বান্দার জন্য আল্লাহর ভালোবাসা
১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমরা এক যুদ্ধে নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি একদল লোকের নিকট গেলেন এবং জানতে চাইলেন, এরা কোন দলের লোক। তারা বলল, আমরা মুসলমান। এসময় এক মহিলা ডেকচির নিচে লাকড়ি দিয়ে আগুন জ¦ালাচ্ছিল। তার সঙ্গে ছিল তার একটি শিশু সন্তান। যখন আগুনের একটি ফুলকি উপরে উঠল অমনি সে ছেলেটিকে টেনে আগুন থেকে দূরে সরিয়ে নিলো। এরপর মহিলা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আপনিই কি রাসূলুল্লাহ? হযরত বললেন, হ্যাঁ। মহিলা বলল, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আমাকে বলুন, আল্লাহ কি সবার চেয়ে অধিক দয়ালু নন। হুজুর বললেন, নিশ্চয়ই। মহিলা বলল, মা তার সন্তানের প্রতি যতখানি দয়ালু আল্লাহ কি বান্দার প্রতি তার চেয়ে বেশি দয়ালু নন? হুজুর বললেন, নিশ্চয়ই। মহিলা প্রশ্ন করল, মা তো আপন সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করে না। এ কথা শুনে নবী করিম (সা.) নিচের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে ফেললেন এবং কাঁদতে লাগলেন। এরপর মাথা তুলে মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে চরম অবাধ্য ছাড়া কাউকে শাস্তি দেন নাÑএমন অবাধ্য যে আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে এবং আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেইÑ এ কথা বলতেও অস্বীকার করে। (ইবনু মাজা, মিশকাত-২২৬৮)
বান্দার জন্য আল্লাহর ভালোবাসা কতখানি তার একটি খÐচিত্র এই হাদিস। আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার সম্পর্ক বলতে সাধারণভাবে আমরা বুঝি মনিব ও গোলামের সম্পর্ক। তার পক্ষে দলিল কুরআনের আয়াত, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা যারিয়াত, আয়াত-৫৬)
ইবাদতের অর্থ অনেক ব্যাপক হলেও আমরা বুঝি দাসত্ব। তার মানে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক হবে মনিব ও দাসের সম্পর্কের মতো। সুফি তাত্তি¡করা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তারা বলতে চান, বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক হবে ভালোবাসার।
ভালোবাসার পরিধি অনেক ব্যাপক এবং প্রয়োগ ভেদে তার অর্থ হয় ভিন্ন ভিন্ন। ছোটদের প্রতি বড়দের ভালোবাসাকে আমরা বলি ¯েœহ-মমতা। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার নাম প্রেম। পিতা-মাতা, গুরুজনের প্রতি ভালোবাসা বলতে ভক্তি ও শ্রদ্ধা বোঝায়। আল্লাহ ও রাসূলের সাথে ভালোবাসায় থাকতে হবে ভয় ও আশার মিশ্রণে আনুগত্য ও দাসত্ব। কুরআনের ভাষায় এর নাম ‘হুব’। আরবি ‘হুব’কে ইংরেজিতে বলা হয় ‘লাভ’। বাংলায় প্রেম-ভালোবাসা। সুফিরা বলেন, বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক হতে হবে হুব-এর নিরিখে। আনুগত্য ও ইবাদত বন্দেগীতে ভালোবাসার মিশেল থাকতে হবে, তাহলেই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১) তার মানে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার সম্পর্কের তত্ত¡ শরীয়ত অনুমোদিত।
‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহকে ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় তাদের ভালোবাসে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা সবচে সুদৃঢ়।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৬৫)
‘হে মুমিনরা! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন হতে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন, যাদের তিনি ভালোবাসবেন। এবং যারা তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিনরাÑ যারা বিনত হয়ে নামায কায়েম করে ও জাকাত দেয়।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত-৫৪, ৫৫)
ভালোবাসা একপক্ষীয় না, হতে হয় দ্বিপাক্ষিক। আল্লাহ ও বান্দার ভালোবাসার বেলায়ও তা সত্য। উপরোল্লিখিত আয়াতের বাচনভঙ্গি লক্ষ করুন। প্রথমে আছে ‘যাদের তিনি ভালোবাসবেন।’ তারপরে বলা হয়েছে ‘এবং যারা তাকে ভালোবাসবে।’ এর একটি অর্থ প্রথমে বান্দার জন্য আল্লাহর ভালোবাসা আগে, তারপর আল্লাহর জন্য বান্দার ভালোবাসা জাগে। মানে কী? তার মানে কেউ যদি মনে আল্লাহর প্রতি, দ্বীনের জন্য ভালোবাসা অনুভব করে তাহলে বুঝতে হবে ওপর থেকে আল্লাহর তরফে ভালোবাসার হাতছানি এসেছে। যারা বিপথগামী গুনাহখাতায় কলুষিত তাদের প্রতি এই ভালোবাসার হাতছানি আরো তীব্র। নবী করিম (সা.) একটি অভিনব উপমা দিয়েছেন, যা হযরত আব্দুুল্লাহ ইবনে মসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন।
‘এক লোক মরুভ‚মিতে দূরের সফরে রওনা হয়েছে। দুর্গম বিপদ সঙ্কুল মরুবিয়াবানে তার একমাত্র সম্বল উটের বাহন। বাহনের উপর আছে রসদপত্র খাদ্য ও পানীয়। ক্লান্ত পথিক এক জায়গায় বিশ্রাম নিতে বসে পড়ে। এক সময় তার চোখে নিদ্রা নেমে আসে। ঘুম ভাঙলে দেখে তার বাহনটি নেই। বাহনের সন্ধানে ছোটাছুটি করে। কিন্তু না, নেই, বাহন নেই। পিপাসায় তার বুক ফেটে যায়। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে বলে, আগে যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে যাই। সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ব। মরণ ছাড়া তো উপায় নেই। আপন বাহুটি বালিশ বানিয়ে সে শুয়ে পড়ে, আর জাগব না। একপর্যায়ে আবার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখে তার বাহন মালপত্র খাদ্য ও পানীয়সহ তার কাছে উপস্থিত। আনন্দের আতিশয্যে সে বলে ওঠে, আল্লাহ তুমি আমার বান্দা আমি তোমার রব। এই মুসাফির তার বাহন রসদপত্র ফিরে পেয়ে যতখানি আনন্দিত কোনো মুমিন তাওবা করলে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। Ñ(মুসলিম)
আসুন গুনাহগাররা আল্লাহর ভালোবাসার হাতছানি পেয়ে ধন্য হওয়ার জন্য ধরনা দেই, তওবা করি। আল্লাহ তুমি কবুল করো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার
জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান
ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের
পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন
দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান
ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা
মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ
কেপিএম আবাসিক থেকে অজগর উদ্ধার কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত
চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
শাল্লায় কালনী নদীতে যুবক নিখোঁজ
ভিসি নিয়োগের দাবিতে ইবিতে মহাসড়ক অবরোধ
রেকর্ড রান তাড়ায় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসী শুরু
সালথায় সেতুর রেলিং-পাটাতন ভেঙে বেহাল দশা : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ১০ গ্রামের মানুষ
তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল
আত্মহত্যা না কি খুন? ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু
বিচার বিভাগে পৃথক সচিবালয় ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি
বিভিন্ন সময়ে যেসব বিতর্কিত অভিযান চালিয়েছে মোসাদ