চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করবে ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিপত্র জারি

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

২০ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়ে পরিপত্র জারি হয়েছে। এতে বন্দরে বড় জাহাজ প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত জানুয়ারিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হওয়ার দুই মাস পর এ সিদ্ধান্ত নিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দিয়ে পরিপত্র জারি করেন রোববার। এখন থেকে জোয়ার-ভাটার প্রকৃত সময় নির্ধারণ করে বড় জাহাজ বন্দরের জেটিতে ঢুকতে পারবে।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর বন্দরের বোর্ড সদস্যদের সভায় বড় জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৫ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে একটি জাহাজ বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করে। সেটি নির্বিঘেœ জেটিতে এসে পণ্য খালাস করে ফিরে যায়। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, জেটিতে এখন ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশে কোনো সমস্যা নেই। যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্তভাবে ওই আয়তনের জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গত ১৫ জানুয়ারি ব্রাজিল থেকে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৩৬ হাজার মেট্রিক টন চিনি নিয়ে আসা ‘এমভি কমন এটলাস’ নামে একটি জাহাজ বন্দরের চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল-১ (সিসিটি) জেটিতে নোঙ্গর করেছিল। জাহাজটি মোট ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি নিয়ে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে এসেছিল। তখন ড্রাফট ১০ মিটারের বেশি থাকায় ২৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি লাইটারেজ জাহাজে খালাস করা হয়। এরপর ড্রাফট কমলে ৩৬ হাজার টন চিনি নিয়ে বড় জাহাজটিকে জেটিতে ভেড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরদিন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যরে জাহাজ প্রবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৩৭ মিটার লম্বা এবং সাত মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দেওয়া হতো। সত্তরের দশকে চ্যানেল সংস্কারের পর ১৯৭৫ সালে এই বন্দরে মাত্র সাড়ে সাত মিটার গভীরতা ও ১৬০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো। আরও খননকাজের পর ১৯৮০ সালে ৮ মিটার গভীর ও ১৭০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯০ সালে সাড়ে আট মিটার গভীর ও ১৮০ মিটার দীর্ঘ, ১৯৯৫ সালে ৯ মিটার গভীর ও ১৮৫ মিটার দীর্ঘ এবং ২০১৪ সালে সাড়ে নয় মিটার গভীর ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এরপর আট বছর পর ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু-মাটি অপসারণ করে গভীরতা বাড়ানো হয়। জেটিসহ বন্দর সীমানায় পানির স্বাভাবিক গভীরতা এবং জোয়ারের উচ্চতা হিসেব করে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বড় ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর ওপর সমীক্ষার উদ্যোগ নেয়। বৃটিশ প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিংফোর্ড’ সমীক্ষা শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব। তবে বন্দরের ১৮ জেটির সবগুলোতে একই ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে না। জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বন্দরের হাইড্রোগ্রাফি ও নৌ-বিভাগের কর্মকর্তারা।

সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে মাত্র ১৮০০ থেকে ২৪০০ কন্টেইনার বহনের সুযোগ থাকে। বড়ো ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বর্হিনোঙ্গরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। লাইটারেজ জাহাজ গিয়ে পণ্য খালাস করে জেটিতে আনার পর আবার সেই পণ্য খালাস করতে হয়। রফতানি পণ্যও একই পদ্ধতিতে জাহাজীকরণ করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়। ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়ানোর পর প্রতিটিতে আরো ১০০০ থেকে ১১০০ কন্টেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। এতে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে, কমবে কন্টেইনারে করে আনা-নেওয়া করা পণ্যের পরিবহন ব্যয়। এছাড়া ছোটখাট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে জাহাজগুলোকে আর বর্হিনোঙ্গরে অলস বসে থাকতে হবে না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুমকীতে কাপ পিরিচ মার্কার প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-৫

দুমকীতে কাপ পিরিচ মার্কার প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-৫

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেনের ইন্তেকাল

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেনের ইন্তেকাল

রাজবাড়ীতে ভোট চেয়ে বাড়ী ফেরার পথে একজনকে কুপিয়ে জখম

রাজবাড়ীতে ভোট চেয়ে বাড়ী ফেরার পথে একজনকে কুপিয়ে জখম

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে