জীবন গড়ার সাধনা ধৈর্য
০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৫ পিএম
হাদিস শরীফে মাহে রমযানের অন্রতম নাম ধৈর্যের মাস। ধৈর্যের ধাপে ধাপে মানুষের জীবন গঠিত হয়। লক্ষ্য অর্জনে হতাশ বা ক্লান্ত না হয়ে চেষ্টা অব্যাহত রাখার নাম ধৈর্য। একে সাইকেল চালানোর সাথে তুলনা করা যায়। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই ছেলেদের মাথায় সাইকেল চাপে। দুই চাকার বাহনটির উপর চড়ে স্থির থাকা ও এগিয়ে যাওয়ার জন্য তারা প্রাণপণে অনুশীলন করে। সাইকেল চালনা শিখতে কত আছাড় বিছাড় খেতে হয় ইয়াত্তা নেই। শেখার পরের ধাপে সাইকেল নিয়ে পথ চলতে হলে হরদম প্যাডেল চাপতে হয়। দুই পায়ের লাগাতার কসরত থেমে গেলে সাইকেল পড়ে যায়। জীবনকেও এগিয়ে নিতে হলে লাগাতার সংগ্রাম করতে হয়। ধৈর্যের মধ্য দিয়ে বিপদ আপদ অতিক্রম করতে হয়। তা না হলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়।
এ জন্যেই মাহে রমযানে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয় মুমিন বান্দাদের। সারা দিনমান রোযা রাখা, রাত জেগে তারাবি, ইবাদত বন্দেগী, যাকাত ফিতরা, দান সদকায় অবিচল থাকা আর রোযার পরিপন্থী সবকিছু থেকে বিরত থাকতে অপরিসীম ধৈর্যের প্রয়োজন। ধৈর্যের এই অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষায় কেবল আল্লাহর প্রিয়ভাজন বান্দারাই সফলকাম হয় ।
বিপদ আপদের অপর নাম পরীক্ষা। আমরা যারা লেখাপড়া করেছি, একেকটি পরীক্ষা দিয়ে উপরের ক্লাসে উঠতে হয়েছে। লেখাপড়া যত উচ্চতর তার পরীক্ষাও দিতে হয়েছে কঠিনতর। জীবনকে এগিয়ে নিতে বিপদ আপদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারটিও এ রকম। কুরআন মজীদের শুরুর দিকে মুমিনদেরকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। (হে নবী) আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের-যারা তাদের উপর আপতিত হলে বলে আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করব। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎপথে পরিচালিত।
(সূরা বাকার, ১৫৫-১৫৭)
উল্লেখিত আয়াত তিনটির প্রতিটি বাক্য ও শব্দ অনুধাবনের দাবি রাখে। এর ব্যাখ্যা হাদিস থেকে নিলে সুন্দর হয়। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের বর্ণনা সূত্রে রাসূল (সা) ইরশাদ করেন,
‘মুমিনের ব্যাপারটি বড় আশ্চর্য ধরনের। সে যখন কোনো কল্যাণ লাভ করে আল্লাহর প্রশংসা ও শোকর আদায় করে আর যখন কোনো বিপদে পতিত হয় তখনও আল্লাহর প্রশংসা করে ও ধৈর্য ধারণ করে। আর মুমিনকে তার প্রতিটি কাজে সওয়াব দেয়া হয়। এমনকি আপন স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দেয় তার জন্যও তাকে সওয়াব দান করা হয়। (আাহমদ)
আয়াতে-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করব’ বাক্যের মধ্যে মুসলমানদের মূল জীবন দর্শন বিবৃত হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি, তার জন্যই বেঁচে আছি এবং তার কাছেই ফিরে যাব, আমার সমগ্র জীবন তার জন্য নিবেদিতÑএই বিশ^াস, চেতনা ও জীবন দর্শনে নিহিত আছে পরম শান্তি ও শক্তি। বাক্যটি আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ জন্যে কেউ মারা গেলে বা দুঃখ দুশ্চিন্তার সংবাদ শুনলে এদেশের প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ওঠে ‘ইন্না লিল্লাহি ...।
দোয়াটি পড়লে কেমন রহমত ও বরকতের ভাগী হওয়া যাবে, তৃতীয় আয়াতে তার বর্ণনা রয়েছে। হাদিসের বর্ণনায় এর একটি বাস্তব উদাহরণ আছে। উম্মে সালামা ও তার স্বামী আবু সালামার ঘটনা। তারা মক্কী জীবনে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। নবী করিম (সা) মদীনায় হিজরত করার পর তারাও মদীনায় হিজরত করেন।
উম্মে সালমা (রা) বলেন, একবার (আমার স্বামী) আবু সালমা রাসূলুল্লাহ (সা) এর খেদমত থেকে ফিরে এসে বলল : আজ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছ থেকে এমন একটি উক্তি শুনতে পেয়েছি, যার ফলে খুবই আনন্দিত হয়েছি। নবীজি (সা) বলেছেন : মুসলমানদের মধ্যে কেউ যদি বিপদগ্রস্ত হয় আর সে বিপদের সময় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন বলে এবং তারপর বলে :
‘আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়াআখলিফ লি খায়রাম মিনহা’ (হে আল্লাহ! আমাকে আমার এ বিপদে সওয়াব দান কর এবং আমাকে তার চেয়ে উত্তম বদলা দাও) তাহলে অবশ্যই তাকে তা দান করা হবে। উম্মে সালামা বলেন : আমি স্বামীর কাছ থেকে বাক্যটি মুখস্ত করে রাখি। পরে যখন আবু সালামা ইন্তিকাল করলেন, তখন আমি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন’ পড়লাম বটে; কিন্তু মনে মনে বললাম : আমার জন্য আবু সালামার চেয়ে উত্তম বদলা আর কী হতে পারে? কিন্তু পরবর্তীতে এমন হল যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আবু সালামার চেয়ে উত্তম বদলা দিলেন। তিনি হলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা)। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা) এর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার সৌভাগ্য তার নসীব হয়েছিল। (মুসলিমের বরাতে মিশকাত : ১৫৩০)
আল্লাহকে বিস্মৃত হলে, বিপদগামী হলে, আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে বিপদের সম্মুখীন করে সুপথে ফিরিয়ে আনেন। ইতিহাসে নবী রাসূলগণই সবচে বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। তারপর সাহাবায়ে কেরাম ও পরে নেক বান্দারা। তারা সবাই বিপদে ধৈর্য ধারনের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করেছেন। পরিস্থিতির উপর জয়ী হয়েছেন। সবচে বড় কথা আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে পেরেছেন।
বৈষয়িক জীবনেও যাদেরকে আমরা উন্নত মানুষ, বড় লোক হিসেবে গণ্য করি, তাদের জীবনেও নানা বিপদ ঘাত প্রতিঘাত এসেছে। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, আমরা যদি সেই বিপদের সম্মুখীন না হতাম তাহলে জীবনের এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। এ কারণেই কুরআন মজীদে একাধিক আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ ধৈর্যশীলদের সাহায্য করেন বা ভালোবাসেন বলা হয়নি; বলা হয়েছে ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। অনেক বড় বিষয়॥ যারা ধৈর্য হারায় তারা মূলত আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়। আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া তো হারাম। ফারসি সাহিত্যের দিকপাল শেখ সাদী বলেন,
খোদা গর যে হেকমত বে বন্দদ দারী
যে রহমত গোশায়দ দারে দিগরী
আল্লাহ যদি হেকমত হেতু বন্ধ করেন একটি দরজা
রহমত দয়ার হেতু খোলে দেন অন্য এক দরজা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
যা আছে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে ভোট চাওয়া তাহসানের ভিডিও ভাইরাল
কাতারের কাছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তোলার আর্জি সিরিয়ার
সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে ৭টি ভারতীয় গরু জব্দ
১৫ পুলিশ হত্যা মামলা : কারাগারে পাঠানো হলো সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসকে
পেকুয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ
সুপ্রিম কোর্টে আরও এক হেল্পলাইন চালু, মিলবে আইনি সেবা
চলতি সপ্তাহে টানা দুদিন বৃষ্টির আভাস দিল আবহাওয়া অফিস
ভারতের ছত্তিশগড়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার
বিএনপি নেতা এস এ খালেকের মৃত্যুতে বাসায় ছুটে গেলেন জামায়াত আমির
এনআইডি সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের প্রধান ফটকে অফিস করার নির্দেশ
ছাত্রদল আমাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করে : শিবির সভাপতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির কর্মসূচি শুরু আজ
জকিগঞ্জের সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে : ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ
এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ এবার মালয়েশিয়ায়
গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা : চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউর ১৫ জন বরখাস্ত
ভারতে পালানোর সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
চলতি সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে পারেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
সাভার ও আশুলিয়ায় খাঁটি খেজুরের রস খেতে দূর দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ