ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.২ শতাংশ

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৩৯ পিএম

চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় কারণেই এত কম প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অবস্থার উন্নতি হয়ে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। যদিও সরকার এ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এদিকে বর্তমানে অর্থনীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উচ্চ মূল্যষ্ফীতিকে দেখছে সংস্থাটি। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আরও জুনে একটু বাড়িয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশের। এবার সেই অবস্থান থেকে সরে গিয়ে পূর্বাভাস কমিয়েছে সংস্থাটি।

রাজধানীর আগাঁরগাও-এ বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ঢাকা অফিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বানার্ড হ্যাভেন। এ সময় বক্তব্য দেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আবন্দুল্লায়ে সেক। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক লিড ইকোনমিষ্ট ড. জাহিদ হোসেন এবং উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।

আব্দুল্লায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ কোভিড পরিস্থিতি খুব ভালভাবে সামাল দিতে পেরেছে। বর্তমান রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে চলতি অর্থবছর ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও যদি অর্জিত হয়, সেটি খারাপ অর্জন হবে না। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হলে রফতানিতে সমস্যা হতে পারে। সেজন্য বাণিজ্য সংস্কারের বিকল্প নেই। এখানে সংস্কার এনে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা গেলে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা রয়েছে। আঞ্চলিক রফতানি বাড়ানোর একটা বড় সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। এছাড়া কম আমদানি প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই দীর্ঘ মেয়াদে এটা অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রভাব ফেলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদহার ও গতি হারানো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির আঁচ বাংলাদেশের গায়েও লাগছে। সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা বা ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখতে বিশ্বব্যাংক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাজেট সহতায়তা দিতে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে গ্রীণ ফান্ড থেকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি শিঘ্রই এর একটা পরিনতির দিকে আসবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমে এলে মধ্য মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে নানা ধরনের কড়াকড়ি ও আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরে নেমে আসবে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তাও রয়েছে। আরও বলা হয়েছে, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৫৩০ কোটি ডলার। এখানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের উপর চাপ বাড়ছে। পাশাপাশি ডলারের একাধিক বিনিময় হারের কারণেও ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ বাড়ছে । এতে রফতানি নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং প্রবাসী আয় কমছে। বাজারভিত্তিক একক বিনিময় হার নির্ধারণ করা হলে বহির্বাণিজ্যে ভারসাম্য আসবে। কাঠামোগত সংস্কার, যেমন বাণিজ্য সংস্কার ও রফতানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে। কেননা দেশের মোট রফতানির ৮০ শতাংশের উপরে হচ্ছে পোশাক খাত নির্ভর। যেটি অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সংস্কারের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা চালু আছে। সেগুলো সংস্কার করা গেলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক বেশি লাববান হবে বাংলাদেশ। এ সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ কি করল, না করলো সেটি না দেখে নিজেস্ব মডিউল অনুশরণ করে সংস্কার আনতে হবে। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসিও নিজস্ব ভাবেই করতে হবে। আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আছে নানা সমস্যাও। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানী আইনের দ্রুত সংস্কার খুব জরুরি। একচেঞ্জ রেট মাল্টিপুল না করে বাজারের উপর এবং বাস্তবতার উপর ছেড়ে দিতে হবে। মূল্যস্ফীতি যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সেই হারে বাড়েনি মজুরি হার। এ কারণে মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বার্নাড হ্যাভেন বলেন, চলতিবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়েও কমবে। এর মূল কারণ বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে নীতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটাও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেমন, সরকার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে এতে মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাচামাল, ইত্যাদি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এ কানণে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমার কোন লক্ষণ নেই। কারণ চাহিদা ও যোগান দু’দিক থেকেই সমস্যা। যোগানের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদার ক্ষেত্রে ফিসক্যাল পলিসি বাজেট ঘাটতি কমাতে কোন কাজে লাগছেনা। বরং গত ৬ মাসে তার আগের ৬ মাসের তুলনায় বাজেট ঘাটতি তিনগুণ বেড়েছে। এছাড়া মনিটরি পলিসিতে রোপো রেট বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সুদের হারের ক্যাপ থাকায় এ উদ্যোগ কোন কাজে আসেনি। এজন্য ব্যাংক ঋণ সুদের হারে ক্যাপ তুলে দিতে হবে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ কোন টেকসই ব্যবস্থা নয়। স্বল্প মেয়াদে এটি কিছুটা ফলদায়ক হলেও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে বিনিয়োগ হবে না। অর্থনীতির চাকা ঘুরবেনা। প্রবৃদ্ধি এবং রির্জাভও বাড়বে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত