ক্ষমা করো ওহে দয়াময়
০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম
হযরত সালমান ফারসি (রা) বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা) ইরশাদ করেন, রমযানের প্রথম ভাগ রহমতের। মধ্যভাগ মাগফিরাতের। আর শেষ ভাগ আছে দোযখ থেকে মুক্তি লাভের। এই সূত্র ধরে সেহরি ইফতারের ক্যালেন্ডারে রমজান মাসকে তিন ভাগ করে দেখানো হয়। প্রথম ১০ দিন রহমতের, মাঝখানের ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন দোযখ থেকে মুক্তি লাভের। রমযানের প্রথম ১০ রোযা পূর্ণ হওয়ার পর অনেকে বলেন, রহমতের দশক চলে গেল, শুরু হল মাগফিরাতের দশক। আসলে কি ১০ রোযার সাথে সাথে রহমতের দশক শেষ হয়ে গেল। না। কারণ আল্লাহর রহমত তো অবিরত অহরহ অব্যাহত সর্বত্র পরিব্যপ্ত।
আমাদের দেশে শীতকালের উত্তরি হাওয়া বদলে যখন প্রকৃতিতে দখনে হাওয়ার দোলা লাগে তখন বসন্তকাল আসে। দখনে হাওয়ার এই দোলায় ভিন্ন ভিন্ন প্রবাহ থাকে। আরো ভালোভাবে বুঝার জন্য সাগরের উপমা সামনে রাখুন। উত্তাল সাগরে একের পর এক ঢেউয়ের খেলা চলে। একটি ঢেউ গর্জে উঠে ভেঙে পড়লেও তার রেশ বা ধারা শেষ হয়ে যায় না। অতিপ্রাকৃতিক জগতের বসন্তকাল রমযানেও রহমতের বাতাসের বিভিন্ন প্রবাহ, উত্তাল সাগরের মতো ঢেউয়ের পর ঢেউ খেলতে থাকে। এর কোনোটার নাম রহমত, কোনোটার নাম মাগফিরাত বা জাহান্নাম থেকে নাজাত। কোনো ঢেউতরঙ্গ শেষ হয়ে যায় না; বরং একটির উপর আরেকটি আঁচড়ে পড়ে ও চলতে থাকে। এই ব্যাখ্যা সামনে রেখে আমরা বলতে পারি ১১ রমজান থেকে রহমতের যে ঢেউ তরঙ্গ শুরু হয়েছে তার নাম মাগফিরাত।
মাগফিরাত মানে ক্ষমা। বান্দার পাপতাপ, গোনাহ, দোষখাতা মাফ মার্জনা করে দেয়াকে বলা হয় মাগফিরাত। মোটা দাগে সরকারি কোনো অনুদান, ঋণ বা রিলিফ পেতে ভোগান্তির কথা আমরা জানি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও কাঙ্খিত মঞ্জুরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। হঠাৎ যদি সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, যে কেউ নির্ধারিত ছাপানো ফরমের খালি ঘরে নিজের নাম আর দ‘ুএকটি তথ্য পুরণ করে এতদিনের মধ্যে জমা দেবে অনায়াসে বড় অঙ্কের অনুদান পেয়ে যাবে, তাহলে ব্যাপারটি কত সহজ হয়ে যাবে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে না। মাহে রমযানের মাঝখানের মাগফিরাতের দশক সে ধরনের সুযোগ আমাদের দোর গোড়ায় এনে দিয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ।
আল্লাহর রহমত দয়া দান মাগফিরাত পাওয়ার ছাপানো ফরম হল তওবা। খাঁটি মনে আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহের স্বীকারোক্তি। এর নাম তওবা। তওবা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। গির্জায় গিয়ে পাদ্রীর কাছে নিজের পাপের বর্ণনা দিয়ে কনফেশনের অনুমতি ইসলামে নেই। কোনো পাদ্রী বা পীর বুজর্গ মানুষের গোনাহ মাফ করতে পারে না। গোনাহ মাফ করার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। তাই কেউ যদি জানা অজানায় কোনো পাপকর্ম করে বসে আর তা অন্য মানুষ জানতে না পাওে তাহলে হুকুম হল, সেই গোনাহের কথা কারো কাছে প্রকাশ করবে না। আল্লাহ দোষখাতা গোপনকারী, এই গুণের বদৌলতে আমার গোনাহ গোপন করে রেখেছেন। দয়া হলে কিয়ামতের দিনও তিনি মানুষের কাছ থেকে গোপন রেখে আমাকে অপমান থেকে রেহাই দিতে পারেন। নিজের পাপকর্মের কথা যদি অন্যের কাছে প্রকাশ করে বা বলে বেড়ায় তাহলে তো সে স্বাক্ষী হয়ে গেল। তথ্য ফাঁশ হওয়ায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
অতএব, তওবা করতে হবে নিজে নিজে অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি মনে। আল্লাহ তাআলা পুরো রমজানে বিশেষ করে মাঝখানের দশকে ডেকে ডেকে পাপ মোচনের ফরম জমা নেন। তিনি রাতে ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের পাপীদের ক্ষমা করতে পারেন। দিনে ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতের পাপীদের ক্ষমা করতে পারেন। কুরআনের বর্ণনায় তিনি দয়াপরবশ হয়ে বলেন,
‘হে নবী! আপনি বলুন, হে নিজেদের ওপর জুলুমকারী বান্দারা! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা যুমার : ৫৩)
বান্দা হয়ত ভাবে, আমি এতবেশি পাপ করেছি। আমার পাপ কী আল্লাহ মোচন করবেন। আমি কী মার্জনা পাব। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, আমাদের অপরাধ যদি বেশি হয়, আল্লাহর ক্ষমা আরও বেশি। আমাদের পদস্খখলন যদি বড় হয়, আল্লাহর দয়া তার চেয়ে বড়। আমাদের ভুল যদি অধিক হয়, আল্লাহর দয়া আরও অধিক, আরও প্রশস্ত।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমাকে যখনই ডাকো, যখনই আমার কাছে আশা পোষণ করো, আমি তোমার সব অপরাধ ক্ষমা করে দিই। এতে আমি কোনো কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার পাপরাশি যদি আকাশসম হয়, এরপরও তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কারও পরোয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীর পরিধি পরিমাণ পাপ নিয়েও আমার কাছে আস, আমার সাথে কোনো অংশীদার সাব্যস্ত না করা অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাত করো, আমি তোমার কাছে সেই পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।’ (তিরমিজি)
আল্লাহর কাছ থেকে মার্জনার এই সৌভাগ্য লাভের সহজ পথ ইসতেগফার।
হযরত ইবনে মসউদ বর্ণিত হাদিসের ভাষায়-যে ব্যক্তি বলবে, আমি সেই সত্তার কাছে ক্ষমা চাই যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, সর্বব্যবস্থাপক, আমি তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করছি। সেই ব্যক্তির গোনাহসমূহ আমি ক্ষমা করে দেই। যদিও সে যুুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসার মত কবিরা গোনাহও করে থাকে। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী ও হাকেম)
গোনাহ মার্জনা পাওয়ার সবচে সংক্ষিপ্ত ফরম হল আস্তাগফিরুল্লাহ বলা। মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনায় এ তথ্যটি ব্যক্ত হয়েছে।
তওবা ইস্তিগফার কীভাবে করতে হবে প্রশ্নের জবাবে নবীজি বললেন, এটুকুন বলতে থাকবে, আস্তাগফিরুল্লাহ, আমি আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফ চাই, আস্তাগফিরুল্লাহ, আমি আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফ চাই।
ইবনে আব্বাস (রা) সূত্রে আবু দাউদে বর্ণিত একটি হাদিসের ভাষ্য:
যে সর্বদা ইস্তিগফার করে তার জন্য আল্লাহর তাআলা যে কোনো কঠিন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার এবং যে কোনো দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন। আর এমন জায়গা থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করেন যার কল্পনাও সে করেনি। (আবু দাউদ)
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড
শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু