গ্রেফতার শতাধিক, সেনা টহল

ভারতপন্থী ও বিরোধীদের সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ নেপাল, নিহত ২

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

 

রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি নিয়ে পথে নেমেছে নেপালের ভারতপন্থী একদল মানুষ। তারা হিন্দুরাষ্ট্র ফেরানোর দাবিতেও সরব। এই দুই দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। রাজধানী কাঠমাণ্ডু-সহ দেশটির বহু শহরে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। জারি হয়েছে কারফিউ। প্রশাসন পুলিশের পাশাপাশি সেনাকেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ।

 

স্থানীয় সময় শুক্রবার রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে জড়ো হন হাজারো ভারতপন্থী। তাদেরকে বাধা দেয় ভারত বিরোধী ও প্রজাতন্ত্রপন্থীরা। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হলে, এ ঘটনায় নিহত হন ২ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। শুক্রবারের বিক্ষোভে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। একাধিক শপিং মলসে ভারতপন্থীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। আক্রমণ হয় সংবাদমাধ্যমের অফিস। পাল্টা পথে নামে প্রজাতন্ত্রীরাও।

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল ধুমল রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবির বিরুদ্ধে একাধিক সভা করেছেন। তারাও রাস্তায় মিটিং-মিছিল করে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। প্রায় দু-দশক আগে নেপালের রাজতন্ত্রের অবস্থান ঘটে। দেশটি হয়ে যায় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। সংবিধান সংশোধন করে হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল হয়ে যায় ধর্মনিরপেক্ষ। এখন আবার পুরনো ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি সামনে এসেছে।

 

এই ব্যাপারে সক্রিয় রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ। দীর্ঘদিন তিনি দেশে ছিলেন না। ধর্মীয় সফর শেষ করে চলতি মাসের শুরুতে দেশে ফেরার পর তিনি একটি ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে চলমান অপশাসনের বিরুদ্ধে সরব হতে আহ্বান জানানা। তারপরই সক্রিয় হয় ভারতের ঘনিষ্ঠ দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি। সেই দলই বিক্ষোভের ডাক দেয়।

 

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই দফায় তাদের পয়লা কর্মসূচিতেই দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, আসলে সরকার পরিবর্তনের কারণে নেপালের মানুষ বিরক্ত। গণতন্ত্র ফিরলেও তাতে চলমান অস্থিরতার অবসান হয়নি। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং ভারতের উস্কানির কারণে স্থায়ী সরকার গঠন হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি বেহাল। হাজার হাজার নেপালি তরুণ-তরুণী বিদেশে পাড়ি দিয়েছে চাকরির সন্ধানে। তাদের স্বজনেরা এই পরিস্থিতির জন্য ক্ষুব্ধ।

 

প্রসঙ্গত, প্রায় দু’দশক আগে ভারতের উত্তরের প্রতিবেশী দেশ নেপালে প্রচলিত ছিল রাজতন্ত্র। শেষ রাজা ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। ২০০৬ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পরে ২০০৮ সালের মে মাসে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্র ভেঙে নেপালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ২০১৫ সালে অনুমোদিত হয় নতুন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জ্ঞানেন্দ্র নেপালের সাধারণ নাগরিক হিসাবে বাস করেন। তার কোনও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। অনুমতি নেই রাজপ্রাসাদে যাওয়ার। এমনকি, সরকারি কোনও সুবিধাও তিনি পান না।

 

নেপালে যখন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেই সময় দেশটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবেই পরিচিত ছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে ঘোষণা করা হয়। পরে দেশের সংবিধানেও সেই স্বীকৃতি দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, ১৭৬৮ সালে সেখানে শাহ রাজবংশের সূচনা হয়েছিল। জ্ঞানেন্দ্রের বড় ভাই রাজা বীরেন্দ্র ছিলেন পৃথ্বীনারায়ণের নবম প্রজন্ম। তাকে হত্যা করে যুবরাজ দীপেন্দ্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মৃত্যুশয্যাতেই তার অভিষেক হয়। দীপেন্দ্র বাঁচেননি। ২০০১-এর জুন মাসের সেই হত্যাকাণ্ডের পর জ্ঞানেন্দ্র সিংহাসনে বসেছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় ২০০৫ সালের গোড়ায় নেপালে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। তার পরে দ্রুত তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার ভারতপন্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে তাকে ‘সিংহাসনে’ ফেরানোর দাবিতে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম
হাসপাতালে ভর্তি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, আছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে
ইরান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা দেবে না গালফ দেশগুলো
সিরিয়াজুড়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জনজীবন বিপর্যস্ত
তেল-গ্যাসের নতুন খনি আবিষ্কার দক্ষিন চীন সাগরে
আরও
X

আরও পড়ুন

মানিকগঞ্জে কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

মানিকগঞ্জে কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

হাজীগঞ্জে সিগারেটকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত

হাজীগঞ্জে সিগারেটকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত

ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম

ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম

চট্টগ্রামে জোড়া খুন, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে আসামি করে মামলা

চট্টগ্রামে জোড়া খুন, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে আসামি করে মামলা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৭

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৭

হাসপাতালে ভর্তি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, আছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে

হাসপাতালে ভর্তি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, আছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে

ইরান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা দেবে না গালফ দেশগুলো

ইরান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা দেবে না গালফ দেশগুলো

চাটমোহরে জমি নিয়ে বিরোধ, দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ৩০

চাটমোহরে জমি নিয়ে বিরোধ, দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ৩০

আজ কেরানীগঞ্জের ভয়াল গণহত্যা দিবস ২ এপ্রিল

আজ কেরানীগঞ্জের ভয়াল গণহত্যা দিবস ২ এপ্রিল

এবার জামায়াত নেতা ড. মাসুদের জন্য ভোট চাইলেন রুমিন ফারহানা!

এবার জামায়াত নেতা ড. মাসুদের জন্য ভোট চাইলেন রুমিন ফারহানা!

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, আহনাফের জয়ের গল্প

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, আহনাফের জয়ের গল্প

সিরিয়াজুড়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জনজীবন বিপর্যস্ত

সিরিয়াজুড়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জনজীবন বিপর্যস্ত

ঢাকার বাতাস আজও  ‘অস্বাস্থ্যকর’

ঢাকার বাতাস আজও ‘অস্বাস্থ্যকর’

তেল-গ্যাসের নতুন খনি আবিষ্কার দক্ষিন চীন সাগরে

তেল-গ্যাসের নতুন খনি আবিষ্কার দক্ষিন চীন সাগরে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪২ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪২ ফিলিস্তিনি

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে কেউ পুনর্বাসিত করতে পারবে না- আবদুল হান্নান মাসউদ

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে কেউ পুনর্বাসিত করতে পারবে না- আবদুল হান্নান মাসউদ

গুপ্ত রাজনীতি যারা করে, তাদের প্রতি শুভ কামনা নেই : ছাত্রদল সভাপতি

গুপ্ত রাজনীতি যারা করে, তাদের প্রতি শুভ কামনা নেই : ছাত্রদল সভাপতি

পাকিস্তানকে কঠিন লক্ষ্য দিল নিউজিল্যান্ড

পাকিস্তানকে কঠিন লক্ষ্য দিল নিউজিল্যান্ড

দক্ষিণ আফ্রিকার কোচের পদত্যাগ

দক্ষিণ আফ্রিকার কোচের পদত্যাগ

পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হলো সুন্দরবনের মধু আহরণ

পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হলো সুন্দরবনের মধু আহরণ