গুলশানে মির্জা ফখরুল

রক্তস্রোত ও গুম-খুনের পরিবারের কান্না বৃথা যেতে পারে না

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতাকর্মীদের রক্তদান, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার এবং শহীদ পরিবারের কান্না, বাচ্চাদের কান্না কখনো বৃথা যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কমপক্ষে ৭‘শ উপরে আছেন যারা গুম হয়ে গেছেন, সহাস্রাধিক গণতান্ত্রিক কর্মী আছেন যারা খুন হয়ে গেছেন। এই একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে গত ১৪/১৫ বছর ধরে। অনেক বাচ্চা আছে ১০/১১ বছর তারা তাদের পিতাকে, ভাইকে দেখতে পারেনি। আরো ১৭জন যুক্ত হয়েছে তারা প্রকাশ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। এই রক্তস্রোত ও বাচ্চাদের কান্না এটা কখনো বৃথা যেতে পারে না। বিজয় আমাদের হবেই, আমরা অবশ্যই নির্যাতকারীদের, ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত, গুম ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ছাত্রদলের নুরুল আলম নুরু, নুরুজ্জামান জনি, মাহমুদুর রহমান বাপ্পী, পারভেজ রেজা, তরিকুল ইসলাম তারা, মো. সোহেল, মফিজুল ইসলাম রাশেদ, জাকির হোসেন, জাকির হোসেন মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাওসার, জাসাসের আমিরুল ইসলাম মিন্টুর পরিবারের সদস্যদের কাছে তারেকের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার সারাদেশে গুম-খুন-নির্যাতিত হওয়া এক হাজার পরিবারের কাছে তারেক রহমানের ঈদ উপহার পৌঁছানো হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রতিবছর এভাবে চেষ্টা করি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাদেরকে এই কথাটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, আমরা তাদের ভুলি যায়নি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। যদিও এখানে উপহারের ব্যাপারটা একেবারেই গৌণ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এই অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন করেই তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। আজকে সমগ্র দেশ একটা বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছে। খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা-খুন-গুম চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে একেবারে নির্মূল করতে, নিশ্চিহ্ন করতে গুম কথাটা আগে বাংলাদেশের মানুষ জানতো না। এটা ল্যাটিন আমেরিকায় শুনেছি যে, এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স। তুলে নিয়ে গিয়ে নাই হয়ে যাওয়া-এটা বাংলাদেশে নতুন করে আওয়ামী লীগ ইন্ট্রোডিউজ করেছে। যদিও স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো তখনও এরকম গুমের অনেক ঘটনা ঘটেছিল, প্রকাশ্যে ঘটেছে, এভাবে সাদা পোষাকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের গঠনটাই এরকম। একদিকে সন্ত্রাস আরেকদিকে দুর্নীতি। এই দুটার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষ তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এভাবে গুম-খুন হয়ে, নির্যাতিত হয়ে আর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে না। মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। আমাদেরকেও রুখে দাঁড়াতে হবে। এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে।
আইএমএফের শর্ত মানতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎ-সারের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে একদিকে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আবার সারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে, কৃষকদের কষ্ট হবে কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে তাকে এটা মেনে নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোন উন্নয়ন, কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন হচ্ছে এই শাসকগোষ্ঠির নিজেদের উন্নয়ন। একদিকে বিশাল অংকের মালিকরা বাড়ি-গাড়ি সমস্ত বিলাস-বৈভব নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট করে বিদেশে পাচার করছে এবং বাড়ি ঘর কিনছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষেরা দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়ার জন্যে সংগ্রাম, লড়াই করতে হচ্ছে। তাও সে পুরোপুরি পাচ্ছে না। কারণ জিনিসপত্রের দাম তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, গুম হওয়া ছাত্রদলের মাহমুদুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর ও সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার সাফা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য শাম্মী আখতার, বিএনপির তাইফুল ইসলাম টিপু, যুবদলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, স্বেচ্ছাসেবকদলের এসএম জিলানি, নাজমুল হাসান, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার
জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা
ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের
ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর
আরও
X

আরও পড়ুন

সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেরে কুকুরটি কামড়ালো বৃদ্ধ, শিশুসহ ছয়জনকে

সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেরে কুকুরটি কামড়ালো বৃদ্ধ, শিশুসহ ছয়জনকে

তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেতের পড়তে গিয়ে তাহাজ্জুদ বেতের দু’টোই মিস হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেতের পড়তে গিয়ে তাহাজ্জুদ বেতের দু’টোই মিস হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার

জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের

ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের

ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স

ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ?

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ?

ড. ইউনূস এর মতো সরকার প্রধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার :জামায়াত নেতা ড. ইকবাল

ড. ইউনূস এর মতো সরকার প্রধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার :জামায়াত নেতা ড. ইকবাল

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের কমিটি কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের কমিটি কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না

কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়ার অপরাধে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ টাকা জরিমানা

কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়ার অপরাধে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ টাকা জরিমানা

প্রেষনে বিমান বাহিনী থেকে লোকবল নিয়োগ বাতিল সহ ৪ দফা দাবীতে সিলেটে বেবিচক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিক্ষোভ

প্রেষনে বিমান বাহিনী থেকে লোকবল নিয়োগ বাতিল সহ ৪ দফা দাবীতে সিলেটে বেবিচক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিক্ষোভ

নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার, নিয়ন্ত্রণে কমলনগরের দুই নেতা!

নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার, নিয়ন্ত্রণে কমলনগরের দুই নেতা!

ছাগলনাইয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল

ছাগলনাইয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল

বিএনপিকে আবার মিডিয়া ট্রায়ালে ফেলা হচ্ছে: তারেক রহমান

বিএনপিকে আবার মিডিয়া ট্রায়ালে ফেলা হচ্ছে: তারেক রহমান

পাঠদান পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি

পাঠদান পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি

পিলখানা ম্যাসাকার তদন্ত কমিশন : রিপোর্টের জন্য জনগণের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

পিলখানা ম্যাসাকার তদন্ত কমিশন : রিপোর্টের জন্য জনগণের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে

অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে

শান্তিরক্ষীই যুদ্ধ

শান্তিরক্ষীই যুদ্ধ

পূর্ণ শক্তি

পূর্ণ শক্তি