আস্থা বেড়েছে কৃষকের বাজারে স্থায়ীকরণ দাবি ক্রেতাদের
১৭ মার্চ ২০২৩, ১০:৫২ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০১:২৬ এএম
সকাল বেলা নিজের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বসেন কৃষকরা। স্বাস্থ্যসম্মত কৃষি পণ্য ক্রেতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন তারা। ক্রেতারাও এসব পণ্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনতে পেরে খুশি। নিত্য প্রয়োজনীয় শাক-সবজি থেকে শুরু করে ডিম, দুধসহ সবই পাওয়া যায় রাজধানীর কৃষকের বাজারে।
এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপনের ফলে ৯৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ এলাকাবাসী সন্তুষ্ট। ৮৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ নিয়মিত কৃষকের বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করেন। অন্যদিকে ৫৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ কৃষক, কৃষকের বাজারে পণ্য বিক্রি করে অধিক লাভ পান বলে জানান। কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের উপকার বিবেচনায় একটি পৃথক ডেস্কের মাধ্যমে বাজারগুলো স্থায়ী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় কৃষকের বাজার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, অ্যাম্বাসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস, সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ১৬টি জায়গায় নিয়মিত বসছে এই বাজার। সরাসরি কৃষকের ক্ষেত থেকে তাজা শাকসবজি এসেছে এই বাজারে। নিজের হাতে ফলানো সবজি সরাসরি ভোক্তার হাতে তুলে দিচ্ছেন তারা। ঢাকার অদূরেই সাভারের তেঁতুলঝরা গ্রাম থেকে এসেছেন এই কৃষকেরা। রাজধানীতে ইস্কাটন গার্ডেন রোড, মিরপুর ৬, রূপনগর, পল্লবী, কামরাঙ্গীরচর, টিকাটুলি, খিলগাঁও, লালমাটিয়া, মোহাম্মাদপুরের আদাবর ও মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি, আজিমপুর ও হাজারীবাগে রয়েছে কৃষকের বাজার। ভোক্তাদের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দেওয়াই এই বাজারের মূল লক্ষ্য।
সরেজমিন গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, রাজধানীর টিকাটুলিতে ফুটপাথে রঙিণ ছাতার নিচে সবজি, ডিম, দুধসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কৃষকরা। মর্নিংওয়াকে বের হওয়া লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছেন সেসব সবজি। কেউ কেউ নিজের পছন্দের পণ্যটি কিনে নিচ্ছেন।
আলু, কচু, লাউ, কাঁচামরিচ, ঢেঁড়শ, গোল বেগুন, টমেটো, ঝিঙা, লেবু, ধুন্দল, পেঁপে নিয়ে বসেছেন সাভারের তেঁতুলঝরা এলাকার কৃষকরা। তারা জানালেন সাভারের কৃষি অফিস থেকে তার মতো কয়েকজন কৃষকের সাথে যোগাযোগ করে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের নির্বাচন করা হয়। এরপর থেকে এই কৃষকের বাজারে বসছেন। এই বাজারে আসা বিক্রেতারা জানান, এসব শাক-সবজি বিষমুক্ত। জৈব সার দিয়ে উৎপাদন করা হয়। সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয় বলে দামও ভালো পান তারা।
বাজার ঘুরে ব্যাগ ভর্তি করে ফিরছেন চাকরিজীবী নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, শুক্রবারের কৃষকের বাজারে এসে তাজা শবজি কিনতে পাওয়া যায় তাই এখান থেকে এসব কিনে নিয়ে যাই। যারা বিক্রি করে তারা জানিয়েছে সাভারের তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত শাক-সবজি এখানে নিয়ে আসা হয় তাই এসব তাজা সবজি কেনা যায়। তবে দামটা সাধারণ বাজারের সমানই মনে হয়। তবে এই বাজার এখন অস্থায়ীবাবে চলছে। যদি এই কৃষকের বাজার স্থায়ী হয় তাহলে ক্রেতাদের জন্য ভালো হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রজেক্ট পরিচালক নাইমা আক্তার জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬টি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৬টি, নারায়ণগঞ্জে ২টি, গাজীপুরে ২টি বাজার পরিচালিত হচ্ছে। একটি বাজারে ১০ জন করে কৃষক বসতে পারেন। তাদের উৎপাদিত সবজি নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করেন কৃষি অধিদফতরের গবেষক ও কর্মকর্তারা। গত বছরের আগস্টে এই বাজার শুরু হয়। এই বাজারের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি কৃষকেরা সরাসরি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন বলেও জানান তিনি।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, কৃষকের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষক পুরো লাভ পাচ্ছেন। এই প্রজেক্টে প্রথম দিকে কৃষকদের যাতায়াত খরচ আমরা শতভাগ বহন করি। পরে ৭৫ দশমিক ৫০ ভাগ বহন করি। এরপর কৃষক একপর্যায়ে গিয়ে পুরোটাই বহন করেন। ১৩ মাস পরিচালনার পর জুন মাসে আমাদের এই প্রজেক্ট শেষ হয়ে যাবে। তখন কীভাবে চলমান রাখা যায় এটা কিছুটা চ্যালেঞ্জের।
স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, কৃষকের বাজারে নিরাপদ পণ্য নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে সচেষ্ট হতে হবে। বাজারগুলো টেকসই করে তুলতে কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড কমিটির সভায় এ বিষয়টি থাকতে হবে। এক বছরের জন্য বাজারগুলো চলমান রাখতে একটি সুনির্দিষ্ট বাজেটের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে সুপারিশ করা যেতে পারে। তারপর কৃষকদের পণ্যের দামের সাথে পরিবহন খরচটি ধরে কৃষকদের মাধ্যমেই পরিবহন খরচ ব্যয় করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অধিশাখার যুগ্মসচিব নুমেরী জামান বলেন, নগর উন্নয়ন অধিদফতরের আওতায় কৃষকের বাজারের জন্য একটি পৃথক ডেস্ক নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এটি খুব দ্রুত কার্যকর হবে। যখন ডেস্ক তৈরি হবে তখন বাজেটও বরাদ্দ হবে। প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের ফুড সিস্টেম পলিসি ইকোনমিস্ট পেদ্রো আন্দ্রেস গার্জন ডেলভো বলেন, অধিকাংশ কৃষক এবং ভোক্তা কৃষকের বাজার চলমান রাখার বিষয়ে আগ্রহী। ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্প থেকে আমরা একটি ব্যতিক্রমী বাজারের সূচনা করেছি, যার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি পরিবেশের উপরও ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, চারটি সিটি করপোরেশনে অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মশালা থেকে আমরা ১৬টি কৃষকের বাজার টেকসই করার বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ পেয়েছি। সেই সুপারিশগুলোর উপর ভিত্তি করে কৃষকের বাজার টেকসই করার কৌশল নিরূপণই মূল উদ্দেশ্য।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, কৃষকের বাজারের মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে হলেও জনগণের কাছে নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ কার্যক্রমটি আরো বিস্তৃত করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ