ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
নিঃস্ব হবার দৃশ্য তাকিয়ে দেখছেন হাজারো ব্যবসায়ী

আব্বা আজ স্ট্রোক করতে পারেন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২৫ পিএম

বঙ্গবাজারের মহানগর কমপ্লেক্্েরর একটি কাপড়ের দোকানে চাকরির মাধ্যমে ২০০৪ সালে কর্মজীবন শুরু করেন নূর আলম মাহিন। এরপর ২০১১ সালে নিচ তলায় ‘বিকল্প প্যান্ট ফেয়ার’ নামে একটি কাপড়ের দোকান খুলেন। ধীরে ধীরে পরিধি বৃদ্ধি করে তিনটির সমন্বয়ে একটি দোকান করেন। ৩০ লাখ টাকার মাল ছিল দোকানে।

মাহিন বলেন, ঈদ সামনে রেখে আমার শ্বশুরবাড়ি আর বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ধার করছি। দুঃস্বপ্নের মতো এক নিমিষে সব শেষ। এখন ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। এর আগে আব্বা ৩ বার স্ট্রোক করেছিলেন। আজ এ খবর শুনে আবার স্ট্রোক করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমার বাসা এই বঙ্গবাজারের পেছনেই। বাসা থেকে আমার মার্কেট দেখা যায়। সকালে আমার এক বন্ধুর ফোন পেয়ে উঠে দেখি আমার মার্কেটে আগুন জ্বলতেছে। আমি দৌড়ে আমার দোকানের মাল বের করতে গিয়ে দেখি, দোকানের চাবি বাসায় ফেলে আসছি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগে নাই। আমি আবার বাসার দিকে দৌড় দিই। এরপর বাসা থেকে চাবি এনে দোকানে এসে দেখি আমার দোকানে আগুন জ্বলতেছে। তখন দোকান থেকে কোনো রকম ২ বস্তা মাল বের করে এখানে নিয়ে আসি। কিছু মাল মানুষ লুট করে নিয়ে গেছে। আর বাকি সব পুড়ে গেছে ভাই।

মহিনের পাশেই কয়েকটি বস্তার ওপর বসে ছিলেন জাভেদ ওমর নামে আরেক কাপড় ব্যবসায়ী। মহানগর মার্কেটে ‘রহানিয়া ফ্যাশন’ নামে শিশুদের কাপড়ের দোকান ছিল তার।তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ৭৫ লাখ টাকার মাল ছিল। তার মধ্যে মাত্র এই ৪ বস্তা মাল বাঁচাইতে পারছি। বাদবাকি সব আগুনে গেছে। গতকাল আমি আমার মোটরসাইকেল বেচে ক্যাশ ৪ লাখ টাকাও দোকানে রাখছিলাম। তাও পুড়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন পথের ফকির।

দুজনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন ইমরান হোসেন নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “আমি এক টাকার মালও বের করতে পারিনি ভাই। আমার সব শেষ। মহানগর মার্কেটে ‘ইমরান এন্টারপ্রাইজ’ নামে আমার একটা বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান ছিল আর অ্যানেক্স মার্কেটের ৭ তলায় একটা গোডাউন ছিল। সব শেষ। আমার ৩০ লাখ টাকার মাল ছিল। গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই।

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। অ্যানেক্্রটাওয়ারে ছিলো তার শাড়ীর দোকান। ছিলো একটি গোডাউনও। শীতের জন্য শালও আমদানি করে ছিলেন। সব মিলিয়ে দুই কোটি টাকার মালামাল ছিলো তার দোকান ও গোডাউনে। আরাফাত শাড়ি হাউস নামে দোকান ও গোডাউনের মালিক মিজানুরকে দোকানের সামনের রাস্তায় পরিচিতজনদের বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। কোনো সান্তনাই তার কান্না থামতে পারছিলো না। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার সব শেষ। দুই কোটি টাকার ওপরে মাল ছিল। দুই ব্যাংক ও আত্মীয়স্বজনের কাছে এক কোটি টাকার ওপর ঋণ আছে।

জামাল মিয়া, চান মিয়া ও কামাল মিয়া। এরা তিন সহোদর । তাদের প্রত্যেকের দোকান ছিলো বঙ্গ মার্কেটে। আগুনে পুড়ে গেছে তাঁদের দোকান। ভয়াবহ অগ্নিকা-ে তিন ভাইয়ের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারেননি তারা। সব হারিয়ে এখন একে অপরকে জড়িয়ে শুধুই কাঁদছেন তিন ভাই।
একইভাবে কাঁদছেন তোফাজ্জল, রাসেলরা। তাদের চোখেও পানি। দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারেননি তারা।

তোফাজ্জলের শাড়ির দোকান ছিল বঙ্গবাজারের ভেতরে। ঈদকে সামনে রেখে দোকানে নতুন নতুন শাড়ি তুলেছিলেন তিনি। তোফাজ্জলের পাশেই দাঁড়িয়ে ছোটাছুটি করছিলেন আর কাঁদছিলেন সৈয়দ রাসেল নামের এক ব্যক্তি। বঙ্গ ইসলামিয়া বাজারে তার শার্টের দোকান ছিল। তাদের সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।

শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ম্যানেজার ও কয়েকজন স্টাফকে নিয়ে দোকান চালাতেন ভুঁইয়া ফ্যাশনের মালিক মোশাররফ কামাল কামাল। চাঁদপুরের কচুয়া ঘাগরা গ্রামের কামালের দোকান ছিলো বঙ্গবাজারের মাঝামাঝি নিচ তলায়। ঈদকে সামনে রেখে ২০ লাখ টাকার পোশাক তুলেছিলেন দোকানে। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কামাল ভুঁইয়ার জীবিকার সম্বল।

কামাল ভূঁইয়ার মত আরও অনেকে ব্যবসায়ীর দোকান, গুদাম সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে ভয়াবহ এই আগুনে।
সেভেন স্টার নামের তিনটি তৈরি পোশাকের দোকান ছিল বঙ্গবাজারে আকাশদের। ১৭ বছর ধরে পাইকারি দরে পোশাক বিক্রি করে তিলে তিল বড় করেছেন ব্যবসার পরিধি। আকষ্মিক আগুনের খবর পেয়ে দোকানে চলে আসেন আকাশ ও তার ভাইয়ের দোকানের কর্মচারীরা। তখনও সেভেন স্টার দোকান তিনটিতে আগুনের আঁচ স্পর্শ করেনি। জীবন বাজি রেখে সবাই মিলে দোকান তিনটিতে থাকা আড়াই কোটি টাকার মালামাল উদ্ধার করে রাস্তায় জমা করেছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে সেই জমা করা মালামালের ওপরই আবার আগুন লাগা শেড ভেঙে পড়ে। নিমেষেই পুড়ে ছাই হয়ে পুরোটা। আকাশ তখন উদভ্রান্তের মধ্যে ঘুরছিলেন।

এভাবেই জীবিকার সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হবার দৃশ্য হতভাগ দৃষ্টিতে দেখছিলেন হাজারো ব্যবসায়ী। আর কেউবা চিৎকার করে কেউবা চাপা কান্নায় চোখের পানি ঝরিয়েছেন বঙ্গ মার্কেটের রাস্তায় দাড়িয়ে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম