গাইডলাইন প্রণয়নে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন ভবন নির্মাণে নজরদারি বাড়াচ্ছে

ঘুম ভাঙল রাজউকের

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাব্বি

০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০৫ পিএম

রাজধানীতে ভবন নির্মাণে অনিয়ম বাড়ছে। আবাসিকে অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক, শিল্প, মার্কেট গড়ে তোলার মতো ঘটনা ঘটছে। রাজউকের নজরদারির মধ্যেই এই অনিয়মের কারণে রাজধানী ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। রাজউকের আওতাধীন এলাকা হচ্ছে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এলাকাটি ৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। রাজউকের এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, দেখভালের লক্ষ্যে প্রতিটি অঞ্চলে তিনটি করে কমিটির মাধ্যমে মোট ২৪টি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১০ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত রাজউক এলাকা পরিদর্শন করে। রাজউকের পরিদর্শক দল ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ২২০৪টি ভবনের বেজমেন্ট পরিদর্শন করে ৭৫০টিতে বাণিজ্যিক ব্যবহার পাওয়া গেছে। ১৯৪৪টি ভবনের নকশা দেখাতে পরেননি ভবন মালিকেরা। ফলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণে অনিয়ম রোধে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে গাইডলাইন প্রণয়নে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এত বছর রাজউক এসব কার্যক্রম চালু না করলেও পর পর রাজধানীতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার পর তাদের ঘুম ভেঙেছে।

রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিঞা ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে ভবন নির্মাণে অনিয়ম বাড়ছে। আবাসিকে অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক, শিল্প, মার্কেট গড়ে তোলার মতো ঘটনা ঘটছে। রাজউকের নজরদারির মধ্যেই এই অনিয়মের কারণে রাজধানী ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ৩০ মার্চ জমা দেয়া পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে ২ হাজার ২০৪টি ভবন পরিদর্শন করেছেন রাজউকের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ৭৫০টি ভবনের বেজমেন্ট পার্কিং হিসেবে ব্যবহার না করার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৮৩টি ভবনের বেজমেন্টে দোকান ও গুদাম পেয়েছে পরিদর্শন কমিটি। দোকানের মধ্যে দাহ্য পদার্থের (রাসায়নিক) দোকানও আছে। তবে ঠিক কতটি ভবনে দাহ্য পদার্থের দোকান আছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাজধানীতে গড়ে ওঠা ভবনগুলো অবকাঠামোর অবস্থা নিরূপণ ও নির্মাণাধীন ভবনের কাজ তদারকিতে থার্ড পার্টি নিয়োগের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি নগর উন্নয়ন কমিটির এক কার্যপত্রে এসব সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়।

এ সংক্রান্ত একটি কার্যবিধি/গাইডলাইন প্রণয়ন করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ৯ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑ রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা), সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক, নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের প্রতিনিধি। শিগগিরই তারা বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসবেন।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সমীক্ষায় প্রতিবেদনে বলা হয়, ভৌগোলিকভাবে ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির দিক হতে পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সম্প্রতি দ্য গ্লোবাল আর্থকোয়াক ডিজাসটার রিস্ক ইনডেক্স (ইডিআরআই) রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বের ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে একটি অন্যতম শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট’-এর আওতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওন ১৫২৮ বর্গ কিমি এলাকার সমীক্ষায় নিরূপণ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুরে দিনের বেলা ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে রাজধানীর ঢাকায় ৮ লাখ ৬৫টি (৪০.২৮%) হাজার ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় এ ভূমিকম্প হলে মারা যাবেন ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ, আহত হবেন ২ লাখ ২৯ হাজার। ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। ভূমিকম্পের পর ভবন মেরামত ও পুনর্নির্মাণে সরকারকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা।

সিলেটের ডাউকি চ্যুতিরেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে ঢাকার কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫টি (১.৯১%) ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় ভূমিকম্পটি হলে ১৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। আহত হবে ২৮ হাজার মানুষ। এই মাত্রার ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যা সাড়ে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকার সমান। ভূমিকম্পের পর ভবন মেরামত ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার (সাড়ে ৭৩ হাজার কোটি টাকা)।

গত ১১ মার্চ নগর উন্নয়ন কমিটির এক সভা হয়। সভায় নেয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে কার্যপত্রে। ভবনের সমীক্ষা ও নির্মাণকাজ তদারকিতে থার্ড পার্টি অন্তর্ভুক্তি ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে কারিগরি ব্যক্তির সহায়তায় ভবনে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নিয়মিত তদারকি, ব্যতয় পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা, রাজউকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ভবনের নকশা প্রস্তুত, পরিদর্শন ও বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের কঠোর জবাবদিহির মধ্যে আনা ইত্যাদি। এছাড়া মহানগরীতে সম্প্রতি বিভিন্ন ভবনে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার কারণ উদ্ঘাটনে কী কী ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, সে বিষয়ে রাজউক কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাসহ একটি প্রতিবেদন আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ সভায় বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে গ্যাস ফায়ার একটি সিরিয়াস ইস্যু। বাসা-বাড়িতে এস-ট্র্যাপ ব্যবহার করা যাবে না, মাস্টার ট্র্যাপ লাগাতে হবে। গ্যাস সেন্সর দিতে হবে। রাজউকের অনুমোদিত নকশা ও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতে হবে।

রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) প্রকৌশলী মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী সভায় বলেছেন, সিদ্দিকবাজারসহ প্রতিটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার রাখার বিষয়ে বাড়ির মালিকদের সচেতন করতে হবে। বেজমেন্টে যেকোনো দাহ্য পদার্থ রাখা বন্ধ করতে হবে।

রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) মোবারক হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর ভবন মালিকদের নকশার জন্য নোটিশ দেয়া হচ্ছে। নকশা পেলে বেজমেন্টের অনুমোদিত ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তার আগে কিছু বলা ঠিক হবে না।

সভায় রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিঞা, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রিহ্যাবের সভাপতি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, তিতাসের চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাশিয়ার নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কে এই বেলোসভ?

রাশিয়ার নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কে এই বেলোসভ?

অনুমতি না নিয়েই কেন জন্ম দিয়েছ? মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা তরুণীর! তার পর…

অনুমতি না নিয়েই কেন জন্ম দিয়েছ? মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা তরুণীর! তার পর…

রাজপরিবার ছাড়লেও পোশাকে রাজকীয় তকমা! বিতর্কে মেগান মর্কেল

রাজপরিবার ছাড়লেও পোশাকে রাজকীয় তকমা! বিতর্কে মেগান মর্কেল

সন্দেশখালির অশান্তিতে ‘উসকানি’তে গ্রেপ্তার ৪ বিজেপি কর্মী

সন্দেশখালির অশান্তিতে ‘উসকানি’তে গ্রেপ্তার ৪ বিজেপি কর্মী

ঘাটতি পূরণ নাকি বাড়তি আসন! চতুর্থ দফাতেই ‘আসল খেলা’র আশায় বিজেপি

ঘাটতি পূরণ নাকি বাড়তি আসন! চতুর্থ দফাতেই ‘আসল খেলা’র আশায় বিজেপি

কাতালোনিয়ায় সমাজবাদীদের জয়

কাতালোনিয়ায় সমাজবাদীদের জয়

উখিয়ার শ্রম বাজার রোহিঙ্গাদের দখলে-স্থানীয় শ্রমিকরা প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত

উখিয়ার শ্রম বাজার রোহিঙ্গাদের দখলে-স্থানীয় শ্রমিকরা প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত

ভারতের ভোটের কালি-র যে রহস্য আজও গোপন রয়েছে

ভারতের ভোটের কালি-র যে রহস্য আজও গোপন রয়েছে

দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে চলছে বালু কাটার মহোৎসব : হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে চলছে বালু কাটার মহোৎসব : হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

যাত্রীবেশে চালকের গলা কেটে অটোরিকশা ছিনতাই

যাত্রীবেশে চালকের গলা কেটে অটোরিকশা ছিনতাই

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, তালিকার শীর্ষে

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, তালিকার শীর্ষে

তীব্র লড়াই চলছে উত্তর গাজায়

তীব্র লড়াই চলছে উত্তর গাজায়

ভোটার তালিকায় নাম নেই ভারতের সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানের স্ত্রীর

ভোটার তালিকায় নাম নেই ভারতের সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানের স্ত্রীর

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ, ৫০ অধ্যাপক গ্রেপ্তার

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ, ৫০ অধ্যাপক গ্রেপ্তার

মধুখালি মন্দিরে অগ্নিসংযোগে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ তদন্ত কমিটি

মধুখালি মন্দিরে অগ্নিসংযোগে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ তদন্ত কমিটি

সউদী পৌঁছেছেন ১২ হাজার ৬৪৯ হজযাত্রী

সউদী পৌঁছেছেন ১২ হাজার ৬৪৯ হজযাত্রী

দারুচ্ছুন্নাত দ্বীনিয়া মাদ্রাসা’য় শতভাগ সাফল্য, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন

দারুচ্ছুন্নাত দ্বীনিয়া মাদ্রাসা’য় শতভাগ সাফল্য, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন

উপজেলা নির্বাচন : ভাতিজার সঙ্গে ‘সম্পর্ক ছিন্ন’ করলেন সালাম মুর্শেদী

উপজেলা নির্বাচন : ভাতিজার সঙ্গে ‘সম্পর্ক ছিন্ন’ করলেন সালাম মুর্শেদী

মা হতে চলেছেন ফারিয়া শাহরিন

মা হতে চলেছেন ফারিয়া শাহরিন

আজ সন্ধ্যায় কুতুবদিয়াতে পৌঁছবে এমভি আবদুল্লাহ

আজ সন্ধ্যায় কুতুবদিয়াতে পৌঁছবে এমভি আবদুল্লাহ