আল্লাহর সান্নিধ্যের পরশ ইতিকাফ
১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৭ পিএম
ছাত্রজীবনে একবার একটি প্রবন্ধের শিরোনাম দেখেছিলাম ‘দাও ফিরে সেই অরণ্য লও এ নগর’। মূল বক্তব্য ছিল, শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতায় পিষ্ট হয়ে রাতদিন জ্বলছি। শহর ছেড়ে গ্রামে বনে অরণ্যে ফিরে যেতে চাই। সেখানেই আছে শান্তি সুখের স্বর্গবাস। গ্রামে থাকতে অনেকের মতো আমিও বিশ^াস করতাম, সুখ আর শান্তি বলতে যা বুঝায় তার জন্য শহরে যেতে হবে। সেখানে গাড়ি আছে। আলীশান বাড়ি আছে। গরমের সময় মাথার উপর ফ্যান ঘুরবে, কি আরাম। টাকা-পয়সা তো ওদিক থেকেই আসে। কিন্তু প্রবন্ধটি পড়ে মনে হয়েছিল, শান্তির পায়রা দলে দলে গ্রামে অরণ্যেই উড়াউড়ি করে, শহরে আছে নর্দমার কাক। যানবাহন, যন্ত্রের যন্ত্রণায় দিনমান অস্থিরতা। শহুরে জীবনে সুখ-শান্তি দুর্লভ-এ কথা এখনো গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকে বুঝানো যাবে না। তবে এ কথা সত্য যে, শহরের বাসিন্দারা সন্ধ্যার আঁধারে কিংবা সাত সকালে আলিশান বালাখানা ছেড়ে পায়চারি করতে রাস্তায় নেমে যায়। কারণ কী। কারণ, তারা রাস্তায় রাস্তায় সুখ আর শান্তি খুঁজেন। সিনেমার পর্দায় এসে নায়ক-নায়িকারা মানুষকে বিনোদন দেয়, সুখের স্বপ্ন দেখায় অথচ তাদের দাম্পত্য জীবনের কাহিনী পড়লে নরকের যন্ত্রণার দুর্গন্ধ আসে।
এক সুহৃদ বন্ধু বুঝিয়ে বললেন, মনের শান্তি আসল শান্তি। শহর বা গ্রাম বলতে কোনো তফাৎ নাই। অনেকে দুঃখ-অভাবের মধ্যেও পরিবার নিয়ে শান্তিতে আছে। অনেকে প্রাচুর্যের মাঝে অশান্তির আগুনে জ্বলছে। সিনেমা পাড়া তার উদাহরণ। তিনি বললেন, মনের শান্তি পেতে হবে আল্লাহর কাছে। আল্লাহকে যদি স্মরণে রাখতে পারেন, তার কাছে মনের সব কথা খুলে বলতে পারেন তাহলে পরম শান্তিতে প্রাণ ভরে যাবে। জীবনের সুখ-দুঃখের আসল নিয়ন্তা আল্লাহ, এ কথা মনে-প্রাণে বিশ^াস করতে পারলে আপনার জীবন সুখময় হবে। আল কুরআনে তাই লেখা আছে :
‘সাবধান! আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে’। (সূরা রাআদ, আয়াত-২৮)
আমাদের দেশের অনেক লোক ইউরোপ, আমেরিকায়, পশ্চিমা দুনিয়ায় থকেন। যারা দেশে থাকতে ধর্মকর্মের প্রতি উদাসীন ছিলেন শোনা যায় তারা ওখানে মসজিদের কাছে বাসাবাড়ি খোঁজেন। এর কারণ, ছেলে-মেয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন পশ্চিমা সভ্যতার চারিত্রিক নর্দমায় হারিয়ে না যায়। তারা উপলব্ধি করেন, সত্যিকার শান্তি ও সুখ পেতে হলে পশ্চিমা সভ্যতার চাকচিক্যে নয়, ধর্মীয় চেতনার মধ্যে খোঁজ করতে হবে। মাছ যতক্ষণ পানির মধ্যে থাকে পানির মর্যাদা বুঝে না, আমরাও ইসলামের ঘরে লালিত বিধায় ইসলামের মর্যাদা সহজে উপলব্ধি করতে পারি না। নামাজ, রোজা, দান-সদকা, হজ-জাকাত, পারিবারিক বন্ধন ও ঈমানী ভ্রাতৃত্বের যে নেয়ামত আল্লাহপাক দিয়েছেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করি না।
এখন রমজান মাসের শেষ ভাগে চলে এসেছি। রমজানের রোজা, প্রতিটি আমল এ ধরনের একেকটি নেয়ামত। রমজানের শেষ ভাগের একটি বিশেষ ইবাদতের নাম ইতিকাফ। ইতিকাফে আছে পরম আত্মিক শান্তি, আল্লাহর সান্নিধ্যের পরশ। নবী করিম (সা.) নবুয়াত লাভের আগে হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। নবুয়াত লাভের পর তিনি সংসার ছেড়ে নির্জন সাধনায় ধ্যান করেননি। তার আধ্যাত্মিক সাধনা ছিল মাহে রমজানে, বিশেষ করে ইতিকাফে। বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, নবী করিম (সা) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ থাকতেন মসজিদে নববীতে। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন।
ইতিকাফ হলো ঘর-সংসার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে একমাত্র আল্লাহর স্মরণে রাতদিন একটানা মসজিদে অবস্থান করা। ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য সন্ধানের এই সাধনা সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু, সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা-বাকারা, আয়াত: ১২৫)
মহানবী (সা.)-এর নবুয়াত লাভের শুরুর দিকের কথা। হযরত উমর (রা.) নবী করিম (সা.)-এর খেদমতে আরজ করলেন, আমি জাহেলিয়াত যুগে এক রাত মসজিদে হারামে ইতিকাফ করব বলে মানত করেছিলাম। নবী করিম (সা.) বললেন, তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর। (বুখারি ও মুসলিম)
ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য শবে কদর সন্ধান করা। শবে কদর রমজানের শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে। উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি অপরিসীম দয়ার কারণে আল্লাহপাক এই রাতটি লুকিয়ে রেখেছেন। হয়ত ভাববেন, শবে কদরের রাতটি নির্দিষ্ট জানতে পারলেই তো ভালো হত। সবাই তার সৌভাগ্য লাভ করতে পারত। কিন্তু আল্লাহপাক যদি তার এতবড় নেয়ামতের কথা জানিয়ে দিতেন আর মানুষ সেই রাতটিকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন না করত তাহলে আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অশ্রদ্ধার অকৃতজ্ঞতার পরিণতি হত ভয়াবহ। অতীত যুগের উম্মতরা এ ধরনের আচরণের কারণে তাদের উপর গণ আজাব নাজিল হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। যেমন কওমে আদ ও সামূদ। এখন শবে কদর লুকানো থাকাতে যারা সন্ধানী ও সৌভাগ্যবান তারা লাভ করবে, যারা অবহেলা করবে তারাও আপাতত পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রদ.) হতে বর্ণিত, একবার হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের প্রথম ১০ দিন একটি তুর্কী তাঁবুতে ইতিকাফ করলেন। তারপর তিনি মাঝখানের দশকে ইতিকাফ করেন। এ সময় একবার তাঁবু হতে মাথা বের করলে লোকেরা তখন তার দিকে এগিয়ে এল। অতঃপর তিনি বললেন, আমি এ রাত (শবে কদর) তালাশ করতে গিয়ে প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি, তারপর মাঝখানের দশকে ইতিকাফ করেছি। অতঃপর স্বপ্নে আমার নিকট কেউ এসে বললো, এটি শেষ দশকে। অতএব যে ব্যক্তি আমার সাথে প্রথমে ইতিকাফ করেছে, সে যেন শেষ দশকেও ইতিকাফ করে। এ রাতটি আমাতে বেজোড় রাতে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (মুসলিম)
ইতিকাফকালীন সদা সজাগ থাকতে হবে, পরস্পর কথাবার্তায় যেন সময় চলে না যায়। নবী করিম (সা.) তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফ করেছেন। একমাত্র আল্লাহর দিকে ধ্যানমগ্ন থাকার জন্যই ইতিকাফ। সতর্ক থাকতে হবে, শবে কদরের সম্ভাব্য বেজোড় রাতগুলো যেন অবহেলায় কেটে না যায়। মনে রাখতে হবে আপন ভুবনে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনার নাম ইতিকাফ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা