৪৫৯ বাংলাদেশির দুবাইয়ে বিনিয়োগ

হাইকোর্টের নির্দেশনায়ও তদন্তে আগ্রহী নয় দুদক

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ মার্চ ২০২৩, ১১:০৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৫ পিএম

নাম-পরিচয় গোপন করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে বিনিয়োগ করেছেন ৪শ’ ৫৯ বাংলাদেশি। তাদের কারও রয়েছে ভারতীয় পাসপোর্ট। কারও পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার। পরিচয় গোপন করে তারা পেয়ে বসেছেন বিশাল বিশাল ব্যবসা । খুলে বসেছেন অন্তত ৯৭২টি আবাসন কোম্পানি।

বিনিয়োগ করেছেন অন্তত ৩শ’ ১৫ মিলিয়ন ডলার। দুবাইয়ে বাংলাদেশি রিয়েল এস্টেট মালিকদের মধ্যে ৩১৮ জনের বয়স ৩৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। ৪২ জনের বয়স ৩৪ বছরের কম। ৯৭ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। তাদের বিনিয়োগ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সম্পদ ক্রয়ের বিষয়ে তদন্ত করতে চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ তদন্ত সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তিন মাস অতিবাহিত হলেও সেই তদন্ত আজও শুরু করেনি কোনো সংস্থা।

সুপ্রিম কোর্ট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সিএডিসি) গত বছর মে মাসে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উপসাগরীয় দেশগুলোতে মূলত পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পদ কেনার বিষয়টি প্রকাশ করে। তথ্য গোপন করে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ে অন্তত ৯৭২টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। এসব সম্পদের মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনা ও ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। যেখানে অন্তত ১০০টি ভিলা ও অন্তত ৫টি ভবনের মালিক বাংলাদেশি। চার থেকে পাঁচ জন বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। যদিও প্রতিবেদনে কারোর প্রকৃত নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গত জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন হাইকোর্ট। তবে এসব সংস্থা বলছে আদালতের আদেশের লিখিত কপি না পাওয়ায় তারা তদন্ত শুরু করতে পারেনি। তবে আগেও দেখা গেছে হাইকোর্টের আদেশ না পেলেও গণমাধ্যমের সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এসব সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে দুদক তাদের প্রাথমিক তদন্তের উৎস হিসেবে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ২১৬৭ প্রতিবেদন গ্রহণ করেছিলো তদন্তের লক্ষ্যে। একইভাবে, অন্যান্য সংস্থাগুলোও মিডিয়া রিপোর্ট, নথি দেখানোর ভিত্তিতে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা করেছে। কিন্তু দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশিদের সম্পদের তদন্তের বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যায় নি।

সিআইডির সিনিয়র পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পত্তির বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের কোনো অনুলিপি আমরা এখনও পাইনি। অনুলিপি পেলে কাজ শুরু করব। এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের মহাপরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি সবে মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান একটি অনলাইন পোর্টালকে বলেন, আদালতের লিখিত আদেশ না পাওয়ায় তদন্ত শুরু করা যায়নি, এমন যুক্তি খুবই দুর্বল। আদালতের কথা বিবেচনা না করে সংস্থাগুলোকে নিজেদের উদ্যোগেই উচিত ছিলো তদন্তটি করা। এ ধরণের নিষ্ক্রিয়তা উদ্বেগের জন্ম দেয়।

হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও অর্থপাচারের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিষয়ে এধরনের নিষ্ক্রিয়তা এই বার্তাই দেয় যে, এই ধরনের অপরাধীরা দায়মুক্তির যোগ্য। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের সংস্থাগুলো যদি কোনো ব্যক্তির পরিচয় ও মর্যাদা দ্বারা প্রভাবিত হয় তবে তা দুর্নীতি এবং বিশেষ করে অর্থপাচারকে আরও বাড়িয়ে তুলবে

গত কয়েক বছর ধরে, হাইকোর্ট একাধিকবার তদন্ত সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তার জন্য অসন্তেষ প্রকাশ করেছেন। গত বছর ৬ মার্চ এই বিষয়ে একটি রিটের শুনানির সময়, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বলেছিলেন, এটি (দুদক) যদি অর্থপাচার বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তবে এটি দুঃখজনক। দয়া করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আমাদের নির্দেশনা মেনে চলুন। বাংলাদেশের জনগণ মেধাবী ও পরিশ্রমী। দুর্নীতি নির্মূল করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রোনলদোহীন নাসের জিতল মানে ম্যাজিকে

রোনলদোহীন নাসের জিতল মানে ম্যাজিকে

গাজায় শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকতে চাইছে না কাতার?

গাজায় শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকতে চাইছে না কাতার?

মণিপুরী ছাত্র‌দের জন্য একটি আলাদা হোস্টেল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

মণিপুরী ছাত্র‌দের জন্য একটি আলাদা হোস্টেল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

আবুধাবীতে চালু হলো ইউএস বাংলার ফ্লাইট

আবুধাবীতে চালু হলো ইউএস বাংলার ফ্লাইট

বিশ্বকে বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি তরুণদের

বিশ্বকে বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি তরুণদের

ইরানের হামলার বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়েই যাচ্ছেন ব্লিনকেন

ইরানের হামলার বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়েই যাচ্ছেন ব্লিনকেন

রাজশাহী পবায় ট্রাক চাপায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ৩

রাজশাহী পবায় ট্রাক চাপায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ৩

নিউইয়র্কে সোনালী এক্সচেঞ্জের গ্রাহক সমাবেশ ও ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

নিউইয়র্কে সোনালী এক্সচেঞ্জের গ্রাহক সমাবেশ ও ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

বিমানবন্দর এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক প্রকৌশলী নিহত

বিমানবন্দর এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক প্রকৌশলী নিহত

ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সদস্য না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ আরব দেশগুলোর

ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সদস্য না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ আরব দেশগুলোর

সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে কৃষকদের নিয়ে ধান কাটলেন কৃষিমন্ত্রী

সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে কৃষকদের নিয়ে ধান কাটলেন কৃষিমন্ত্রী

সিলেটের উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ৬০ কি:মি বেগে বজ্র বৃষ্টি সহ দমকা হাওয়া !

সিলেটের উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ৬০ কি:মি বেগে বজ্র বৃষ্টি সহ দমকা হাওয়া !

আনোয়ারায় হিট স্ট্রোকে শাহজাদা ছালেহ আহমদ (৭৪) শাহর মৃত্যু

আনোয়ারায় হিট স্ট্রোকে শাহজাদা ছালেহ আহমদ (৭৪) শাহর মৃত্যু

দুবাই পানিতে তলিয়ে যাবার কারণ ক্লাউড সিডিং?

দুবাই পানিতে তলিয়ে যাবার কারণ ক্লাউড সিডিং?

জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জেলেনস্কির

জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জেলেনস্কির

নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইসিসি, জরুরি বৈঠক তলব

নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইসিসি, জরুরি বৈঠক তলব

বান্দরবানে অপহৃত সেই ব্যাংক ম্যানাজার কে চট্টগ্রামে বদলী

বান্দরবানে অপহৃত সেই ব্যাংক ম্যানাজার কে চট্টগ্রামে বদলী

মূল্যস্ফীতিই অর্থনীতিতে বড় সমস্যা

মূল্যস্ফীতিই অর্থনীতিতে বড় সমস্যা

খাদের কিনারে মধ্যপ্রাচ্য

খাদের কিনারে মধ্যপ্রাচ্য

সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদের প্রশংসনীয় বক্তব্য

সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদের প্রশংসনীয় বক্তব্য