খরতাপে দুর্বিষহ জীবন, ঘরে ঘরে রোগী

তপ্ত রুক্ষ বৈশাখ দ্বারে

Daily Inqilab শফিউল আলম

১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

ছিটেফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই : ৪০ জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ : চলবে অন্তত এক সপ্তাহ
৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে তাপমাত্রা : বিদ্যুৎ-পানির সঙ্কটে রোজাদারের কষ্ট-দুর্ভোগ
দিনভর সূর্যের কড়া রোদের তেজ। রাস্তাঘাট সড়কে যেন আগুন ঝরছে। মরুর লু-হাওয়ার মতো বইছে তপ্ত বাতাস। মেঘের শীতল ছায়া নেই। বৃষ্টির দেখা নেই ছিটেফোঁটাও। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। রাজধানী ঢাকায়ও ৩৮-এর ঘরে। প্রতিদিনই উপরের দিকে উঠছে তাপমাত্রার পারদ। পূর্বাভাস মতে আসছে কয়েকদিনের মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে তাপমাত্রা।

বর্তমানে সমগ্র ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা এবং রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ ১১ জেলা মিলিয়ে মোট ৪০টি জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা ক্রমেই বিস্তার লাভ করতে পারে। তাপপ্রবাহ কমপক্ষে এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। চারদিকে খরতাপে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। কী দিনে কী রাতে গরমে কোথাও নেই স্বস্তি। ফ্যানের বাতাসেও অস্বস্তি। গাছতলায় পার্কের ছায়ায় মানুষ স্বস্তি খুঁজছে।

অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে-ঘামে মানুষ ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, মাথাঘোরা, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ অসুস্থ। রোগীর ভিড় বেড়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে। তাপদাহের কারণে বিশেষত দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর, ঠেলা-রিকশাচালক, গরিব নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। গরমের তীব্রতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট-লোডশেডিং যন্ত্রণা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য পানির সঙ্কট। এতে করে রোজাদারদের কষ্ট-দুর্ভোগ অবর্ণনীয়।

অন্যদিকে মাহে রমজানের আগেই দীর্ঘ খরা-অনাবৃষ্টির অবসান ঘটিয়ে স্থানভেদে গত ১৭, ১৮ বা ১৯ মার্চ থেকে সারা দেশে ঠাÐা বাতাসের সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়। রহমতের বৃষ্টির মধ্যদিয়ে হঠাৎ আবহাওয়ায় স্বস্তিদায়ক পালাবদল শুরু হয়। এর ফলে রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত মেঘ-বৃষ্টির বৃষ্টির শীতল পরশে স্বস্তিকর আবহাওয়ায় কেটেছে। মার্চ মাসে সার্বিকভাবে সারা দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৮ শতাংশই বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু মেঘ-বৃষ্টির ধারা থমকে গিয়ে ফের হঠাৎ গরমের দাপট শুরু হয় গত সপ্তাহের শেষ দিকে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ ও বৈশি^ক আবহাওয়া-জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বলছে, সামনের দিনগুলোতে গরমের দাপট আরও বাড়তে পারে। চৈত্র মাস এখন শেষের দিকে। আর মাত্র চার দিন পর পয়লা বৈশাখ। মৌসুমের এ সময়ে কাঠফাটা রোদের পাশাপাশি হঠাৎ মেঘ-বৃষ্টির সুবাদে শীতল আবহ থাকে। কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রবৃষ্টি-বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টির সঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেলে গরমের দাপট তখন কমে আসে। এবার সেই আবহ নেই। পশ্চিমা ও পূবালী বায়ুর কাক্সিক্ষত সংযোগ না হওয়ায় মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত ‘নেই’ হয়ে গেছে।

বৈশি^ক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চৈত্রের শেষ দিনগুলোর মতোই দুয়ারে কড়া নাড়ছে এবার শুষ্ক, খটখটে, রুক্ষ অচেনা বৈশাখ। পয়লা বৈশাখে এবং তারপরও বেশ কিছুদিন গরমের যন্ত্রণা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমাগত খরতাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে। বর্তমানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রির আশপাশে আছে। আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তাপমাত্রা পূর্বাভাস মতে, ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩৭ থেকে ৪২ ডিগ্রি সে. (১৩ ও ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ ও তার আগে-পরের দিনগুলোতে) থাকতে পারে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও।

তাপদাহ অব্যাহত থাকবে : গত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৮.৫ ডিগ্রিতে উঠেছে। রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়ায় ছিল ৩৮ ডিগ্রি সে.। এ সময়ে দেশের কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। #

 

 

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত
বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে খাদ্যপণ্যের দাম : বিশ্বব্যাংক
আরও

আরও পড়ুন

কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?

কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?

বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক

৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক

বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)

বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)

দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল

দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন

পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার

পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার

দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০

দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০

বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন

বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন

সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন

সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন

যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত

যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত

ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর

ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর

বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস

বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস

রাস্তাটি সংস্কার করুন

রাস্তাটি সংস্কার করুন

থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা

থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা

ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা

ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা

কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১

কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১

সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা