আল্লাহর কাছে ফেরার পথ তওবা
০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম
কয়েক বছর আগে একবার পঞ্চগড় গিয়েছিলাম। তখনো সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক যায়নি। হাতের মোবাইল সেটটি বারবার সচল করার পরও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না ঢাকার সাথে। বগুড়ার সীমায় প্রবেশ করার পর হঠাৎ রিং টোন বেজে উঠল। বুঝতে পারলাম, নেটওয়ার্ক পেয়ে গেছি। মোবাইল সক্রিয় হয়েছে।
মানুুষের অন্তর যখন আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে রূহের নেটওয়ার্ক নাই। দৈহিকভাবে বেঁচে থাকলেও সে জীবন অন্যান্য জীবের মতো। কুরআনের ভাষায় ‘পশুর চেয়েও অধম’। ইসলাম চায় মানুষের ভেতরের রূহ বা আত্মাকে সক্রিয় করতে। যাতে উর্ধ্বজগতের সংযোগ স্থাপিত হয়ে মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। চরিত্র সুন্দর হয়। জীবন ও জগত সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও বিশ^াস নিয়ে জীবনকে সাজানো সহজ হয়। মূলত আরশের সাথে আত্মার নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখার জন্যই ধর্মের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা।
কোনো কারণে যদি আরশের সাথে আত্মার নেটওয়ার্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাকে পূণঃস্থাপনের জন্য সর্ভিসিং করতে হয়। এর নাম তওবা। তওবার মাধ্যমে রূহ সক্রিয় হয়, আল্লাহর কাছে যাওয়া সম্ভবপর হয়। তওবা মানে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা। রহমতের নেটওয়ার্কের আওতায় অবস্থান করা।
আল্লাহ আর বান্দার মাঝে নেটওয়াার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রধান কারণ পাপ। ফারসিতে বললে গোনাহ। গোনাহ প্রধানত দুই প্রকার। এক প্রকার গোনাহের সম্পর্ক বান্দা আর আল্লাহ মাঝে। অর্থাৎ এমন গোনাহের কাজ, যার সম্পর্ক একমাত্র আল্লাহর সাথে, কোনো মানুষের সাথে নয়। যেমন নামায না পড়া, ফরয হজ আদায় না করা। এই পাপ মার্জনা পেতে হলে, আল্লাহর সাথে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক পূণ স্থাপন করতে হলে তিনটি শর্ত পুরণ করতে হবে।
আল্লাহর যে আদেশ অমান্য করেছে তার সাথে সম্পর্ক সম্পূর্ণ ছিন্ন করতে হবে। পাপকাজটি সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত অতীতে পাপকাজটি করেছিল বলে মনে মনে লজ্জিত হতে হবে।
তৃতীয়ত শর্ত পাপকর্মটি ভবিষ্যতে আর করবে না বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই তিনটি শর্তের যে কোনো একটি যদি পুরণ না হয়, যদি তওবা করার অবস্থায়ও নাফরমানির কাজটি করতে থাকে, বা কাজটি করার কারণে মনে মনে লজ্জিত না হয় কিংবা ভবিষ্যতে করবে না বলে সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে তার তওবা কবুল হবে না। কুরআন মজীদের একটি আয়াতের ভাষ্য এরূপ:
‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তওবা কবূল করবেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তওবা করে; তারা এমন লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবূল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা নিসা, আয়াত-১৭)
গোনাহের কাজটি যদি কোনো মানুষের সাথে সম্পর্কিত হয়। তাহলে সেই তওবা কবুল হওয়ার শর্ত চারটি। তিনটি শর্ত তো উপরে উল্লেখ করা হল। চতুর্থটি হচ্ছে যার প্রতি অন্যায় করেছে তার কাছ থেকে দায়মুক্ত হতে হবে। যদি কারো সম্পদ বা এ জাতীয় কিছুর ব্যাপার হয় তাহলে তা ফেরত দিতে হবে। যদি কারো উপর অপবাদ আরোপ বা কারো সম্মানহানির অপরাধ করে থাকে তাহলে তার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে অথবা সেই ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ চাইতে হবে। যদি কারো গীবত বা পশ্চাতে নিন্দা করে থাকে তাহলে যার গীবত করেছে তার কাছে দোষ স্বীকার করে মাফ নিতে হবে।
তওবা আল্লাহর হুকুম পালন ও ইবাদত। তবে তা কি সুন্নাত, মুস্তাহাব বা নিছক সওয়াবের কাজ? নাকি ফরজ ওয়াজিব। ইমাম নববী বলেন, কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা অনুযায়ী গোনাহ হয়ে গেলে তা থেকে তওবা করা ওয়াজিব।
তওবার নিয়ম হল, যত ধরনের পাপ কাজের সাথে জড়িত আছে সবগুলো থেকে তওবা করতে হবে। যদি এমন হয় যে, আপাতত একটি বা কয়েকটি পাপ কাজ হতে তওবা করলাম, তাহলে রিয়াদুস সালেহীন এর গ্রন্থকারের মতে আহলে হক বা সত্যপন্থীদের মতানুসারে সেই গোনাহ থেকে তওবা শুদ্ধ হবে। তবে বাকী পাপগুলো তার উপর বলবৎ থেকে যাবে।
আমরা জানি না চলতে ফিরতে কোনখানে আল্লাহর নাফরমানি হচ্ছে। তাই সবসময় তওবা করতে হবে। হযরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
আল্লাহর কসম, আমি দৈনিক সত্তর বারের বেশি ইস্তিগফার (আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফ চাই) ও তওবা করি। -(বুখারি)
নবী করিম (সা) এর এই ইস্তেগফার ও তওবা নাউজুবিল্লাহ কোনো গোনাহের কারণে ছিল না। বরং নবী করিম সবসময় আল্লাহর মহান সত্তার ধ্যানে জ্ঞানে নিমজ্জিত থাকতেন। কোনো কারণে যদি মনে করতেন যে, সেই ধ্যানজ্ঞান থেকে মনোযোগ অন্যদিকে যাচ্ছে তখনই তিনি ইস্তেগফার ও তওবার মাধ্যমে মনসংযোগকে স্থির করে নিতেন। অন্যথায় তার কোনো গোনাহ ছিল না। আল্লাহ পাক তার পূর্বের ও পরের সমস্ত গোনাহ আগেভাগেই মাফ করে দিয়েছেন। এর দলীল কুরআন মজীদের নি¤েœাক্ত আয়াত।
‘যেন আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং আপনার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (সূরা ফাতাহ, আয়াত-২)
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত একটি হাদীসের ভাষ্য থেকে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।
হযরত আয়েশা রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার ফলে তার পা দুটি ফুলে যায়। তখন আয়েশা (রা) তাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এমন (কেন) করছেন, অথচ আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সব গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। রাসূল (সা) তখন বলেন, হে আয়েশা আমি কী একজন শোকরগুযার (কৃতজ্ঞ) বান্দা হব না। (মুসলিম)
বস্তুত নবী করিম (সা) ইস্তেগফার ও তওবা ছিল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে, গুণাহ মোচনের উদ্দেশ্যে নয়; কারণ তার কোনো গুণাহ ছিল না। প্রশ্ন হল, নবী করিম (সা) এর অতীত ভবিষ্যতের গোনাহসমূহ মাফ বলে কুরআনের ঘোষণা ও তিনি নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও যদি তিনি দিনে ৭০ বারের অধিক বা একশ বার ইস্তেগফার ও তওবা করতে পারেন, তাহলে আমাদের কী করা উচিত।
রহস্যজ্ঞানী মওলানা রূমী এখানে আমাদের পথের দিশা দিয়েছেন। মরুভূমির ধূ ধূ বালুচর। কোথাও জীবনের চিহ্ণ নেই। হঠাৎ দূরে দেখা যায় এক গুচ্ছ সবুজ বনবীথি। কাছে গিয়ে দেখি, বালির নিচ দিয়ে পানির ঝিরিঝিরি ঝর্ণা। পানির পরশে মরুভূমিতে জেগেছে সবজা। তোমার বুকও গোনাহ খাতায় মরুভূমি হয়ে গেছে। যদি চাও সেখানে রহমতের সবুজ বনানী জাগুক, তাহলে চোখের পানির ঝর্ণা ছেড়ে দাও।
হার কুজা’ আ’বে রওয়া’ন সাবযা বুওয়াদ
হার কুজা’ আশকী দাওয়া’ন রহমত শাওয়াদ
যেখানেই পানি প্রবহমান, সেখানে সবজা জাগে
যেখানেই অশ্রু বহমান সেখানে রহমত নামে।
-(মসনবী মওলনা রূমী, ১ম খ.বয়েত-৮২০)
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম