পাতাল রেল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব হবে এবং জনগণের যেন কোনো অসুবিধা না হয় নির্মাণ কাজে সেটিও খেয়াল রাখা হবে

দূর আসবে কাছে

Daily Inqilab একলাছ হক

২০ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম

যানজটের শহরে পাতাল রেল আশা জাগিয়েছে। উন্নত দেশে অনেক আগে থেকেই পাতাল রেল ব্যবস্থা চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক দূর থেকে পাতাল রেলের সাহায্যে সাধারণ মানুষ অফিস করেন। আমাদের দেশেও পাতাল রেলের সাহায্যে অনেক দূর দূরান্ত থেকে গন্তব্যে এসে প্রায়োজনীয় কাজ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এতে দূরের যাত্রা পথ আরও কাছে চলে আসবে। পাতাল রেলের মাধ্যমে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্ভাবনার পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। মেট্রোরেলের পর পাতাল রেল নির্মাণের কার্যক্রমের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হলো। এর আগে মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি। সেটি মাটির ওপর দিয়ে যাবে। এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে। পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো’ এবং ‘পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ নির্মাণকাজ করতে গিয়ে কোনো পরিষেবা স্থানান্তর করতে হবে না। সবকিছু স্বাভাবিক রেখেই এই পাতাল রেলের নির্মাণকাজ চলবে। পাতাল রেলের নির্মাণকাজ করার সময় জনগণের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাটির নিচে শব্দহীন বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ করা হবে। তাই ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে, মোটির নিচে কাজ চলছে। প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব হবে এবং জনগণের যেন কোনো অনুবিধা না হয় নির্মাণ কাজে সেটিও খেয়াল রাখা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫২,৫৬১ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে এবং এলিভেটেড উভয় সুবিধা সংবলিত ৩১ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট উদ্বোধন করা হবে এবং ডিএমটিসিএল এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে। এমআরটি লাইন-১ এর দু’টি অংশ থাকবে- একটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (বিমানবন্দর রুট) ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার অংশ। এটি হবে ভূগর্ভস্থ এবং এতে ১২টি স্টেশন থাকবে। এগুলো হলো- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।

অপর অংশটি নতুন বাজার থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইনসহ পূর্বাচল পর্যন্ত (পূর্বাচল রুট)। অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুন বাজার এবং নর্দ্দা স্টেশন হবে ভূগর্ভস্থ । স্টেশনগুলো হলো- নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।

স্থানীয়রা জানান, পাতাল রেলের কাজ উদ্বোধন করার পর পিতলগঞ্জ ডিপো আশপাশের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসও দেখা গেছে। তারা বলছেন, দেশে থেকেও বিদেশে থাকার অনুভূতি। এখন নিজেদের এলাকায় ট্রেন আসছে, তা আরও উন্নত। চলবে মাটির নিচ দিয়ে। পাতাল রেলের কাজে খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে শঙ্কা করছেন অনেকে। বায়ু দূষণের মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব দেখছে দেশ। বেশকিছু দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছেন নগরবাসী। বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করা হলে- ধুলা আর দূষণে এলাকা ছাড়তে হয় কিনা তাই ভাবছেন অনেকে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এ কাজের জন্য আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করব। খননে যে মাটিগুলো নরম ছিল বা যেখানে নিচের মাটিগুলো শক্ত হয়নি, সে জন্য সেন্ড পাইলিং করব। অর্থাৎ নির্ধারিত স্থানের নিচের দিকে অতিরিক্ত খনন করা হবে। এরপর সেখানে বালি দিয়ে পাইল বা শক্ত করা হবে। এমআরটি-১ প্রকল্প দুটি অংশে বাস্তবায়িত হবে। একটি অংশ হবে পাতাল ও অপরটি হবে উড়াল। দুটি অংশের মূল ডিপো নির্মাণের কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেট্রোরেলটি বাস্তবায়নে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর সিংহভাগই অর্থাৎ ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে টাকার অংকে এটিই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. শামছুল হক বলেন, আমাদের বিজ্ঞান ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাজউকসহ অন্যদের নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করা উচিত। পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থার পুর্ণঙ্গ রূপ না। ঢাকায় গণপরিবহনে সমন্বয় আনতে হবে। পাতাল রেলে ব্যয় বেশি, আলো সমস্যাসহ নানা সমস্যা থাকে। ঢাকার যানজট থেকে মুক্তির জন্য সাবওয়ে বা পাতালরেল হলো খন্ডিত উন্নয়ন। এককভাবে শুধু পাতাল রেল হলেই যানজট নিরসন হবে না। এই শহরের যানজট মুক্ত করতে হলে গণপরিবহন, সিগন্যালসহ সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন করতে হবে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগরায়ন এবং উন্নয়নের যে পদ্ধতি অনুসরণ করছি তা ঠিক আছে কিনা দেখা দরকার। যদি ঠিক থাকত তাহলে বায়ু দূষণসহ দূষণের মাত্রা এতটা খারাপ হওয়ার কথা না। বলা হচ্ছে পাতাল রেল মাটির নিচ দিয়ে যাবে, দূষণ হবে না। বাস্তবে তা নয়, রাস্তা কেটে ফেলা হবে। এ পাতাল রেলের কারণে রাস্তাসহ আশে পাশে কল্পনাতীত দূষণ তৈরি হবে। এ দূষণ নেয়ার মতো কি ঢাকার অবস্থা রয়েছে? নেই। পাতাল রেল যে কতটা উচ্চবিলাসী পরিকল্পনা তা আমাদের আলোচনায় আছেই। গণপরিবহনের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না। যে কোনো শহরকে বাঁচাতে হলে সবুজায়ন করতে হয়। আমরা তার বিপরীত কাজ করছি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন

শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক অ্যাজিভিট

শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক অ্যাজিভিট

বাইডেনকে তিরস্কার করে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে বিল পাস

বাইডেনকে তিরস্কার করে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে বিল পাস

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা : যুক্তরাষ্ট্র

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা : যুক্তরাষ্ট্র

৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো

৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো

মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির! ভারতে ধর্মের কার্ড খেলার ট্র্যাডিশন চলছেই

মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির! ভারতে ধর্মের কার্ড খেলার ট্র্যাডিশন চলছেই

অত্যাধুনিক রকেটের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান

অত্যাধুনিক রকেটের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান

কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত হলেন মেজর জেনারেল তারেক

কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত হলেন মেজর জেনারেল তারেক