ইয়াহিয়া-মুজিব তৃতীয় দফা বৈঠকে বসেন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ মার্চ ২০২৩, ১১:০২ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম

১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরু থেকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতে থাকে বাঙালি জনতা। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে পাকিস্তানী সামরিক শাসক। সৃষ্ট সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। দুই দফা বৈঠক নিষ্ফল হওয়ায় আজকের এই দিনে তৃতীয় দফা বৈঠকে বসেন ইয়াহিয়া-মুজিব। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবগুলো হলো প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা, কেন্দ্রে আপাতত ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সরকার থাকতে পারে, কিন্তু প্রদেশগুলোতে অবিলম্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করবে এবং পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রস্তাবিত পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পৃথকভাবে মিলিত হয়ে ছয় দফার ভিত্তিতে খসড়া সংবিধানের সুপারিশ করবে। আর সংসদের আনুষ্ঠানিক অধিবেশনে তা চূড়ান্তকরণ করা যেতে পারে। দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকে ‘জয়বাংলা’ স্লোগানের ব্যাখ্যা জানতে চান ইয়াহিয়া। শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়ও কলেমা পাঠের সঙ্গে জয়বাংলা উচ্চারণ করব আমি।

বঙ্গবন্ধুর দেয়া তিনটি প্রস্তাবের ব্যাপারে আলোচনা ও বিবেচনার আশ্বাস দেন ইয়াহিয়া। তিনি তৃতীয় বৈঠকের পর কিছুটা নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেন। ইয়াহিয়া বলেন, ভুট্টো আপত্তি না করলে এ ধরণের একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু প্রস্তাবে রাজি হলেন না ভুট্টো। ঢাকা থেকে করাচিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক তারবার্তায় তিনি বলেন, তার পার্টি সীমান্ত ও বেলুচিস্তানের পরিষদে সংখ্যালঘু। তাই সামরিক আইন প্রত্যাহার হলে পিপলস পার্টি অসুবিধার সম্মুখীন হতে বাধ্য।

এদিকে ১৯ মার্চ সকালে হঠাৎ করে জয়দেবপুর ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বাঙালি সেনা এবং জনতার মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ওই এলাকার আন্দোলনরত বাঙালিদের ওপর গুলি চালানোর জন্য ৫৭ নং ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জাহান জাব আরবার দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দেন। কিন্তু জাহান জাব আরবারের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান বাঙালি অফিসার ও জওয়ানরা। শুধু আদেশ অমান্যই নয়, দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে বসে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর শফিউল্লাহ। বিক্ষুব্ধ মানুষ জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আড়াই মাইল রাস্তা কাঠের গুঁড়ি ও ইট ফেলে অসংখ্য ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এ সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিতে মনু খলিফা, নিয়ামত ও হুরমতসহ অর্ধশত শহীদ ও দু›শতাধিক বাঙালি আহত হন। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী গাজীপুর এলাকায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য জারি করে সান্ধ্য আইন। জয়দেবপুর ও গাজীপুরে দিনভর সশস্ত্র যুদ্ধে বাঙালি জনতার ওপর পাকিস্তানী সেনাদের অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, তারা যদি মনে করে থাকে যে, বুলেট দিয়ে জনগণের সংগ্রাম বন্ধ করতে সক্ষম হবে, তাহলে তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করছে। জনগণ যখন রক্ত দিতে তৈরি হয়, তখন তাদের দমন করতে পারে এমন শক্তি দুনিয়ায় নেই।#


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু