করতে বার বার আদালতে হামলা করছেন। মির্জা ফখরুল সাহেব, আপনারা ধরা পড়ে গেছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন, নির্বাচন খুব দূরের বিষয় নয়। নির্বাচন আমাদের মূল বিষয়। নির্বাচন ঠেকাতে অনেকে কার্যক্রমে আছে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেছেন নির্বাচনে খারাপ কিছু ঘটলে আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে। তার মানে বিএনপি খারাপ কিছু করতে চায়। তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র করেছে। হেরে যাওয়ার ভয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। নির্বাচনে খারাপ কিছু ঘটানোর ভয় দেখি লাভ নেই। এটা ২০১৩-১৪ নয়, জনগণ ভয় পায় না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আজকে বাংলাদেশের এমন কোনো ঐক্যবদ্ধ দল নেই, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, আজ হাইকোর্টে কী হচ্ছে। দেশের মানুষ এতো বোকা নয়, মানুষ এখন বুঝে গেছে। ভোট চুরির অপবাদ আওয়ামী লীগকে দেবেন না। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে না, ভোট চোরের রাজা হলো বিএনপি। গতকাল বিএনপিপন্থি এক নেতা ভোটের ব্যালট চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। গত ১০ বছর ধরে বিএনপি এই ভোট চুরির কাজটি করছে।

বিএনপি দেশের মধ্যে আবারও আগুন সন্ত্রাস করার পাঁয়তারা করছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বরং তারা ২০১৩ ও ১৪ সালের মতো পরিস্থিতি করতে চায়। এজন্য তাদের মধ্যে ভেতরে ভেতরে কিছু আলোচনা হচ্ছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। বিএনপি আবার আগুন সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব করতে চায়। শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জন মানুষের মন কাড়ছে। এজন্য বিএনপি চোরাগলি দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সারাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, তাই এমন কোনো শক্তি নেই যে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ হারাতে পারে। এজন্য দলের সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান ।

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ধারাতে পারে না। আবারও নতুন করে শেখ হাসিনাকে হটানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এজন্য সকলে সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপিকে হুঁশিয়ারি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগুন নিয়ে খেলবেন না, তাহলে এই আগুনে নিজেরাই জ্বলে পুড়ে মরবেন। এখন শুনছি তারা নির্বাচনে আসবে না। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা অপকৌশলে লিপ্ত হচ্ছে।

যথাসময়ে নির্বাচন হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্রের ট্রেন, নির্বাচনের ট্রেন কারো জন্য থেকে থাকবে না। বিএনপি না এলে নির্বাচন ও গণতন্ত্রিক কাজ থেমে থাকবে না, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধারা অব্যাহত থাকবে। এই সময় তিনি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় লীগের কর্মকাÐ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি বন্ধ না করলে শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দেব। সবাই মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এই ছাড়া যারা আমার স্বাক্ষর জাল করে যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, রমজানের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুইটা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। একটা হলো ২৫ মার্চ ও ২৬ মার্চ। এছাড়া রমজানে আওয়ামী লীগ একটা কর্মসূচি পালন করবে। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এটা সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া বৈশাখের র‌্যালি ও দলের সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম করবে।

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মহিউদ্দিন জালাল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াশিকা আয়শা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ##