বিএনপির সংস্কার চায় না, এ কথাটি সঠিক নয়: মির্জা ফখরুল
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন ,জাতীয় সংলাপ ২০২৪' শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কাঠামোটা যদি না থাকে, উপর থেকে শুধু চাপিয়ে দিলেই আমরা দ্রুত কোন কিছু করতে পারবো না। তাই আমাদের স্ট্রাকচারটাকে (কাঠামো ) ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা গণতান্ত্রিক উপযোগী করতে পারি। তাহলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারব।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর খামার বাড়ি কৃষি ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে 'ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
'বাংলাদেশ এখন একটা জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে যে কাজটা আমাদেরকে করতে হবে, অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশকে আমরা যেন স্বপ্নের মত করে গড়তে পারি। সে বিষয়টা যতটা স্থির করা যায়, ধারণ করা যায়' এমন অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, '৫৩ বছর পর সংস্কার নির্বাচন নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। ভালো হতো আমরা যদি এ বিষয়গুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারতাম। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম'।
'আমি এবং আমার দল ২০১২ সাল থেকে এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছি। তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। সেই সময়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে গুম করা হয়েছে, কারাগারে নেয়া হয়েছে। আমার দলের ৬০ লক্ষ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের সাতশোর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করে দেয়া হয়েছে। প্রায় ২০ হাজারও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আয়না ঘরের কথা আপনারা সবাই জানেন। ফাঁসি দেয়া হয়েছে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। এরপরও আমরা কিন্তু থেমে থাকিনি। আজকে যে সোচ্চার এটি আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম। তখন আমরা অনেককেই আমাদের সাথে পাইনি, এখন তাদের দেখছি, ভালো লাগছে! আমরা আরো অনুপ্রাণিত হচ্ছি' মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা ২০১৬ সালে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন টুয়েন্টি -থার্টি একটা সংস্কার প্রস্তাব করেছিলাম। যে বিষয়গুলো পরিবর্তন আনা দরকার সেগুলো নিয়ে প্রস্তাবে এনেছিলাম। সে বিষয় থেকেই আজকের সামনে এসেছে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতার ভারসাম্য, একই ব্যক্তি যেনো দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। সে বিষয়টা নিশ্চিত করা। একই সাথে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট এ বিষয়টি তখনই আমরা তুলে ধরেছি'।
"আমরা ২০২২ সালে একটি জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে ১০ দফা দাবি পেশ করি। পরবর্তীতে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে একমত হয়ে ও আলোচনা করে আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব করি" এমন কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে আমরা প্রথম থেকেই। তবে দুর্ভাগ্য আমাদের কিছু কিছু বক্তৃতা এসেছে বিএনপির সংস্কার চায় না , এ কথাটি সঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটা সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি কেন? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন হচ্ছে প্রধান ফটক, দরজা। আর একটা ডেমোক্রেসি'।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের প্রধান সমস্যা এই দেশে গণতান্ত্রিক চর্চায় হয়নি। এখানে সে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেই কালচার যদি না থাকায় আমাদেরকে বারবার বলতে হচ্ছে, "এ করতে হবে ও করতে হবে, এইটা ডেমোক্রেসি, এইটা এভাবে যেতে হবে"। ডেমোক্রেসি কিন্তু বারবার চর্চা প্র্যাকটিস ছাড়া গড়ে উঠবে না। হুট করে কোন কিছু করা সম্ভব হবে না। উদাহরণ হিসেবে মির্জা ফখরুল বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সে তিনটি নির্বাচনী গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সেটি মানুষ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বা বিশেষজ্ঞ নই। আমি মাঠ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে এখানে এসেছি , তৃণমূল থেকে কাজ করেই এ পর্যায়ে এসেছি। ধারণা তুলে ধরে বলেন , জনগণকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব হবে না। জনগণকে তৈরি করতে হবে আপনাকে ( সকলের উদ্দেশ্যে)। এখানে যারা আছেন, তারা জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক করার চেষ্টা করবেন।
সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ডক্টর আলী রিয়াজের বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিয়াজ বলেছেন তার কাছে এক লক্ষরও বেশি প্রস্তাব এসেছে। শুনেছি, এ প্রস্তাবগুলো তৈরি করে তারা সরকারের হাতে তুলে দিবেন, সরকার তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসবেন। উনারাই (রীয়াজরা) যদি প্রথম পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে বসতেন, সেটা আরো ভালো হতো। আমার কাছে মনে হয়। তারা (রীয়াজরা) গভমেন্টের সাথে বসবেন, আরো আলোচনা হবে। আমার কাছে মনে হয়, যত সময় বাড়বে, তত আমাদের সমস্যা বাড়বে। আসল প্রবলেম তো অন্য জায়গায়। এগুলো বাস্তবায়ন করবেন কাদের দিয়ে? প্রশাসন, গভমেন্ট মেশিনারি, এগুলো তো এখনো ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতোটুকুও পরিবর্তন হয়নি। একটা ফাইলও নড়ে না। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ফাইল কোথায় আটকে আছে দেখবেন? ওখানেই আটকে আছে। এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আমাদের কে লড়তে হবে'।
মাইন্ড সেট একটা বড় জিনিস এমন মন্তব্য করে তিনি ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, উনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন খুব ভালো লেগেছে "যে একটা বন্দোবস্ত তো ছিল, টাকা দিব কাজ করিয়ে নেব"। ভালো সমস্যা নেই। এখন তো আপনি অন্য সিস্টেমে যাচ্ছেন। সেই মাইন্ড সেটটা তো তৈরি করতে হবে। ওই মাইন্ড সেটের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। ভুল হবে ত্রুটি হবে কিন্তু ওর মধ্যে দিয়ে ই ডেমোক্রেটিক সিস্টেমকে আগিয়ে নিতে হবে। সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে ।
আমরা যেন '৭১কে ভুলে না যাই এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল এটাকে আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই। আমাদের চারপাশে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যে সংগ্রাম লড়াই ,একাত্তরের পর থেকে সেই লড়াই সংগ্রাম প্রত্যেকে আমাদের মনে রাখা দরকার। সে লড়াই সংগ্রাম ও ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।
নিশ্চয় এটা দিয়ে ফখরুল বলেন,' আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় গণতন্ত্র ও সংস্কারের পক্ষে। এর জন্য আমরা কাজ করবো , করেছি, করবো ভবিষ্যতে। একই সাথে আমরা মনে করি, জনগণকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করা যাবে না, ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোন কিছু করা যাবে না। সকলকে সঙ্গে নিয়েই সে কাজগুলো আমরা করবো এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারোয়ার বলেন, আমি জাসদ ছাত্রলীগ করেছি। জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে অনেক বিষয়ে আমরা এক হতে পারি না। এখনো ঐক্য নষ্টের চেষ্টা চলছে। জাতীয় ঐক্যে বিভেদ তৈরি করে এমন বক্তব্য দেয়া দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আহত শহীদ পরিবার এখনো কেন অভিযোগ করছে। সরকারের দায়িত্ব শহীদদের। নির্বাচনের আগে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার যেনো একটি পর্যাযে আসে। কমিশনের প্রস্তাব গুলো নিয়ে জাতীয় সংলাপ করতে হবে। সংস্কারের জন্য যতটুকু সময় লাগবে জামায়াত দিবে, তারপর নির্বাচন। জাতীয় ঐক্যের জন্য জামায়াত সবসময় থাকবে।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, যারা প্রাণ দিয়েছে তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। ফ্যাসিবাদের দোসররা লেয়ারের পর লেয়ারে তারা। জাতীয় পতাকা খামচে ধরছে বারবার। প্রতিহতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেন ফিরতে না পারে।
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনছারী বলেন, বাংলাদেশের অধিকার রক্ষায় পাশ্ববর্তী একটি রাষ্ট্র থেকে ক্যাম্পেইন করে বাংলাদেশকে বিকৃত ভাবে চিত্রিত করা হলো, তখন পুরো জাতি আবার দ্বিতীয়বারেত মত ঐক্যবদ্ধ হলো। বাংলাদেশে মানুষের মাঝে ইস্পাত সমান একটি ঐক্য তৈরী হয়েছে। সেটি বিনষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি কিন্তু আমি নিজেও গণতান্ত্রিক হতে চাই না। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে আমাদের মানসিকতা সংস্কার প্রয়োজন। বাংলাদেশে আইনের অভাব নেই কিন্তু অভাব আছে প্রয়োগের।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশ বর্তমান রাজনৈতিক বন্দোবস্তে চলতে পারে না। দেশের সামনে বড় সুযোগ এসেছে। ঐক্য খুব জরুরী। ঐক্য মানে সব দল এক হওয়া নয়, ভারসাম্য জবাবদিহীতা তৈরি করতে হবে। ২ মেয়াদের বেশি ১জন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। সংবিধানিক পদে নিয়োগ, দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, ক্ষমতার ভারসাম্য কেমনে হবে এসব জরুরী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা
সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন
সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’
আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক
বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩
নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ
হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী
হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম
চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক
ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা
১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া